ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘নদীর জায়গার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিস্থাপন করা হবে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
‘নদীর জায়গার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিস্থাপন করা হবে’

ঢাকা: রাজধানীর আশপাশে নদীর জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানান্তর করে সুদৃশ্য করে প্রতিস্থাপনের কথা জানিয়েছেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় তিনি আরো বলেন, এ উদ্দেশ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
 
নদীতীরে বিদ্যমান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনা পুনঃস্থাপন সংক্রান্ত সভায় জানানো হয়, ঢাকা, টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষা ও ধলেশ্বরী নদীর (বৃত্তাকার নৌপথ অংশে ফোরশোর বা তীরভূমিতে অননুমোদিতভাবে গড়ে ওঠা ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১১৩টি।


 
এর মধ্যে মসজিদ ৪৭টি, মাদ্রাসা ১৯টি, এতিমখানা ও মাজার ১১টি, কবরস্থান ও মৃত ব্যক্তির গোসলখানা ৫টি, ঈদগাঁ একটি, স্কুল ও কলেজ ১৪টি, স্নানঘাট-মন্দির-শ্মশানঘাট ১৩টি, অন্যান্য ৩টি।
 
নৌ-মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুস সামাদ, ধর্মসচিব মো. নূরুল ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ, বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকসহ আলেম এবং সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
 
নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ঢাকাকে বসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তা-ভাবনার আলোকে রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোকে অবৈধ দখল ও দূষণমুক্ত করে নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই।
 
গত একবছর ধরে বাধাহীনভাবে উচ্ছেদ অভিযান এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব জায়গায় আমাদের সরাসরি অনুভূতির সঙ্গে জড়িত মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, শ্মশানঘাটসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান আছে। এগুলো আমাদের অনুভূতির সঙ্গে জড়িত সেগুলোর ক্ষেত্রে আমরা এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করিনি, আলোচনা করছি।
 
‘আমরা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে উচ্ছেদ করতে চাই না। আমরা এগুলোকে সমন্বয় সাধন করতে চাই। ঢাকা শহরকে মসজিদের নগরী বলা হয়। এই ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে, এই ঐতিহ্যকে আমরা আরো বেশি সমৃদ্ধ করতে চাই। আমাদের যে নদীগুলো আছে সেগুলোকে দূষণমুক্ত এবং পরিবেশ বান্ধব করার অর্থই হচ্ছে সেখানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো একটা গুরুত্বপূর্ণ আবহ তৈরি করতে পারে। আমরা পরিকল্পিতভাবে এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে গড়ে তুলতে পারি কিনা সেই আলোচনা করেছি। আমরা দেখেছি এগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। ’
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিজস্ব অর্থায়নে সারাদেশে জেলা-উপজেলায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হচ্ছে বলেও জানান নৌ প্রতিমন্ত্রী।  

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা আলোচনা করেছি, ৫৬০টি মডেল মসজিদ যদি আমরা করতে পারি তাহলে ঢাকার আশেপাশে যে প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলো পরিকল্পিতভাবে করতে পারি। এটা করলে নদী যখন দূষণমুক্ত করবো, নদী যখন আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হবে, নদী দিয়ে যখন চলাচল করবো, তখন এই ধরনের সুদৃশ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যখন দেখবো সেটা আমাদের মধ্যে অনেক ভালোলাগার একটা বিষয় হবে।  

‘আমাদের বিদেশি মেহমানরা যখন আসবে, তারা যখন বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ পরিভ্রমণ করবেন তখন তারাও দেখবেন যে বাংলাদেশের সরকার এতো সুন্দর একটা চিন্তা-ভাবনা নিয়ে ঢাকার চারদিকে একই ডিজাইনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। সেটাও আমাদের জন্য অনেক বেশি আনন্দ এবং সুখের হবে। ’
 
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনো মসজিদ ভাঙা হবে না, এটাকে আমরা এডজাস্ট করবো। সেই বিষয়েই ধর্মীয় চিন্তাবিদদের মতামত নিতে আমরা আলোচনা করছি। আমাদের ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই, স্বার্থ হচ্ছে দেশের স্বার্থে, যেখানে বসবাসযোগ্য শহর এবং সেখানে সবাই স্বাভাবিক জীবন-যাপন করবে।
 
‘মসজিদগুলো নদীর জায়গায় করা হবে না, স্থানান্তর হবে আলোচনা সাপেক্ষে, এখানে কোনো ফোর্স এপ্লাই করা হবে না। টাস্কফোর্ফ এপ্লাই করা হবে না। মসজিদগুলোর কোনো অপরাধ নেই, মুসল্লিদেরও কোনো অপরাধ নেই; অপরাধ হচ্ছে যে এই ধরণের অসৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। আমরা এগুলো চিরতরে বন্ধ করে দিতে চাই। ’
 
অনেকেই এই বিষয়গুলো নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অতীতেও আমরা দেখেছি এ ধরনের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে অনেকেই রাজনীতি করার চেষ্টা করেছেন। তারা ধর্মের প্রতি সম্মান দেখাননি, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য করেছেন। বর্তমান সরকার প্রত্যেকটি ধর্মকে সম্মান রেখেই দেশ পরিচালনা করছে এবং মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে কখনও ক্ষমতার ভাগিদার হতে চায় না। ধর্মকে ব্যবহার করতে চাই সুন্দর সমাজ পরিচালনার জন্য। যারা বিভ্রান্তমূলক কথাবার্তা বলছেন তারা এই জায়গা থেকে দূরে থাকবেন। তারা যদি এ ধরনের বিভ্রান্তমূলক কথাবার্তা অব্যাহত রাখেন তাহলে সরকার শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।
 
কবে নাগাদ বাস্তবায়ণ হবে- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যখন সুন্দর সিদ্ধান্ত আসবে তখন আমরা বাস্তবায়নে যাবো। স্থাপনা নির্মাণ ও জায়গা নির্ধারণের ব্যাপার আছে। এগুলো জরিপ হচ্ছে। এরপর সরকারের অর্থায়নে প্রকল্প গ্রহণ করে বাস্তবায়নে চলে যাবো। তবে এটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। একটি বিদেশি সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি তারা বলেছে ১২ বছর এবং টাকার অংকও অনেক বেশি।
 
মসজিদগুলো কোথায় করা হবে- প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে আমরা জরিপ করছি, নদীকে আমরা নদীর জায়গায় রাখবো। নদীকে নদীর জায়গায় থাকা উচিত এবং প্রবাহমান রাখা উচিত।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
এমআইএইচ/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।