সিরাজগঞ্জ: অ্যানথ্রাক্স রোগ শনাক্তকরণে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বসানো অস্থায়ী চেকপোস্টে তিনজন সার্জনের কাজ করছেন একজন পিয়ন।
ফলে যথাযথ পরীক্ষা ছাড়াই ওই চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন পার হয়ে যাচ্ছে শত শত গবাদিপশু।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ পরিচালিত এ চেকপোস্ট দিয়ে উত্তারাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার গাবতলীর উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া এসব গবাদিপশুর পরীক্ষা যথাযথ না হওয়ায় অ্যানথ্রাক্স রোগের ব্যাপক বিস্তার ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত ৩১ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস দেশের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে অ্যানথ্রাক্স পরীক্ষায় এ চেকপোস্টটি চালুর নির্দেশ দেন।
কিন্তু চেকপোস্টটিতে বেশির ভাগ সময়ে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভ্যাটেরিনারি সার্জনরা থাকেন না, থাকে না কোনো পুলিশও।
বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম থানার অদূরেই এ চেকপোস্টে লাল কাপড়ের ব্যানারে বড় বড় অরে লেখা আছে, ‘গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স রোগ পরীক্ষা সংক্রান্ত চেকপোস্ট, আয়োজনে: পুলিশ সুপার ও জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ’।
বাস্তবে বেশির ভাগ সময়ই এখানে ভেটেরিনারি সার্জন বা পুলিশের কোনো সদস্য থাকেন না। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পিয়ন বেলালকে দিয়েই চলছে চেকপোস্টের কাজ। তিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বখশিশ নিয়ে থার্মোমিটারে শুধু জ্বরের তাপমাত্রা দেখেই প্রতিদিন পার করে দিচ্ছেন শত শত গবাদিপশু।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গুটিকয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীর গাফলতির কারণে চেকপোস্ট বসানোর উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়ে এক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, উত্তারাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স রোগ শনাক্তকরণে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. হাবিবুল ইসলাম, ডা. মো. হরুনর রশীদ ও ডা. মো. নুরুল ইসলাম তালুকদারকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের কাউকেই চেকপোস্টে দেখা যায়নি।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, কেবল সিরাজগঞ্জ প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পিয়ন রেজাউল করিম বেল্লাল দুপুর ২টায় এসে শুধু জ্বর দেখে গবাদিপশুগুলো পার করে দিচ্ছেন। এর আগে সকাল থেকে গরু, মহিষ ও ছাগলবোঝাই ২০/২৫টি ট্রাক পার হয়ে গেলেও দেখার কেউ ছিল না।
এ প্রসঙ্গে বেলাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, ‘প্রতিদিন তিন শিফটে তিনটি দল ডিউটি পালন করে। আমি ২টার সময় এসে আগের দলকে পাইনি। এমনকি, আমার গ্রুপের সার্জন স্যার তার মায়ের অসুখের কারণে এখনও আসেননি। তবে সন্ধার আগেই আসবেন। ’
সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় ঘটনাস্থলে আসেন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম ও সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আব্দুল মান্নান। চেকপোস্টে সাংবাদিকদের দেখে চমকে ওঠেন তারা।
শফিকুল ইসলাম সার্জনদের দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘প্রতিদিন আট ঘণ্টা করে তিনটি দলে তিনজন সার্জন ও তিনজন কম্পাউন্ডার নিয়ে পালক্রমে দায়িত্ব পালনের কথা। কিন্তু কি কারণে তারা তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেননি সে বিষয়ে তদন্ত করা হবে। ’
দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে অধিদপ্তর বরাবর তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে বলেও সাংবাদিকদের জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘চেকপোস্টে না আছে ছাউনি, না আছে বসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। রোদ-বৃষ্টির মধ্যে একজন সার্জনের পক্ষে সারা দিন দাঁড়িয়ে থেকে দায়িত্ব পালন করা দুরূহ ব্যাপার। ’
সার্জন মো. হাবিবুল ইসলাম ও নূরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে ডা. হারুন গতকাল সন্ধ্যায় চেকপোস্টে উপস্থিত হয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, ‘ব্যক্তিগত কাজে আটকা পড়েছিলাম। তবে মোবাইলে বেলালের সঙ্গে সার্বণিক যোগাযোগ রেখেছি। ’
রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপপরিচালক মো. ইব্রাহীম হোসেন মোবাইল ফোনে মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টায় বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, ‘ভ্যাটেরিনারি সার্জনদের দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি। ’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা থেকে এ সার্জনদের চেকপোস্টে পাঠানো হয়। তারা ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না বলে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। ’
‘ইতোমধ্যেই আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এছাড়া আমি নিজেই পাবনা হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু চেকপোস্ট দেখার জন্য আসছি’, বলেন ইব্রাহিম হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১০