ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বেড়েছে কিউলেক্স মশা, আশংকা ডেঙ্গু নিয়েও

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২০
বেড়েছে কিউলেক্স মশা, আশংকা ডেঙ্গু নিয়েও

ঢাকা: চলতি বছরের শুরু থেকেই রাজধানীতে বেড়েছে মশার প্রকোপ। বর্তমানে কিউলেক্স মশার উপদ্রব বাড়লেও আশংকা আছে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা নিয়েও। সামর্থ্য অনুযায়ী পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি সিটি কর্পোরেশনের।

তবে নাগরবাসী মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কোনো কর্মকাণ্ড দেখছেন না বলে জানিয়েছেন। তাদের দাবি, মাঝে মধ্যে ওষুধ ছিটানো হয়, রাস্তায় ধোঁয়া ওড়ানো হয়, এগুলো আসলে লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়।


 
গেল বছর ডেঙ্গুর প্রকোপে অতিষ্ঠ ছিল রাজধানীসহ পুরো দেশবাসী। এবার আগেভাগেই মশার ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় আগামী বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশংকায় আছেন সবাই। বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট, পার্ক উদ্যান বা মাঠ কোথাও মশার যন্ত্রণায় শান্তিমতো একটু বসার উপায় নেই কারও।  
 
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন মিরপুর পল্লবী এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, ‘মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। বাসার রুম, এলাকার দোকান বা আশেপাশের কোন মাঠ কোথাও একটু শান্তিমতো বসা যায় না। সবখানেই মশা আর মশা। সারাদিন বাসায় মশারি টানানো থাকে। ’
 
একই এলাকার সাগুফতায় এক রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী সুমন আহমেদও আছেন মশার যন্ত্রণায়। মশার উৎপাতে রেস্টুরেন্টে গ্রাহক রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, ‘আমাদের এটা ওপেন হাউজ রেস্টুরেন্ট। কিন্তু মশার যন্ত্রণায় এখানে গ্রাহকদের ধরে রাখাই দায়। মশার কয়েল, ইলেকট্রনিক মসকিউটো কিলারসহ যা যা করা সম্ভব সব করেছি। ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যবসা ভাল যাওয়ার কথা থাকলেও এবার মশার কারণে ব্যবসা খুবই খারাপ। ’ 

বর্তমানে মশার যে প্রকোপ তা মূলত কিউলেক্স মশার জন্য, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এরজন্য আবহাওয়াকেও দায়ী করছেন অনেকে। তবে কারণ যাই হোক, নিজেদের সাধ্যমত মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন। এর জন্য বছরব্যাপী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ডিসেম্বরের দিকে মশা বেশ নিয়ন্ত্রণে ছিল। জানুয়ারিতে এসে এর প্রকোপ বেড়েছে। এরজন্য আবহাওয়া অনেকখানি দায়ী। আমরা বলছি না কীটতত্ত্ববিদরাই বলছেন। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে আমরা বছরব্যাপী পরিকল্পনা নিয়েছি এবং সেই অনুযায়ী কাজ করছি। আপনারা জানেন জানুয়ারি মাস থেকেই আমরা আমাদের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছি। জনগণকে সচেতন করতে প্রতিটি অঞ্চলে অঞ্চলে অ্যাডভোকেসি সভা করছি। লিফলেট বিতরণ, মাইকিংসহ জনগণের সচেতনায় বিভিন্ন ধরনের কাজ করা হচ্ছে। ’
 
মশা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সার্ভের আলোকে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি সার্ভে প্রতিবেদন এসেছে আমাদের কাছে। সেখানে ডিএনসিসির ১, ১২, ১৬, ২০ এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ডকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা এগুলোকে ‘প্রায়োরিটি’ দিয়ে কাজ করব। তারপর আমরা আবার একটা সার্ভে করব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে মিলেও করা যায় কি না সেটাও ভাবছি। সেই সার্ভে রিপোর্টে আমরা বুঝব যে, পরিস্থিতির উন্নতি হল কি না। প্রতিবেদন বুঝে আবার কাজ করব। ’
 
কিন্তু মশক কর্মীদের কাজের অনিয়ম নিয়ে এখনও অভিযোগ আছে- এমন প্রশ্নের জবাবে মামুন বলেন, ‘আমরা এটা মানছি। কিছু জায়গায় ঘাটতি আছে। এরজন্য আমি নিজে গোপনে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে মশক কর্মীদের কাজ দেখছি। ভিডিও করছি। যাদের গাফিলতি পাচ্ছি তাদেরকে নিয়ম অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনছি। কর্মীদের কাজ তদারকি করার জন্য ১০টি অঞ্চলে ১০টি মনিটরিং টিম করা হয়েছে। এই টিমে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সকল বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন। এমনকি মশক কর্মীদের আমরা এখন যে ঔষধ দিচ্ছি সেটিই মাঠ পর্যায়ে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না বা এই বিষয়ে কোন অনিয়ম হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে আমরা ঝটিকা অভিযানের মতো হুট করে মশক কর্মীদের কাছ থেকে ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করছি। তারপর সেটিকে টেস্ট করে দেখছি। এই ধরনের কাজ অব্যাহত আছে। এছাড়াও মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র আমরা এনেছি আপনারা জানেন। সেগুলো নিয়ে আমাদের সাধ্যমত কাজ করা হচ্ছে। ’  
 
অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদে সিটি করপোরেশনকে কাজ করার পরামর্শ কীটতত্ত্ববীদদের। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববীদ ড. আসিফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বৃষ্টি হলে কিউলেক্স মশা কমে যাবে। তবে এডিস মশা বাড়বে। এটা স্বাভাবিক চিত্র। সিটি করপোরেশনগুলো এখন যেভাবে কাজ করছে তাতে তারা আগের যে কোন সময়ের থেকে অনেক বেশি প্রস্তুত। তবে তাদের কাজে দেখা যায় এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহব্যাপী কাজের প্রবণতা থাকে। এমনটা করলে চলবে না। দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। আর কাজের পর ফলাফল পর্যালোচনা করতে হবে। একই সাথে মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এর সাথে ফগিং যোগ করলে প্রজনননস্থলের বাইরে যে মশা আছে সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ’  
 
এদিকে এবার মশক নিয়ন্ত্রণে ওষুধে কোন পরিবর্তন আনা হবে কি না সে বিষয়ে আগামী ১ মার্চ ডিএনসিসিতে একটি সভা আয়োজনের কথা রয়েছে। ডিএনসিসির বিভিন্ন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং কীটতত্ত্ববিদদের সেই সভায় থাকার কথা রয়েছে। এডিস নির্মূলে ওষুধে কোন পরিবর্তন আনা হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে এই সভা থেকেই। এখন পর্যন্ত এডাল্টিসাইডের জন্য ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি এবং লার্ভিসাইডের জন্য টেমিফস ওষুধ প্রয়োগ করছে ডিএনসিসি।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২০ 
এসএইচএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।