ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চা বাগানে প্রুনিং শেষ, এখন বৃষ্টির অপেক্ষা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
চা বাগানে প্রুনিং শেষ, এখন বৃষ্টির অপেক্ষা

মৌলভীবাজার: চা বাগানের কোনো কোনো অংশে এখন আর সবুজ পাতা নেই। দিগন্ত বিস্তৃত চা বাগান এখন ধূসর। একেকটি চা গাছে এখন শুধু কয়েকটি সবুজ পাতাহীন ডাল। ওভাবেই ওরা টিলাময় প্রতিটি প্রসারিত অঞ্চলজুড়ে।

 চা বাগানের সবুজ কেটে উপড়ে ফেলা হয়েছে। তবে তা গাছের ক্ষতির জন্য নয়।

বরং উপকার করার জন্য। এভাবে কেটে ফেলার এই পদ্ধতিকে ‘প্রুনিং’ বা কলম করা বলে।  
  
বাৎসরিক প্রুনিং (কলম) এরপর এখন চা গাছগুলো বৃষ্টির জন্য অপেক্ষামুখর। প্রাকৃতিক বৃষ্টির পরশ পেলেই কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করবে প্রুনিং করা অংশ থেকে। চা গাছের ফলন ব্যবস্থাপনার নির্দিষ্ট মাপজোক মেনে চলে প্রতিটি চা বাগানে এই প্রুনিং কার্যক্রম।  

বাংলাদেশ চা বোর্ড (বিটিবি) সূত্র জানায়, বাংলাদেশ চা বোর্ডের নিবন্ধন করা চা বাগানের সংখ্যা ১৬৭টি এবং মোট বরাদ্দ ভূমির পরিমাণ ২ লাখ ৭৯ হাজার ৫০৬ দশমিক ৮৮ একর।  

বাংলাদেশ চা সংসদের সিনিয়র টি-প্ল্যান্টার ইবাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, এখন চা বাগানগুলোতে উইন্টার ক্লিনিং (শীতকালীন পরিচর্যা) চলছে। কিছুদিন আগেই প্রুনিং শেষ হয়েছে। এখন চলছে শীতকালীন সেবাশুশ্রুষা।  

তিনি আরও বলেন, এখন বৃষ্টি হলেই চা গাছগুলো কুঁড়ি ছাড়বে। তবে এর জন্য প্রাকৃতিক তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে হবে। তা না হলে কুঁড়ি ছাড়তে দেরি হবে। এখন তাপমাত্রা ২৬-২৭ যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে কিছু দিনের মধ্যে আমাদের তাপমাত্রা ৩০/৩৫ ডিগ্রিতে পৌঁছাবে এবং বৃষ্টির পরশ পেয়ে কুঁড়িরা বের হবে।  
  
চা বাগান সম্পর্কে ইবাদুল হক বলেন, শীতকালীন পরিচর্যার পাশাপাশি চলছে ইউডিং অর্থাৎ খুরপি বা মাটি নিড়ানো। এরপর মার্চিং অর্থাৎ, মাটি আচ্ছাদন করা। যেন চা বাগানের গুড়ির পানি বাষ্প হয়ে চলে না যায়। মাটির গাছের গোড়া সবুজ পাতা বা কচুরিপানা দিয়ে আচ্ছাদন করা বা ঢেকে রাখা।  দিগন্ত বিস্তৃত পত্রবিহীন চা গাছএরপর আগুন থেকে চা বাগানগুলোকে দূরে রাখার জন্য চা বাগানে ২৪ ফুট চওড়া করে এটা ফায়ার লাইন কাটা হয়। ধরুন, চা বাগানে আশপাশে একটা জঙ্গল আছে। ওই জঙ্গলটাকে চা গাছগুলো থেকে ২৪ ফুট দূরে রাখতে হবে। এটাকে বলে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য লাইন কাটা। তারপর পরের কাজ হলো ক্লোন নার্সারির ব্যাগে মাটি ভরাট করা। সব শেষের কাজটি চা বাগানে শিশু চারাগুলোতে ইরিগেশন (সেচ) দেওয়া বলে জানান তিনি।    

চা গাছের কলমপদ্ধতি সম্পর্কে এই জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক বলেন, মনে রাখবেন, প্রুনিং (কলম) আবার চা বাগানের সব সেকশনে (সুনির্দিষ্ট এলাকা) হয় না। প্রুনিঙের চার রকমের পদ্ধতি রয়েছে। যেগুলো যথাক্রমে: ১) লাইট প্রুনিং (এলপি) বা ‘হালকা কলম’। মাটি থেকে চা গাছগুলোকে ২৬ ইঞ্চি উচ্চতার মধ্যে কাটতে হবে। ২) এলপির পর ডিএসকে অর্থাৎ ‘গভীর ছাঁটাই’ এলপি দাগ থেকে ৪ ইঞ্চি উপরে কাটতে হয়। এছাড়াও রয়েছে ৩) মিডিয়াম স্কিপ (এমএসকে) অর্থাৎ ‘মধ্যম ছাঁটাই’ এবং ৪) লাইট স্কিপ (এলএসকে) বা ‘হালকা ছাঁটাই’।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এর পরিচালক মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, প্রুনিং চা গাছের সুস্বাস্থ্যের জন্য করা হয়। এটার অনেক পজেটিভ দিক আছে। আমাদের প্লাকিং (পাতা চয়ন) এর সুবিধার জন্য এটিকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় রাখতে হয়। প্রুনিঙের পদ্ধতিকে আমরা ‘ফোর ইয়ার সার্কেল’ বলি। চার বছর মেয়াদে বিভিন্ন উচ্চতায় একেক সেকশনের চা গাছগুলোকে একক সীমারেখায় কাটা হয়। এর কাটা অংশগুলো মাটিতে পড়ে মাটির ফার্টিলিটি (উর্বরতা) বাড়ায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।