ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেটে ধান সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
সিলেটে ধান সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগ বিক্রি করতে না পেরে গুদামের সামনে ধান নিয়ে বসে আছেন কৃষক

সিলেট: সিলেটের ওসমানীনগরে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহের অনিয়মের অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। কিছু কর্মকর্তার যোগসাজসে গড়ে উঠা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান কেনায় প্রকৃত কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন তারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার তাজপুরের খাদ্য গুদামে একাধিক কৃষকের ধান না নিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেওয়া ট্রাক ভর্তি নিম্নমানের ধান গুদামজাত করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।  

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সরজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার রবিদাশ গ্রামের কৃষক সুনু মিয়ার ধান নেওয়া হবে বলে তাকে অপেক্ষায় রাখা হয়।

দুপুর ২টার দিকে তার ধান নেওয়া হবে না বলে জানালে উপস্থিত কৃষক এবং সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।

এসময় প্রকৃত কৃষকদের ধান না নিয়ে মানহীন ধান গুদামজাতের অভিযোগে কৃষকরা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত এলএসডি মুর্শেদা বেগমকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরা উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আব্দুল আউয়ালকে অফিসে এসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা বললে ওই কর্মকর্তা অফিসে আসতে অনীহা প্রকাশ করেন।

পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলুসহ আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠেনের নেতা ও স্থানীয় লোকজনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

কৃষক আব্দুল মুহিদ, আব্দুর রাজ্জাক, তজমুল আলী জানান, প্রকৃত কৃষকদের নাম তালিকায় থাকলেও তারা ধান নিয়ে এসে বিক্রি করতে পারেন না। তাদের ধান না নিয়ে খাদ্য গুদাম সংশ্লিষ্টরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইচ্ছামতো ধান কিনে। এ অবস্থায় কৃষকরা নিজের জমির ধান বিক্রি করতে না পেরে দালালদের কাছে কম মূল্যে বিক্রি করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত এল এস ডি মুর্শেদা বেগম ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (ওসমানীনগরে অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত) আব্দুল আউয়ালসহ সংশ্লিষ্টরা প্রতি টন ধান কিনতে দু’হাজার টাকা কৃষকদের থেকে বাধ্যতামূলক আদায় করছেন। ডিজিটাল মিটারে ধান মাপার কথা থাকলে অ্যানালগ পাল্লা দিয়েই ধান মাপা হচ্ছে।

এক্ষেত্রে কৌশলে সাধারণ কৃষকদের কাছ থেকে টনপ্রতি তিন-চার মন ধান বেশি নেওয়া হচ্ছে। ফলে সরকারের ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে প্রকৃত কৃষকের কোনো উপকারে আসছে না।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু বলেন, খাদ্য গুদামের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার জন্য এ উপজেলার সাধারণ কৃষকরা ধান বিক্রিতে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ না করায় খাদ্য গুদামে হট্টগোলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। তবে পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।

উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত এলএসডি কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা মুর্শেদা বেগম বলেন, কে কৃষক আর কে কৃষক নয় সেটি জানি না। তবে তালিকায় নাম থাকলে আমরা ধান নিচ্ছি। আমাদের আরও ২৪৬ টন ধান সংগ্রহ বাকি আছে, তাও দ্রুত সংগ্রহ করা হবে।

তিনদিনে ৩৫৪ টন ধান কিভাবে সংগ্রহ করা হলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কৃষকরা ধান নিয়ে এসেছেন আমরা বাছাই করে রেখেছি।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) আব্দুল আউয়াল অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা চাইলে পাঁচ টন ধানও নিতে পারি। ’

কৃষকদের অভিযোগের জবাব দিতে উপজেলা খাদ্য গুদামে আসার জন্য বললে তার হাতে সময় নেই বলে জানান তিনি।  

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০
এনইউ/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।