ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

এনামুল-রূপনের বাড়ি যেন টাকা-সোনার ভাণ্ডার!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০
এনামুল-রূপনের বাড়ি যেন টাকা-সোনার ভাণ্ডার! টাকা গণনা করা হচ্ছে।

ঢাকা: রাজধানীর পুরান ঢাকায় ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্রিট এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা সেই দুই ভাই এনামুল-রূপনের বাসায় অভিযান চালিয়ে ফের নগদ ২০ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এছাড়া পাঁচ কোটি টাকার এফডিআরও পাওয়া গেছে। 

এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর তাদের একাধিক বাসা থেকে ৭৩০ ভরি সোনা ও নগদ ৫ কোটি টাকা জব্দ করেছিল র‌্যাব।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া।

দুই ভাইয়ের এ বাড়িটি ছিল টাকার গোডাউন।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত থেকে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে পুরান ঢাকার ওই বাসায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।

অভিযান সংশ্লিষ্টরা জানান, গভীর রাতে পুরান ঢাকার ১১৯ লালমোহন সাহা স্ট্রিটে এনামুল ও রূপন ভূঁইয়ার বাড়িতে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল রকিবুল হাসান বলেন, এনামুল-রুপনের বাসায় ফের অভিযান চালিয়ে নগদ ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এর বাইরে ১ কেজি স্বর্ণালঙ্কার ও ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে।

এছাড়া ৯ হাজার ৩০০ ইউএস ডলার, ১৭৪ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ১০৯৫ চাইনিজ ইউয়ান, ৫৩৫০ ভারতীয় রূপি, ১৫৬০ থাই বাথ ও ১০০ দিরহাম আরব আমিরাতের মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

লে. কর্নেল রকিবুল হাসান বলেন, পাঁচতলা ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে লোহার ভল্টের মধ্যে এক হাজার টাকার নোটের বান্ডেলগুলো থরে থরে সাজানো ছিল। ফ্ল্যাটের চারটি কক্ষের মধ্যে তিনটি কক্ষ থেকে পাঁচটি ভল্ট থেকে ওই টাকা উদ্ধার করা হয়।

এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল ও রূপনদের গেণ্ডারিয়ার বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালিয়েছিল র‌্যাব। সে অভিযানে চারটি ভল্ট ভেঙে নগদ এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা ও ৭৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করা হয়েছিল।

গত সেপ্টেম্বরে শুরূ হওয়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর থেকেই আলোচনায় আসেন দুই ভাই এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া। অভিযানের পর থেকেই তারা পলাতক ছিলেন।

অবশেষে গত ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর অদূরে কেরাণীগঞ্জ থেকে এনামুল ও রূপনকে গ্রেফতার করে সিআইডি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এনামুল ও রূপন গত ছয় থেকে সাত বছরে পুরান ঢাকায় বাড়ি কিনেছেন কমপক্ষে ১২টি। ফ্ল্যাট কিনেছেন ছয়টি।  

স্থানীয় লোকজন জানান, এ দুই ভাইয়ের মূল পেশা জুয়া। জুয়ার টাকায় এনামুল ও রূপন কেবল বাড়ি ও ফ্ল্যাটই কেনেননি, ক্ষমতাসীন দলের পদও কিনেছেন।

২০১৮ সালে এনামুল গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং রূপন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। তাদের পরিবারের পাঁচ সদস্য, ঘনিষ্ঠজনসহ মোট ১৭ জন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগে পদ পান। সরকারি দলের এসব পদ-পদবিকে জুয়া ও ক্যাসিনো কারবার নির্বিঘ্নে চালানোর ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন তারা।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে সরকার ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরূ করে র‌্যাব। সেদিন থেকে পর্যায়ক্রমে ঢাকার ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাব, মোহামেডান, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব এবং কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানো হয়।

এসব অভিযানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, শফিকুল আলম ফিরোজ, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, এনামুল হক আরমান, হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজিব ও ময়নুল হক মঞ্জু, ঢাকা মোহামেডান ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়াসহ সরকারি দলের অনেক নেতা গ্রেফতার হন। জব্দ করা হয় কোটি কোটি টাকা, মাদক ও ক্যাসিনো সরঞ্জাম।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০
পিএম/আরবি/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।