ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সঞ্চয় স্কিমের সুদ কমায় আমানতকারীরা ক্ষুব্ধ-হতাশ

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০
সঞ্চয় স্কিমের সুদ কমায় আমানতকারীরা ক্ষুব্ধ-হতাশ .

ঢাকা: সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে কড়াকড়ি, ব্যাংকে মেয়াদী আমানতের সুদ কমানোর পরে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদ ৫০ শতাংশ কমানোর ঘোষণায় ক্ষুদ্র আমানতকারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, সুদ কমালে আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত ও নিরুৎসাহিত হবেন। এটা অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো ফল বয়ে আনবে না।

 

এ অবস্থায় সমালোচনার মুখে বুধবার অর্থমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদহার পুনর্বিবেচনা করা হবে।  

অন্যদিকে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি অটোমেশন করায় পদে পদে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন আমানতকারীরা। টাকা তুলে নিচ্ছেন অনেকেই।

কালো টাকার বিনিয়োগ বন্ধ ও প্রকৃত উপকারভোগীদের কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে সরকারের এই নির্দেশনার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। শুধু বিক্রিই কমছে না বরং যারা করেছিলেন তারাও (তুলে) ভাঙিয়ে টাকা তুলে নিচ্ছেন।

সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কর্পোরেট শাখায় সঞ্চয়পত্রের কাউন্টারের কথা হয় ষাটোর্ধ রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করার পাশাপাশি উৎস করও বৃদ্ধি করেছে। ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদ অর্ধেক কমেছে। ব্যাংক মেয়াদী আমানতের সুদ কমিয়েছে। আমরা কোথায় যাবো।  

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হয়েছে তার চেয়ে ৪০৮ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমান ৫ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা, যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২০ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৮ শতাংশ কম। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৭ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক আবু তালেব বলেন, সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে। তবে কেনার সময় টিআইএন সনদ বাধ্যতামূলক করায় আগের চেয়ে কমে গেছে। মানুষ সঞ্চয়পত্র কেনায় সচেতন হলে ধীরে ধীরে আবার বিক্রি বাড়বে।  

এদিকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে সুদের হার কমিয়েছে সরকার। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ থেকে কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ শতাংশ। অনুরূপভাবে দুই বছর মেয়াদি সঞ্চয় প্রকল্পের সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ, যা আগে ছিল ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর এক বছর মেয়াদে সুদহার ১০ দশমিক ২০ থেকে কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ শতাংশ।  

ডাকঘরের আমানতকারী চাইলে প্রতি ছয় মাস অন্তর মুনাফা উত্তোলন করতে পারেন। আর সেখানেও সুদের হার কমবে। প্রথম বছরে ৪, দ্বিতীয় বছরে সাড়ে ৪ ও তৃতীয় বছরে ৫ শতাংশ হারে মুনাফা মিলবে। আগে যা ছিল যথাক্রমে ৯, সাড়ে ৯ ও ১০ শতাংশ।  

খোদেজা আক্তার তিন বছর মেয়াদী ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন ২০১৭ সালে। চলতি বছরের জুলাই মাসে তার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদ কমায় শুরু হয়েছে নতুন দুঃশ্চিন্তা।  

ক্ষোভ প্রকাশ করে খোদেজা বলেন, ‘নিরাপদ বিনিয়োগের নিশ্চয়তা ও তুলনামূলক বেশি সুদ মেলায় এখানে অর্থ সঞ্চয় করেছিলাম, কিন্তু সুদ কমিয়ে দেওয়ায় সেই সুযোগটুকুও আর থাকছে না। এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি। ’ 

ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদের হার কমিয়ে দেওয়ায় খোদেজার মতো অনেকেই এখানে টাকা রাখতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।  

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এভাবে মানুষকে সঞ্চয়ে নিরুৎসাহ করা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। এটা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। এর ফলে সাধারণ মানুষ সঞ্চয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। একই সঙ্গে সঞ্চয় অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসে চলে যাওয়ারও আশঙ্কা তৈরি হবে, যা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না। ’

তিনি বলেন, ‘এমনিতেই সঞ্চয়ের হার কমে গেছে। আর সঞ্চয় না হলে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ’

কালো টাকা এবং অতিরিক্তি বিনিয়োগ বন্ধ করতে সঞ্চয়পত্র বিক্রির অনলাইন ডাটাবেজ তৈরি করেছে সরকার। ‘ন্যাশনাল সেভিং সার্টিফিকেটস অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে ডাটাবেজ ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন অর্থবিভাগের তৎকালীন সচিব আব্দুর রউফ।  

নির্দেশনায় বলা হয়, ৫০ হাজার টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে ব্যাংক চেকের মাধ্যমে অর্থ জমা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র, ই-টিন সনদ জমা দিতে হবে। সুদের টাকা জমা হবে ব্যাংক হিসাবে। এজন্য সঞ্চয়কারীর ব্যাংক হিসাব নম্বর, মোবাইল নম্বর দিতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০
এসই/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।