ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘ঘুমের মধ্যেই সব শেষ’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২০
‘ঘুমের মধ্যেই সব শেষ’

ঢাকা: ইট-কাঠের এ শহরে নিন্মবিত্ত মানুষদের আবাসস্থল বস্তি আবারো পুড়ে ছাই হলো। ভোরের আলো ফোটার আগেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে বনানীর টিঅ্যান্ডটি বস্তি। ঘুমের মধ্যেই আচমকা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চিৎকারে সবাই প্রাণ হাতে বের হতে পারলেও রক্ষা হয়নি শেষ সম্বলটুকু। কারো কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সবকিছুই।

শনিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) ভোর পৌনে চারটার দিকে রাজধানীর বনানীর টিঅ্যান্ডটি বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের ২২টি ইউনিটের চেষ্টায় ভোর পাঁচটায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

পুরোপুরি আগুন নির্বাপনে আরো প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। ততোক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে যায় প্রায় দুইশ ঘর।

পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নিজের অবশিষ্ট কিছু খোঁজার চেষ্টা করছিলেন মাইমুনা বেগম। স্বামী ও এক মেয়েসহ গত এক বছর ধরে এই বস্তিতে বসবাস করছিলেন তিনি। তার স্বামী মহরম ভ্যানগাড়িতে করে বিভিন্ন এলাকার ময়লা সংগ্রহের কাজ করেন।

তিনি বলেন, কষ্টের টাকা জমাইয়া ঘরের সবকিছু কিনছিলাম। ঘরে কিছু ক্যাশ টাকাও আছিলো। ঘুমের মধ্যেই আগুন আগুন চিল্লানি শুইনা কোনোমতে জানডা লইয়া বাইর হইছি। পরনের কাপড়টা ছাড়া ঘরের কিছু বাইর করতে পারি নাই। সব পুইড়া ছাই হইয়া গেছে।

পিকআপ চালক বাবু মিয়ার চার বছরের সাজানো সংসার ছিলো এই বস্তিতে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দিন কেটে যাচ্ছিলো তার। আচমকা এই অগ্নি দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন ইট-কাঠের শহরে মাথাগোঁজার ন্যূনতম ঠাঁই।

তিনি বলেন, মানুষের চিৎকার শুইনা ঘুম ভাঙছে। এর মইধ্যেই দেখি ঘরের পেছনে আগুন। বউ-পোলাপাইন নিয়া কোনোরকম দৌড়াইয়া বাইর হইছি। এহন আছে বলতে খালি জানডাই। আর কিছু নাই, সব পুইড়া গ্যাছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরের মধ্যে বসে আছে দুই শিশু/ছবি- জি এম মুজিবুরনিজের ঘরের পোড়া আসবাবের অবশিষ্টগুলো উল্টে-পাল্টে দেখছিলেন আর খানিক বাদে কাঁদছিলেন রোকসানা আক্তার। তিনি জানান, তিন মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে তার প্রায় পাঁচ বছরের সংসার এই বস্তিতে। তিল তিল পরিশ্রমে গড়া এ সংসারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব আসবাবই ছিলো। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেলো।

এ অবস্থায় সব হারানো এ বস্তিবাসী আশপাশে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছেন। সবার চোখে পানি আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হতাশা।

এদিকে, এ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থ ৪৫০টি পরিবারের তালিকা করেছে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। প্রত্যেককে প্রাথমিকভাবে ৩০ কেজি চাল ও নগদ দুই হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম।

তবে প্রাথমিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। সংশ্লিষ্টদের ধারনা, গ্যাস লাইন লিকেজ বা ইলেকট্রিক শটসার্কিট থেকে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন জানান, পানির স্বল্পতা আর সরু রাস্তার কারণে আগুন নেভাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। পানির গাড়িগুলো ঠিকমতো বস্তির ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। আগুনে কোনো হতাহত কিংবা নিখোঁজের খবর পাওয়া যায়নি।

একইসঙ্গে আগুনের প্রকৃত কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২০
পিএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ