ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

তদন্ত-মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে দুদকের ঘাটতি রয়েছে: টিআইবি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
তদন্ত-মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে দুদকের ঘাটতি রয়েছে: টিআইবি 

ঢাকা: অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে বলে এক গবেষণায় দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ উদ্যোগ: বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর একটি ফলো-আপ গবেষণা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় টিআইবি।  

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও উপদেষ্টা নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের।

গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাম্মী লায়লা ইসলাম।

দুদকের কার্যক্রম মূল্যায়নের এই গবেষণার রেফারেন্স পিরিয়ড ছিল তিন বছর (২০১৬-২০১৮)। পরে ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

গবেষণা অনুযায়ী, স্বাধীনতা ও মর্যাদার প্রশ্নে দুদককে পর্যাপ্ত স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে এবং আইনে কার্যক্রম সম্পর্কে বিশদভাবে বলা হয়েছে। তবে কার্যক্রম ও ক্ষমতার ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ। দুদক বিরোধীদলের রাজনীতিকদের হয়রানি, ক্ষমতাসীন দল ও জোটের রাজনীতিকদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শন, রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ আচরণ দেখাতে ব্যর্থ হওয়া, পক্ষপাতপূর্ণ ভূমিকা পালন করার অভিযোগ, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের বিরুদ্ধেই বেশিরভাগ তদন্ত পরিচালনা করে আসছে বলে সাধারণের মধ্যে ধারণা রয়েছে। যদিও ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধেও দুদকের তদন্ত চলছে।  

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদকের মূল ম্যান্ডেট দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখা। আইনের চোখে সবাই সমান এই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নিরপেক্ষভাবে প্রভাবমুক্ত হয়ে দায়িত্ব পালনের যে সৎ সাহস ও দৃঢ়তা তাতে ঘাটতি দৃশ্যমান। তবে কর্মী নিয়োগ ও প্রচার-প্রচারণার মতো কিছু ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা দায়েরের মতো মৌলিক ক্ষেত্রে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহনশীলতা নীতিকে সাধুবাদ জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটির সুফল দেশবাসী পেতে চায়, কিন্তু এর বাস্তবায়নের এক্তিয়ার যাদের হাতে তার মধ্যে অন্যতম দুদক, সেই প্রতিষ্ঠানটিকেই অকার্যকর করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকারি চাকরি আইন- ২০১৮'র মধ্যে একটি ধারা সংযুক্ত করে এক ধরনের বার্তা দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে দুদকের আইনগত ভিত্তিকে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মানি লন্ডারিংকে দুদকের আওতা বহির্ভূত করা হয়েছে। এছাড়া, ব্যক্তিমালিকানধীন খাত এখনও দুদকের এক্তিয়ার বহির্ভূত। এ বিষয়গুলো সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতির পরিচায়ক। অন্যদিকে দুদকের মধ্যে এমন মানসিকতা দেখা যায়, যেন এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, যা প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল। যদিও সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু এটি যে স্বাধীনভাবে সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনবে, সে ধরনের মানসিকতা ও প্রয়াস নেই। সরকারের পক্ষ থেকেও এমন উদ্যোগ নেই। এসব কারণে উচ্চ পর্যায়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয় না।

সংবাদ সম্মেলনে দুদকের কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট আইন (দুদক আইন-২০০৪, অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন-২০১২, সরকারি চাকরি আইন-২০১৮) সংশোধনসহ দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করা, অর্থপাচার ও ব্যক্তিমালিকানাসহ বেসরকারি খাতের দুর্নীতিকে দুদকের কাজের আওতাভুক্ত করা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য দুদকের সুপারিশকে বাধ্যতামূলক করাসহ দুদকের মূল চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধানের লক্ষ্যে টিআইবি ১৬ দফা সুপারিশ প্রদান করে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০
আরকেআর/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।