ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শিশু রিফাতকে হত্যা করা হয়: পিবিআই

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শিশু রিফাতকে হত্যা করা হয়: পিবিআই

বাগেরহাট: বাগেরহাটের চিতলমারীর চাঞ্চল্যকর শিশু রিফাত হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও হত্যায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

গ্রেফতাররা হলেন- চিতলমারী উপজেলার সাবোখালী গ্রামের হামিদ তালুকদারের ছেলে মো. হাফিজুর রহমান তালুকদার ওরফে ছোট (২৯), শওকত তালুকদারের ছেলে ইকবাল তালুকদার (১৯) ও আব্দুল হান্নান তালুকদারের ছেলে সাকিব তালুকদার (১৪)। সাকিব ও ইকবাল শিশু রিফাতের চাচাতো ভাই।

 

এদের মধ্যে হাফিজুর রহমান বাগেরহাট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সমির মল্লিকের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে চাচাতো ভাইয়ের পরিকল্পনায় শিশু রিফাতুলকে চাচাতো ভাইরা হত্যা করেছে বলে দাবি পিবিআইয়ের।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পিবিআই বাগেরহাট কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির খুলনা বিভাগীয় প্রধান বিশেষ পুলিশ সুপার আতিকুর রহমান মিয়া।  

এসময় বাগেরহাট কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. শহিদুর রহমান, বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোজাফফর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এ বাকী তালুকদারসহ পিবিআই সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আতিকুর রহমান মিয়া বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধ থাকায় একই বংশের প্রতিপক্ষকে ফাসাঁতে ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর চিতলমারী উপজেলার চৌদ্দহাজারী গ্রামের মান্নান তালুকদারের ৫ বছর বয়সী ছেলে রিফাতুল তালুকদারকে হত্যা করে স্থানীয় ওদুদ মেম্বারের পুকুরে ফেলে রেখে যায় রিফাতের চাচাতো ভাই ইকবাল তালুকদার ও সাকিব তালুকদার। এ ঘটনায় ২৮ নভেম্বর চিতলমারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। পরবর্তীকালে পিবিআইকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।  

দীর্ঘ তদন্ত শেষে জানা যায়, ২০১৯ সালের  ১৭ জুন সোমবার বিকেলে ওই এলাকার সবুর তালুকদারের মৎস্য ঘের থেকে শিশুরিফাতুলের চাচা আওয়ামী লীগ নেতা কাওছার তালুকদারের ছেলে শিশু খালিদ তালুকদারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ২০১৯ সালের  ১৭ জুন সোমবার বিকেলে ওই এলাকার সবুর তালুকদারের মৎস্য ঘের থেকে শিশু রিফাতুলের চাচা আওয়ামী লীগ নেতা কাওছার তালুকদারের ছেলে শিশু খালিদ তালুকদারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই মামলায় বাদশা তালুকদার, কামরুল শেখ এবং মেরি বেগমসহ প্রতিপক্ষের কয়েকজন গ্রেফতার হয়। শিশু খালিদের বাবা কাওছার তালুকদারের ভাইয়েরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। খালিদ হত্যার আসামীদের ঘেরের মাছসহ মূল্যবান সম্পদ লুট করে। ওই বছরের নভেম্বরের দিকে প্রতিপক্ষের ওই আসামীদের জামিনের গুঞ্জন শুরু হয়। জামিনে বেরিয়ে এলে প্রতিপক্ষরা মান্নান তালুকদারের পরিবারের ওপর অত্যাচার করবে এই ভেবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে রিফাতুলের চাচারা। রিফাতুলের চাচা শওকত তালুকদারের ছেলে নুরুল আমীন তালুকদার রিফাতকে হত্যা করে প্রতিপক্ষকে ফাসানোর পরিকল্পনা করেন। সেই অনুযায়ী  ঘটনার এক সপ্তাহ আগে রিফাতুলের নিকট আত্মীয় নুরুল আমীন তালুকদার তার বন্ধু মো. হাফিজুর রহমান তালুকদার ওরফে ছোটকে বলে রিফাতুলকে হত্যা করতে হবে। হাফিজুর জানতে চায় ছোট শিশুকে কেন হত্যা করব। নুরুল আমীন বলেন, রিফাতুলের শারীরিক সমস্যা আছে এবং খালিদ হত্যার সব আসামি জামিনে বের আসছে। ওরা আসলে আমাদের আরও সমস্যা হবে এবং এর আগেই রিফাতকে মারতে হবে। তাতেও ছোট রাজী হয় না। এরপর নুরুল আমীন ছোটকে বলে তোর কিছু করতে হবে না। যা করার ইকবাল ও সাকিব করবে। সে অনুযায়ী ঘটনার দিন দুপুর একটার সময় ইকবাল ও সাকিব রিফাতুলকে বাড়ির পাশের মুকুল হালদারের সুপারির বাগানে নিয়ে যায়। সাকিব রিফাতুলকে বাগানের পাশে পানিতে ফেলে গলা কাদার মধ্যে চেপে ধরে। এতে শ্বাস বন্ধ হয়ে রিফাতুলের মৃত্যু হয়। তারপর নুরুল আমীন, সাকিব ও ইকবাল ছোটকে হুমকি দেয় এ ঘটনা কাউকে জানালে তোকেও হত্যা করা হবে।

ঘটনার পর ছোট ঢাকায় চলে যায়। ছোট হত্যার সঙ্গে জড়িত নিশ্চিত হওয়ার পরে ২৬ জানুয়ারি পিবিআই তাকে গ্রেফতার করে। ছোটর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে ইকবালকে এবং হাসপাতাল থেকে সাকিবকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে শিশু রিফাতুল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের খবর ও মূল আসামি ধরা পড়ায় ওই এলাকার শতাধিক নারী পুরুষ পিবিআই কার্যালয়ের সামনে জড় হয়। এসময় তারা মূল আসামি ধরা পড়ায় পিবিআইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অন্য আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অনুরোধ জানান।

চিতলমারী থেকে আসা চাঁদনী আক্তার, হাসিনা বেগম, সাইদুর রহমান তালুকদার, ডলিসহ কয়েকজন বলেন, শিশু রিফাতুল হত্যার পরে এলাকার অনেকের নামে মামলা হয়। মিথ্যা মামলা দিয়ে শিশু রিফাতের পরিবার এলাকার অনেকের ওপর অত্যাচার ও ঘেরের মাছসহ মূল্যবান সম্পদ লুটে নেয়। এ হত্যার রহস্য উদঘান ও মূল আসামি ধরা পড়ায় আমরা এলাকায় শান্তিতে বসবাস করতে পারব বলে আসা প্রকাশ করেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
আরএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।