ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ক্রমশই বড় হচ্ছে গ্যাসকূপের গর্ত, ঝুঁকিতে স্কুলভবন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২০
ক্রমশই বড় হচ্ছে গ্যাসকূপের গর্ত, ঝুঁকিতে স্কুলভবন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: নলকূপের গর্ত থেকে অবিরত বের হওয়া গ্যাসের কারণে হুমকিতে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কসবার বায়েক ইউনিয়নের শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় ভবন ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এরই মধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। তবে ওই কূপ থেকে অবিরত গ্যাস বের হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে বড় হয়ে যাচ্ছে নলকূপের গর্ত।

এদিকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আশপাশের চুলায় আগুন না জ্বালানোর পরামর্শ দিয়ে সতর্ক করে দিয়েছে।  

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি বায়েক ইউনিয়নের শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে নলকূপ বসানোর কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ।

পরে ৫ ফেব্রুয়ারি প্রায় সাড়ে ৫শ ফিট খনন করার পর হঠাৎ করে বিকট শব্দে গ্যাস উঠতে থাকে সেই কূপ থেকে। এরপর থেকে গ্যাসের সঙ্গে পানি-বালি অনবরত উঠতে থাকে ও প্রচণ্ড বুদবুদ সৃষ্টি হয়ে সেখানে ৮০/৯০ ফুট উচ্চতায় পানি-গ্যাস বের হতে শুরু করে। পানি ও গ্যাসের প্রচণ্ড চাপে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার গাছপালা কূপের গর্তে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও হুমকির মুখে রয়েছে বিদ্যালয়ের মূলভবন। মাটির নিচ থেকে বের হওয়া বালি স্কুল মাঠসহ পাশের জমি এবং বাড়িঘরে ছড়িয়ে পড়ছে। আশপাশের এলাকায় আগুন দিয়ে রান্না না করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। এতে বেশ দুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয়রা। কেউ কেউ শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়ায় শিক্ষার্থীরাও পড়েছে ক্ষতির মুখে। প্রতিদিন ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার ভিড় সামলাতে পুলিশ, বিজিবিসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।  

স্থানীয় বাসিন্দা আলামিন মিয়া বলেন, পাইপ ৫শ ফুট বসানোর পর এভাবে বালু, গ্যাস উঠছে। এটা নিয়ে আমরা খুব ভয়ের মধ্যে আছি, ইতোমধ্যে টিউবয়েল, গাছ ধেবে গেছে, এখন দেখছি ভবনও ধেবে যাবে। ভয়ে আমরা রান্না করার জন্য আগুনও জ্বালাতে পারছি না।  

স্কুলছাত্র রায়হান মিয়া বলে, তীব্র গ্যাসের কারণে স্কুলের মাঠ, কক্ষ সব বালিতে তলিয়ে গেছে। ক্লাস করার মত কোনো পরিবেশ নাই। আমাদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে।

বিদ্যালয়ে পাশের বাড়ির বাসিন্দা নাছিমা আক্তার বলেন, এ সমস্যার কারণে প্রশাসন মাইকিং করে আগুন জ্বালাতে নিষেধ করেছে। তাই শুকনা খাবার খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। বাচ্চাদের নিয়ে কষ্ট করতে হচ্ছে। আমরা এ অবস্থা থেকে উত্তরণ চাই।
 ...
সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে আতঙ্কের কথা উল্লেখ করে শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আল মামুন ভূইয়া বাংলানিউজকে জানান,  অনির্দিষ্টকালের জন্য বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রাশেদুল কাউসার ভূইয়া জীবন বলেন, উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।  

এদিকে, বাপেক্সের ভূতত্ত্ব বিভাগের মহা-ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন জানান, গ্যাসের ধরণ পরীক্ষার পর করণীয় নির্ধারণ করবেন তারা। এজন্য গ্যাসের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। পাশাপাশি তিনি সবাইকে সর্তক থাকার পরামর্শ দেন।  

সম্প্রতি জেলার কসবা ও নবীনগরের বিভিন্ন স্থানে নলকূপ বসানোর সময় এভাবে গ্যাসের উদগীরণ লক্ষ্য করা গেছে। তাই দ্রুত এ বিষয়টির সমাধানসহ গ্যাসের মজুদ পরীক্ষা করতে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২০
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।