ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির অ্যাডভোকেসি সভা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২০
মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির অ্যাডভোকেসি সভা

ঢাকা: এডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর মহাখালীতে সচেতনতামূলক অ্যাডভোকেসি সভার আয়োজন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

বৃহস্পতিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) ডিএনসিসির উদ্যোগে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) সহযোগিতায় এ অ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়।  

মূলত এ অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে অবহিতকরণের মাধ্যমে এডিস মশা ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রমে সবার অংশগ্রহণের উদ্দেশে এ সভার আয়োজন করা হয় বলে জানায় ডিএনসিসি।


 
সভার শুরুতে এডিস মশার উৎপত্তিস্থল, বংশবিস্তার, রোগ-জীবাণু বহন, মানুষকে আক্রান্ত করাসহ বিশ্বে ডেঙ্গু রোগের সামগ্রিক চিত্র ও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন সিডিসির সার্ভিলেন্স মেডিক্যাল অফিসার ডা. খাদিজা সুলতানা।  

এতে দেখানো হয়, ১২৬টি দেশে ইতোমধ্যে ডেঙ্গু জ্বর ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে ২৫০ কোটির অধিক মানুষ, অর্থ্যাৎ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের মধ্যে ১০টি দেশেই ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে, এসব দেশে প্রায় ৫২ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে।  
 
সিডিসির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, গত আগস্ট মাসে দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। সারা দেশে এ এক মাসেই প্রায় ৫৩ হাজার রোগী ভর্তির রেকর্ড করা হয়, যার অধিকাংশই ছিল রাজধানীতে। জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এ তিন মাসে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব সর্বাধিক ছিল এবং ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরও একই সময়ে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে।
 
অ্যাডভোকেসি সভায় এডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির বিভিন্ন কার্যক্রম পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার। তিনি এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ২০১৯ সালে ডিএনসিসির সামগ্রিক কার্যক্রম এবং ২০২০ সালে চলমান ও আসন্ন এডিস মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির পরিকল্পনা তুলে ধরেন।  

তিনি বলেন, এ রোগ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। সে লক্ষ্যে আমরা গত বছর বিভিন্ন আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে একাধিক অবহিতকরণ সভা, সচেতনতামূলক পদযাত্রা ও পথসভা, বাউল সংগীত, জাতীয় পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি, সচেতনতামূলক বার্তা, টেলিভিশনে টিভিসি প্রচার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করেছি।  

এছাড়া ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম দেশের জাতীয় পত্রিকার সম্পাদক ও টেলিভিশন মালিক ও বার্তা প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন, যা এ বছরও অব্যাহত থাকবে।  

গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বলেন, গত বছর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভুতপূর্ব সাড়া পাওয়া যায়। গত বছর শিক্ষার্থীরা নিজেদের বাসা-বাড়ি পরিষ্কার করার পাশাপাশি প্রতিবেশীর বাসা-বাড়িও পরিদর্শন করে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করেছে। আমরা এবারও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একই কার্যক্রম প্রত্যাশা করছি।  
 
তিনি বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম আরও বেগবান করতে এরইমধ্যে ২০০টি ফগার মেশিন, ২৩৮টি পালস ফগমেশিন, ১৫০টি হার্টসন হস্তচালিত মেশিন, ৩৪০টি প্লাস্টিক হস্তচালিত মেশিন, দু’টি ভেহিকল মাউন্টিং ফগার মেশিন, ১০টি মোটরসাইকেল ফগার ও হস্তচালিত মেশিন, ২০টি মিস্ট ব্লোয়ার/পাওয়ার স্প্রে মেশিন ক্রয়পূর্বক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি ভেহিকল মাউন্টিং ফগার মেশিন ক্রয়ের পরিকল্পনা আছে। আমরা বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রায় এক হাজার বিঘা জলাশয়/ডোবা/পুকুরের জলজ আগাছা ও কচুরিপানা পরিষ্কার করেছি, যা এখনও চলমান।
 
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, আমরা গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাই। আমরা এখন জানি কোথায় এডিস মশা বংশবিস্তার করে, কোথায় এদের ঘনত্ব বেশি, কোন বয়সের মানুষ বেশি আক্রান্ত হয় ইত্যাদি। তাই এসব তথ্য-উপাত্ত কাজে লাগিয়ে আমরা বছরের শুরু থেকেই পুরোদমে কাজে নেমেছি। ২০২০ সাল বিভিন্নভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এ বছরকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষ যাতে এডিস মশার উপদ্রব ছাড়াই বছরব্যাপী এ উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে পারে সেজন্য আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।
 
এ সময় সভায় উপস্থিত বিভিন্ন সোসাইটির প্রতিনিধিরা ডেঙ্গু মোকাবিলায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করাসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করার ওপর গুরুত্বারোপ করতে ডিএনসিসির প্রতি আহ্বান জানান।
 
ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিয়াকত আলী, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সফিউল্লাহ, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মঞ্জুর, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৈমুর রেজা, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ৮ এর কাউন্সিলর মিতু আক্তার, বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ও সোসাইটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তি, মসজিদের ইমাম, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২০
এসএইচএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।