ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জাতীয় দলের ক্রিকেটার থেকে সিনিয়র সচিব

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২০
জাতীয় দলের ক্রিকেটার থেকে সিনিয়র সচিব শাহিন আহমেদ চৌধুরী। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ১৯৮৬ সালে প্রশাসন ক্যাডারে বাংলাদেশ সরকারের একজন কর্মকর্তা হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন শাহিন আহমেদ চৌধুরী। ১৯৮১-৮২ সালে সাবেক ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট কোচিংয়ের অগ্রদূত প্রয়াত সৈয়দ আলতাফ হোসেনকে কোচ করে যে জাতীয় নারী ক্রিকেট দল গঠন করা হয়, এই দলের গর্বিত সদস্য ছিলেন তিনি। 

আবাহনী ক্রীড়া চক্রের ব্যনারে ১৯৮৩ সালে ইডেন গার্ডেনে পশ্চিমবাংলা নারী ক্রিকেট দলের বিপক্ষে ৩০ ওভারের একটি প্রদর্শনী ম্যাচে অংশ নেয় দেশের নারী ক্রিকেটাররা। অনার্স পরীক্ষার কারণে এই ম্যাচ খেলতে পারেননি শাহিন আহমেদ।

তবে পরে ঢাকায় ভারতের বিরুদ্ধে খেলেন তিনি। দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বর্তমানে তিনি পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) হিসেবে কর্মরত।  

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সোমবার (০২ মার্চ) বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নারীর সফলতার নানা দিক দিয়ে কথা বলেন সফল এই নারী।  

বাংলানিউজ: সফলতার পেছনে কার অবদান বেশি?

শাহিন আহমেদ চৌধুরী: আমি মনে করি নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে সলফতার শুরুটা হতে হবে পরিবার থেকেই। ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে ছিলাম। সাইক্লিং, লং জাম্পসহ বিবিণ্ন খেলায় অংশ নিতাম। পরিবার থেকে বড় সাপোর্ট ছিল। ১৯৮১ সালে মেয়েরা টিশার্ট ও প্যান্ট পরবে সে কথা কল্পনাও করা যেত না। লোকে নানা ধরনের কথা বলার চেষ্টা করেছে। তবে আমার মা-বাবা এসব পাত্তা দেননি। তাই আমি বলতে পারি, নারীদের সফলতার শুরুটা পরিবার থেকেই হতে হবে।  

বাংলানিউজ: বর্তমানে নারী সচিব হাতে গোনা। এই সংখ্যা কীভাবে বাড়তে পারে?

শাহিন আহমেদ চৌধুরী: সচিব পদও হাতে গোনা। সবার সচিব হওয়ার সুযোগও থাকে না। তবে বর্তমান সরকার সচিব থেকে শুরু করে নানা পদে নারীদের ওপরে আস্থা রেখেছে। সরকার নারীদের নানাভাবে সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। আমাদের নারী সমাজকে বর্তমান সরকারের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার নারী। পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু নানা পদে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে নারী। বর্তমান সরকার নারীবান্ধব সরকার এটা বলতে কারো সংকোচবোধ করা উচিত নয়।
 
বাংলানিউজ: কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রতিবন্ধকতা কতটুকু?

শাহিন আহমেদ চৌধুরী: প্রতিবন্ধকতা থাকলেও এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমি মাঠ পর্যায়ে উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা ফিন্যান্স অফিসার হিসেবে কুমিল্লা সদরে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নারায়ণগঞ্জ সদরে এবং নাটোর জেলায় জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও বিলুপ্ত ডেসায় দীর্ঘদিন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের (বিইপিআরসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। এর আগে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনাধীন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর পরিচালক ও বাংলাদেশ পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং সেন্টারের মেম্বার অব ডাইরেক্টিং স্টাফের দায়িত্ব পালন করেছি। আমি কখনও নিজেকে নারী হিসেবে দেখতাম না। অন্যান্যদের মতো আমিও সব সময় নিজেকে একজন কর্মকর্তা হিসেবে মনে করতাম। সবার আগে কীভাবে কাজটা আদায় করতে হবে সেই কথাই ভাবতাম। কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়। আমাদের সবাইকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের কর্মদক্ষতা সবখানে দেখাতে হবে।
 
বাংলানিউজ: কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের ভেদাভেদ কেমন?

শাহিন আহমেদ চৌধুরী: বর্তমানে এটা নেই। আমি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং সেন্টারসহ সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কর্মরত ছিলাম। পরবর্তী সময়ে পাবলিক পলিসি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করি। চাকরিকালীন দেশ-বিদেশে অনেক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছি। আমি মনে করি, আমাদের দৌড় ওপেন, এটাকে কে কতটা কাজে লাগায় সেটাই দেখতে হবে। এখনও কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীরা সেকি থাকি। এটা অবশ্যই দূর করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

বাংলানিউজ: মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল ভারতের নারী ক্রিকেট দলকে ৩ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। শুরুটা নারী ক্রিকেটারদের জন্য কেমন চ্যালেঞ্জ ছিল?

শাহিন আহমেদ চৌধুরী: ১৯৮১-৮২ সালে সাবেক ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট কোচিংয়ের অগ্রদূত প্রয়াত সৈয়দ আলতাফ হোসেন কে কোচ করে জাতীয় নারী ক্রিকেট দল গঠন করা হয়। এই ক্রিকেট দলের প্রথম সদস্য ছিলাম। সেই সময় নারীদের ক্রিকেট খেলা সহজ ছিল না। একজন মেয়ে সাদা টিশার্ট ও প্যান্ট পরে চলাফেরা করবে এটা কেউ মেনে নিতো পারতো না। সবাই নানা ধরনের কথা বলার চেষ্টা করতো। তবে আমি পরিবার থেকে বিশাল সাপোর্ট পেয়েছি। খেলাধুলার প্রতি টান ছিল সব সময়। সাইকেলে চড়ে ওই সময় ধানমণ্ডি এলাকা দাপিয়ে বেড়াতাম। লং জাম্পেও কেউ আমার সঙ্গে পারতো না। নারী ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ ছিল ভারতের সঙ্গে। তবে দুঃখের বিষয় পরীক্ষার কারণে সেই খেলায় অংশ নিতে পারি নাই। পরে ঢাকায় ভারতের বিপক্ষে খেলেছি। এখন ভালোলাগে বাংলাদেশি নারীরা বিশ্ব ক্রিকেটে দারুণ খেলছে। আমার বিশ্বাস ক্রিকেট বিশ্বে নারীরা আরো সফল হবে।

বাংলানিউজ: সামনে আরো এগিয়ে যেতে নারীদের কী করা উচিত বলে মনে করেন? 

শাহিন আহমেদ চৌধুরী: বর্তমানে নারীদের পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ নাই। নারী ছাড়া কিছু কল্পনা করা যায়। নারীকে বাদ দিয়ে উন্নয়নও কল্পনা করা যায় না। নারীদেরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে, চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। কর্মজীবনে সততা, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সর্বোচ্চটা দিলেই নারী সামনে আরো এগিয়ে যাবে। কর্মক্ষেত্রে নিজেকে নারী ভাবলে চলবে না। একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা মনে করে চ্যালেঞ্জ নেয়া শিখতে হবে।
 
বাংলানিউজ:
মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য বাংলানিউজ পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

 শাহিন আহমেদ চৌধুরী: বাংলানিউজ পরিবারকেও অনেক ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২০
 এমআইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।