ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফুলে ফুলে ভরেছে বাঙালির গৌরবের শহীদ মিনার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০
ফুলে ফুলে ভরেছে বাঙালির গৌরবের শহীদ মিনার

ঢাকা: একুশ মানে মাথা নত না করা, একুশ মানে বাংলা জয়ের প্রথম প্রহর। হাতে হাতে ফুল, কণ্ঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি ...’। বিনম্র শ্রদ্ধা, যথাযথ মর্যাদা আর ভালোবাসায় বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) মধ্য রাত থেকে হাজারো মানুষের ঢল নামে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

মাতৃভাষার প্রতি সম্মানের এ আয়োজনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। সব বয়সী নারী-পুরুষ-শিশুসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের পদচারণে মুখর ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা।

যেখানে যোগ দেন ভিনদেশি নাগরিকরাও।

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসার ফুলে শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের আগেই ভরে উঠে পুরো শহীদ মিনারের বেদী। সেখানে দায়িত্বরত বিএনসিসি, রেডক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউট, স্কাউটসহ স্বেচ্ছাসেবকরা শ্রদ্ধাঞ্জলির সেসব ফুল থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন বেদীতে। তাদের অনেকেই ফুল দিয়ে ফুটিয়ে তুলে ধরেছেন বিশ্বের বুকে দেশের মানচিত্র, বাংলা ভাষার বিভিন্ন অক্ষর।  

শুধু রাজধানীবাসী নয়, সারা দেশের মানুষ পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে ভাষা শহীদদের। মাতৃভাষার জন্য বাংলার দামাল ছেলেদের আত্মত্যাগের কারণে বিশ্ববাসীও পেয়েছে মাতৃভাষার আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি। তারা পালন করছেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ বাঙালির জীবনে একাধারে অহংকারের, গৌরবের আবার শোকের। ১৯৫২ সালের এ দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বুকের রক্তে রাজপথ রাঙিয়েছিল ভাষা শহীদেরা। ‘আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস’ হিসেবে ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো স্বীকৃতি দেয়।

এর আগে একুশের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শহীদ মিনার এলাকা ছেড়ে গেলে রাত ১২টা ১৬ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এরপর জনতার ঢল নামে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর জাতীয় সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টির (জাপা) পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়ররা শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, বিমানবাহিনী প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগ, ১৪ দলীয় জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা শহীদদের পরিবারের পক্ষ থেকেও বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিরা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও রাষ্ট্রদূত, ওআইসি প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) উপাচার্য ও ঢাবির শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশান, বিএনপি, আওয়ামী লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ডাকসু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল সংসদ ও হল কর্তৃপক্ষ, পূজা উদযাপন পরিষদ, বৌদ্ধ ছাত্র পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, স্বেচ্ছাসেবক ধারা, বিশ্ব বাঙালি সংঘ, বিপ্লবী পাদুকা শিল্প শ্রমিক সংহতি, হাজী মুহম্মদ মুহসিন হল, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী সংগ্রাম পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

বাঙালি জাতির সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে বায়ান্ন সালের মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ২১ শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি হানাদারদের আক্রমণে প্রাণ দিতে হয়েছে বাংলার সূর্য সন্তানদের। তমদ্দুন মজলিসের হাত ধরে শুরু হওয়া এ আন্দোলন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে চূড়ান্ত ফলাফল অর্জিত হয়। প্রতিবছর বীর বাঙালি ভাষার জন্য রক্ত বিলিয়ে দেওয়া সৈনিকদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০
ইএআর/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।