ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মায়ের গহনা চুরির টাকা ফেরৎ দিতে বাবার বন্ধুর ছেলেকে অপহরণ করে খুন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১০

চট্টগ্রাম: মায়ের ১৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে আলাদা সংসার পেতেছিলেন সাইফুল। কিন্তু বিষয়টি খুব বেশিদিন লুকিয়ে রাখতে পারেননি তিনি।

ধরা পড়ে যান। এরপর ক্রমাগতই চাপ আসে পরিবারের কাছ থেকে, গহনা কিংবা টাকা ফেরৎ দেওয়ার।

সাইফুল এবারও সোজা পথে হাঁটেননি। বাঁকা পথে টাকা যোগাড় করতে বাবার বন্ধুর ছেলেকে অপহরণের ফন্দি আঁটেন।   অপহরণ করে মুক্তিপণের অর্থ জোগাড় করার আগেই ঘটনাচক্রে তার হাতে খুন হয় বাবার বন্ধুর ছেলে। সবশেষে সঙ্গীসহ ধরা পড়েছেন পুলিশের হাতে।

ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম মহানগরে।

সোমবার সন্ধ্যায় স্কুলছাত্র আশরাফ হোসেন বাবুকে অপহরণ করে হত্যার ঘটনায় সাইফুল ও তার বন্ধু রুহুল আমিন রাজুকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ।

অবাক করা ব্যাপার,বাবুকে হত্যার তিনমাস পর মুক্তিপণের টাকা নিতে আসেন সাইফুল। কিন্তু আগ্রাবাদ মহিলা কলেজের সামনে আগে থেকে ওঁৎ পেতে র‌্যাব-পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান সাইফুল।

মঙ্গলবার দুপুরে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের কাছে অপহরণ ও খুনের  কারণ খুলে বলেন ঘাতক সাইফুল।

গত ১৬ মে জেএম সেন স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র আশরাফ বাবু (১৭) অপহৃত হন। এর দু’দিন পর বায়েজীদ থানাধীন অনন্যা আবাসিক এলাকা থেকে পুলিশ অজ্ঞাত এক তরুণের লাশ উদ্ধার বেওয়ারিশ হিসাবে দাফন করে।

এ ব্যাপারে বায়েজিদ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলাও করে পুলিশ।

র‌্যাব-৭’র কোম্পানি কমান্ডার সিনিয়র এএসপি সাইদুর রহমান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি কে জানান, চশমা ব্যবসায়ী আজগর হোসেন হালিশহর থানায় মামলা করার পর র‌্যাব এ ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করে। তবে হত্যাকারীরা নানা কৌশল অবলম্বন করায় তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছিল না।

তিনি বলেন, ‘ঘটনার তির মাস পর গত ১৭ আগস্ট থেকে আবারো ঘাতকরা যোগাযোগ শুরু করলে তদন্তে গতি আসে। অবশেষে মুক্তিপণ আদায় করতে এলে কৌশলে আমরা তাদের গ্রেপ্তার করি। ’
 
ঘাতক সাইফুল জানান, ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে ‘জাহান অপটিক্যাল’র মালিক আজগর হোসেনের ছেলে বাবুকে গত ১৬ মে সন্ধ্যায় অপহরণ করে তারা।

পরিকল্পনা অনুযায়ী বাবুকে তারা টেলিফোনে ডেকে আনে। পরে তাকে ঘুমের ওষুধ মেশানো পেপসি পান করিয়ে অজ্ঞান করে। এরপর তার হাত, পা ও মুখ বেঁধে নগরীর হালিশহর থানার রঙ্গীপাড়ার একটি ভাড়া বাসায় ফেলে রাখা হয়।

পরদিন সকালে ওই বাসায় গিয়ে বাবুকে তারা মৃত পড়ে থাকতে দেখে। এরপর বাবুর লাশ একটি কার্টনে ভরে অটোরিক্সায় করে শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অনন্যা আবাসিক এলাকার কোয়াইশ রোডের নির্জন স্থানে ফেলে আসে তারা।

অপহরণের পরপর মুক্তিপণের টাকা দাবি করে নিহতের বাবা আজগর হোসেনের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলেও বাবু মারা যাওয়ায় যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় তারা।
 
সাইফুল আরও জানায়, বিয়ে করার পর মায়ের কাছ থেকে চুরি করা ১৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের টাকা যোগাড় করতেই বাবার বন্ধুর ছেলেকে অপহরণের পরিকল্পনা করে সে। আর বান্ধবীকে বিয়ে করতে রাজু তার সঙ্গে অপহরণে হাত মেলায়।

তবে বাবু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন রাজু। তিনি বলেন, বাবুকে হত্যার পর লাশ গুম করা ও কার্টন বাঁধার জন্য সাইফুল তাকে সহায়তা করতে ডেকেছিল।

ঘাতক সাইফুলের দাবি, ‘বাবু মারা যাওয়ায় মুক্তিপণ না নেওয়ার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু পরিবার থেকে আবারো টাকার জন্য চাপ আসায় দু’টি সিম কিনে আগস্ট মাসের শেষ দিকে বাবুর বাবার সঙ্গে মুক্তিপণের জন্য আবারো যোগাযোগ করি। ’

এদিকে ছেলে  হত্যার  ঘটনায় হতভম্ব আজগর হোসেন বলেন, ‘স্বপ্নেও ভাবিনি বন্ধুর ছেলে এভাবে নিমর্মভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করতে পারে। ওরা গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ঘূণাক্ষরেও টের পাইনি সাইফুলই আমার ছেলেকে অপহরণ করেছিল। এতদিন আশায় বুক বেঁধেছিলাম ছেলেকে ফিরে পাবো। ’

আজগর হোসেনেরই বন্ধু চশমা ডিলার শফিকুল ইসলামের ছেলে সাইফুল।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।