ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পপি বললেন ‘আমার ২ মেয়েকে আমিই হত্যা করেছি’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৭ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২০
পপি বললেন ‘আমার ২ মেয়েকে আমিই হত্যা করেছি’

ঢাকা: রাজধানীর খিলগাঁওয়ে দুই শিশুকে গলাকেটে হত্যা এবং তাদের মায়ের আত্মহত্যা চেষ্টার ঘটনার জট খুলেছেন ওই মা আখতারুন্নেসা পপির বাবা আবু তালেব। তিনি বলেছেন, নিজের দুই মেয়ে শিশুকে হত্যা করেছে পপি। এরপর সে নিজেই নিজের শরীরে আগুন দিয়েছে।

নিহত শিশু দুটির নানা এও বলেন, শনিবার সকালে আমার মেয়ে পপির তার দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে আমার বাসায় এসে নাস্তা খাবার কথা ছিল। কিন্তু সকালে যখন তারা আসেনি, তখন তাকে ফোন দিতে দিতে অস্থির হয়ে যাই।

সে ফোন রিসিভ করছিল না। মেয়ের বাসা আমার বাসার পাশেই; এরপর সেখানে ছুটে যাই।  

তিনি বলেন, মেয়ের বাসা ছয়তলা বাড়ির চারতলায়। ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা দিলেও ভেতর থেকে কেউ সাড়া দিচ্ছিল না। পরে পাশের ফ্ল্যাটের মহিলারা এসে বলেন, 'রাতের বেলায় আপনার মেয়ে তার দুই মেয়েকে অনেক মারধর করেছেন। আমরা চিৎকার শুনেছি। একপর্যায়ে আমরা দরজা ধাক্কা দিলে আপনার মেয়ে দরজা একটু খুলে বলেন, কিছু হয়নি, আপনারা ঘুমিয়ে পড়েন'।

আবু তালেব বলেন, জোরে জোরে ধাক্কা দিতে থাকলে কিছুক্ষণ পরে গায়ে কম্বল ঝরানো অবস্থায় দরজা খুলে পপি। খুলেই চিৎকার করে কান্না করতে করতে বলতে থাকে, 'বাবা আমার দুই মেয়েকে আমি হত্যা করেছি। পরে আমার নিজের গায়ে আমি নিজেই আগুন দিয়েছি'।

আবু তালেব আরও বলেন, আমার মেয়ের বাসা থেকে কিছুটা দূরে আমার বাসা। গোড়ান হাজি মসজিদ এলাকায় থাকি। গতকাল শুক্রবার (০৬ মার্চ) বিকেলে তারা আমার বাসায় এসেছিল। তখন আমি বললাম সকালে এসে আমার বাসায় তোরা নাস্তা খাবি। পপি বলল 'ঠিক আছে বাবা আসব'। তারপরে তার জামাইয়ের সঙ্গে ফোনে ব্যাপক ঝগড়া হয়েছে। আমি বললাম কী নিয়ে ঝগড়া। সে বলল, 'নানারকম বকাবকি করে আমাকে'।

পপির পাশের ফ্ল্যাটের পারুল বেগম বাংলানিউজকে বলেন, গতকাল রাতে বাচ্চাদের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পাই। পরে আমরা অনেকক্ষণ দরজা ধাক্কা দেওয়ার পরে ভাবি (পপি) দরজা একটু খুলে বলেন, 'কিছু হয়নি। আপনারা ঘুমিয়ে পড়ুন'।

তিনি বলেন, পপি ফ্ল্যাটের তেমন কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। শুধু বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যেতেন। আবার বাসায় চলে আসতেন।

শনিবার (০৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে খিলগাঁওয়ের গোড়ান এলাকার ৩৭৯ নম্বর বাসা থেকে মেহজাবিন আলভী (১১) ও জান্নাতুল ফেরদৌস জান্নাত (০৬) নামে শিশু দুটির গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একইসঙ্গে আত্মহত্যার চেষ্টায় নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে দগ্ধ পপিকেও উদ্ধার করে। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। পুলিশ প্রহরায় তিনি সেখানেই এখন চিকিৎসাধীন। তার শরীরের ১৮ শতাংশ পুড়ে গেছে।

খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ ধারণা করছে, দুই শিশু সন্তানকে জবাই করে হত্যার পর নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন তাদের মা পপি। এ ব্যাপারে শিশু দুটির বাবা মোজাম্মেল হক বিপ্লবকেও থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন>> খিলগাঁওয়ে ২ শিশু হত্যা: লেখাপড়ার খরচ নিয়ে হতাশায় ছিলেন মা

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২০
এজেডএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।