ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দৌলতদিয়ায় আরেক যৌনকর্মীর জানাজা ও দাফন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০
দৌলতদিয়ায় আরেক যৌনকর্মীর জানাজা ও দাফন

রাজবাড়ী: আবারও রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার যৌনপল্লিতে রিনা বেগম (৬৫) নামে এক যৌনকর্মীর জানাজার নামাজ ও দাফন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের যৌনপল্লি সংলগ্ন গোরস্থানের মাঠে যৌনকর্মী রিনা বেগমের জানাজার নামাজ হয়। পরে তাকে দাফন করা হয়।



এইবার যৌনকর্মীর জানাজার নামাজ পড়িয়েছেন গোয়ালন্দ ঘাট থানা জামে মসজিদের ইমাম আবু বক্কার সিদ্দিকি।

জানাজার নামাজে অংশ নেন, রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসক ও অপরাধ) সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ হেডকোয়াটার্স) ফজলুল করিম, গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহমানসহ স্থানীয় অনেকে।

রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান দৌলতদিয়া যৌনপল্লির মানুষের মানবিক দিকগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা মতে রাজবাড়ী জেলা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। ধর্মীয় বিষয়টি কারো উপর চাপানো ঠিক নয়, তাই গোয়ালন্দ ঘাট থানা মসজিদের ইমামকে দিয়ে এইবারের জানাজার নামাজ পড়ানো হয়েছে। আগামীতে ধর্মীয় রীতি মেনে এ জানাজা ও দাফনের কাজ অব্যাহত থাকবে।

দৌলতদিয়া পূর্বপাড়া যৌনপল্লির ‘অসহায় নারী ঐক্য সংগঠন’ এর সভানেত্রী ঝুমুর বেগম বলেন, আমরা যারা দৌলতদিয়া যৌনপল্লির বাসিন্দা, আমরাও তো সমাজের অন্য মানুষের মতোই মানুষ। আমাদেরও আছে অধিকার। আগে এখানে কেউ মারা গেলে তাকে নদীতে ভাসানো বা মাটিচাপা দেওয়া হতো। আমরা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম, আমাদের এই পল্লির বেশিরভাগ নারীই মুসলিম। আমরা মারা গেলে যেন জানাজা আর দাফন হয়। সেই দাবি মেনে এখন আমাদের জানাজার ব্যবস্থা হয়েছে, এটি ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা যে কেউ মারা গেলে থানায় খবর দেই। আমাদের কেউ মারা গেলে এখন প্রশাসনের সহযোগিতায় ধর্মীয়ভাবে দাফনের ব্যবস্থা করা হবে। এসব কাজে এগিয়ে এসেছেন ওসি আশিকুর রহমান। তাকে জানাই অনেক অনেক সম্মান ও ধন্যবাদ।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান জানান, যৌনকর্মীরাও মানুষ। তাদেরও অধিকার রয়েছে স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকার। আর এতোদিন তাদের কেউ মারা গেলে ধর্মীয়ভাবে দাফন কাফনের ব্যবস্থা ছিল না। এখন থেকে তাদের ধর্মীয় ভাবেই জানাজার নামাজ ও দাফন কাফনের ব্যবস্থা হবে।

গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমানের উদ্যোগে ধর্মীয় রীতি মেনে দীর্ঘকালের নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া বা মাটিচাপা দেওয়ার প্রথা ভেঙে প্রথমবারের মতো যৌনকর্মী হামিদা বেগমের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়।

তবে ইসলাম ধর্মের রীতি মেনে যৌনকর্মী হামিদা বেগমের জানাজার নামাজ পড়ানো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হবার পর ইমাম গোলাম মোস্তফা এবার রিনা বেগমের জানাজার নামাজ পড়াননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।