ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাঁশ-বেতের সামগ্রীতে জমজমাট পোড়াদহ মেলা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০
বাঁশ-বেতের সামগ্রীতে জমজমাট পোড়াদহ মেলা

বগুড়া: মাঘের শেষ বুধবার প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী মেলা ‘পোড়াদহ’। প্রায় চারশো বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা।

মেলা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। সেই ঐতিহ্য ধারণ করে এ এলাকায় সবাই মেতে ওঠেন বাধভাঙা উৎসব-উচ্ছ্বাসে।

মেলা উপলক্ষে ওই এলাকায় উৎসবের আমেজ থাকে সপ্তাহব্যাপী। নতুন জামাই-বউ ও স্বজনরা সকলে মিলে এ উৎসব করেন।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) পোড়াদহ মেলাজুড়ে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভীর। বড়-বড় মাছ, মিষ্টিসহ নানান সামগ্রী পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।

তবে সবার নজর কাড়ছে বাঁশ ও বেতের তৈরি নানান সামগ্রী। মেলার পূর্বদিকে তাকালেই চোখে পড়বে বাঁশ ও বেতের তৈরি দৃষ্টিনন্দন সামগ্রীর পসরা। বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি পণ্য।

মেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ী শেরপুর উপজেলার পল্লব আচার্য। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অনেক দূর থেকে মেলায় এসেছি। বাঁশ ও বেতের তৈরি গ্রামীণ সামগ্রী নিয়ে এসেছি। যুগের অনেক পরিবর্তন এসেছে, তবুও বাপ-দাদার শিখিয়ে যাওয়া পেশা ছাড়তে পারছি না। তাই বাঁশ ও বেতের তৈরি নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছি।
পোড়াদহ মেলায় বাঁশ ও বেতের তৈরি নানান সামগ্রী, ছবি: বাংলানিউজসুকুমার রায়, দুদু মিয়া, রণঞ্জিতসহ একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও মেলায় পসরা সাজিয়েছি। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। আশা করছি, বেচা-বিক্রির ভালোই হবে। এ মেলায় বিক্রি ভালোই হয়।

মেলায় আগত ক্রেতা হামিদ মিয়া, কাদের ও আজাহান উদ্দিন বলেন, মেলায় বাঁশ ও বেতের তৈরি নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি পণ্য চোখে পড়ার মতো। বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী ‘পোড়াদহ’ মেলায় বাঙালির হাজার বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্যবহনকারী বাঁশ ও বেতের তৈরি এ সামগ্রীগুলোর দেখা মিলে প্রতি বছরই।

বাহারি মিষ্টান্ন সামগ্রী এ মেলার আরেক আকর্ষণ। মাছ আকৃতির মিষ্টি, রসগোল্লা, সন্দেশ, জিলাপি, নিমকি, তিলের নাড়ু, খই, শুকনা মিষ্টি পাওয়া যায়। দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের মিষ্টি পোড়াদহ মেলার অন্যতম আকর্ষণ।
 
মেলায় বাহারি ডিজাইনের কসমেটিকস, খেলনা, গিফট সামগ্রী, চুরি, কানের দুল, মালা, কাজল, মেকআপ বক্স, ব্যাট, বল, ভিডিও গেমসসহ নানা ধরনের প্রসাধনী ও খেলনা সামগ্রী পাওয়া যায়। এছাড়া এ মেলায় পাওয়া যায় কাঠের, স্টিল ও লোহার বিভিন্ন আসবাবপত্র।
পোড়াদহ মেলায় বাঁশ ও বেতের তৈরি নানান সামগ্রী, ছবি: বাংলানিউজপ্রায় চারশো বছর আগের ঘটনা। মেলাস্থলে ছিল একটি বিশাল বটবৃক্ষ। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। এক র্যায়ে স্থানটি পূণ্যস্থানে পরিণত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে।

প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার ওই স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। সমাগত হন দূর-দূরাস্তের ভক্তরা। কালের আবর্তে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে।

এভাবে গোড়াপত্তন ঘটে পোড়াদহ মেলার। ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে সবধর্মের মানুষের মেলবন্ধনে পরিণত হয় এ মেলা। মেলাটি একদিনের। তবে উৎসবের আমেজ থাকে সপ্তাহব্যাপী। নতুন জামাই-বউ ও স্বজনরা মিলে এ উৎসব করেন।

** বগুড়ায় ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা বুধবার

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০
কেইউএ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad