ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষে নিহত পাঁচজনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫১ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২০
খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষে নিহত পাঁচজনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন

খাগড়াছড়ি: তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় গ্রামবাসীর সঙ্গে বিজিবি সদস্যদের সংঘর্ষে নিহত পাঁচজনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৩ মার্চ) দিনগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল মর্গে বাবা ও দুই ছেলেসহ চারজনের ময়নাতদন্ত করা হয়। এর আগে বিকেল ৪টার দিকে গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্যের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।


 
নিহতরা হলেন- বিজিবি সদস্য বরগুনার বেতাগী থানার মো. সুজন খানের ছেলে মো. শাওন খান (৩০), মাটিরাঙ্গার বটতলী এলাকার বাসিন্দা মো. মুছা মিয়া (৫৫), তার দুই ছেলে আহমদ আলী (২৫) ও আলী আকবর (২৭), একই এলাকার বাসিন্দা মো. মফিজ মিয়া (৬০) ।
 
খাগড়াছড়ির ডেপুটি সিভিল সার্জন মিঠুন চাকমা বলেন, স্পর্শকাতর ঘটনা হওয়ায় আমরা রাতের মধ্যে মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছি। ইতোমধ্যে মরদেহগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি।
 
বুধবার (০৪ মার্চ) সকালে মাটিরাঙ্গার বটতলী মাঠে নিহতদের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে পারিবারিকভাবে সবার দাফন সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।  

এদিকে নিহত বিজিবি সদস্যের মরদেহ বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত অপর চারজনের মরদেহ বুধবার সকালে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার কথা জানিয়েছেন মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামছূদ্দিন ভূঁইয়া।
 
তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখনো কোনো পক্ষ মামলা করেনি। মামলা করলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।  এদিকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।  
 
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে মাটিরাঙ্গার গাজী নগর এলাকায় স্থানীয় চান মিয়ার জায়গা থেকে কয়েকটি গাছ কেটে তা ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের ৪০ বিজিবির সদস্যরা বাধা দেয়। এ সময় কথা বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে হাতাহাতি হলে বিজিবি সদস্যরা গুলি ছোড়ে। এতে প্রাণ হারান আহমদ আলী, আলী আকবর, তাদের বাবা মুছা মিয়া ও  বিজিবি সদস্য শাওন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান মফিজ মিয়া। এ সময় মো. হানিফ নামে একজন গুলিবিদ্ধ হন।
 
এ ঘটনার জন্য বিজিবির হাবিলদার ইসহাককে দায়ী করেছেন স্থানীয়রা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ইসহাক নির্বিচারী গুলি চালিয়েছে। এ সময় সহকর্মী শাওনের ওপরও গুলি চালায় সে। এমনকি গুলিবিদ্ধদের উদ্ধারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসতে চাইলেও ইসহাকের বাধার কারণে শুরুতে কেউ এগিয়ে আসতে পারেনি।
 
এদিকে এ ঘটনা নিয়ে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলামের পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মূলত অবৈধ কাঠ পাচাররোধে ব্যবস্থা নিলে স্থানীয় লোকজন বিজিবির টহল দলকে ঘিরে ধরে। এ সময় উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে বেসামরিক লোকজন অস্ত্র ছিনিয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে গুলি ছোড়ে। এতে এ হতাহত হয় বলে জানানো হয়।
 
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে গুইমারা সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহরিয়ার জামান বলেছেন, ঘটনায় যদি নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো সদস্য জড়িত থাকে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
 
এই ঘটনায় খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসক।  

এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেককের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২০
এডি/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।