ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩২ বছর কান পরিষ্কার করছি

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২০
প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩২ বছর কান পরিষ্কার করছি কাস্টমারের কান পরিষ্কার করছেন হাতুড়ে চিকিৎসক গাজী। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা:  ‘দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে কাঁধে বেল্টের সাহায্যে দোকান সাজিয়ে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে মানুষের কান পরিষ্কার করে আসছি। এই পেশা যখন কাজ শুরু করি, তখন মানুষ কান পরিষ্কারের পর এক টাকা দিতেন। এখন মানুষ ৫০ টাকা দেয়। এই পেশা ঐতিহ্যবাহী পেশা। পাকিস্তান আমল থেকেই এই পেশার প্রচলন। আমার গোষ্ঠীর মধ্যে এই পেশায় আমি একাই আছি। দেশের বাড়ির প্রতিবেশীরা অনেকেই এ পেশায় ছিলেন। তাদের দেখাদেখি আমিও এই পেশায় এসেছি। তবে এখন এর সংখ্যা কমে গেলেও রাস্তা-ঘাটে আমাদের মতো অনেককেই দেখা যায়। কাঁধে বেল্টের সাহায্যে দোকান সাজিয়ে কাস্টমারের কান পরিষ্কার করে থাকে।’

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলানিউজকে কথাগুলো বলছিলেন চাঁদপুর হাইমচর উপজেলার ছোট লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা ও হাতুড়ে কানের চিকিৎসক গাজী। তিনি থাকেন ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকায়, তার তিনটি মেয়ে আছে।

তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালে বন্যার কিছুদিন পরে আমি ঢাকায় আসি। চকবাজার মৌলভীবাজার তাজমহল সিনেমা হলে আমাদের জেলার অনেক মুরুব্বিরা এই পেশায় কাজ করতেন। মানুষের কান পরিষ্কার করে সংসার চালিয়েছেন তারা। তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এ পেশায় নিয়োজিত হই। কাস্টমারের কান পরিষ্কার করছেন হাতুড়ে চিকিৎসক গাজী।  ছবি: বাংলানিউজপ্রশিক্ষণের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশিক্ষণটা হলো কীভাবে মানুষের কানে তুলা ঢুকাতে হয়। কীভাবে আরাম দিয়ে মানুষের কান পরিষ্কার করতে হয়।

তিনি আরও বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মানুষের কান পরিষ্কার করি। আগে বিভিন্ন পার্কে কাস্টমার পেতাম, চাহিদা ছিলো বেশি। পার্কে বসে বসে কান পরিষ্কার করি। এখন পার্কে লোকের সংখ্যা কমে গেছে। এজন্য বিভিন্ন এলাকায় জনগণের সমাগম বেশি হয়। সেখানে ঘুরে ঘুরে কাস্টমার খুঁজি।

বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল চত্বরে গাজীকে দেখা যায়, তার সরঞ্জাম নিয়ে এক কাস্টমারের কান পরিষ্কার করছেন। তার কাঁধে ঝোলানো ছোট একটি ব্যাগ। তার মধ্যে ছোট-ছোট রঙ্গিন শিশি, কিছু তুলা ও আর কিছু সরঞ্জাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজী বলেন, দোকান না সাজিয়ে বেরোলে কেউ কান পরিষ্কার করবে না। আর এই বোতলগুলোর ভেতরে তেল-পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। চিকন একটি শিকের মাথায় তুলা লাগিয়ে বোতলে থাকা তেল-পানি মিশিয়ে কানের ময়লা পরিষ্কার করে থাকি। আমি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কান পরিষ্কার করে থাকি। যারা প্রশিক্ষণ নেয়নি তারা এই পেশায় আসলে মানুষের কানে ক্ষতি হবে। চিকিৎসকরা বলে থাকেন আপনাদের হাতে কান পরিষ্কার করলে নাকি মানুষের ক্ষতি হয়। এটা আমার মতে ভুল, আমরা প্রশিক্ষণ নিয়েই এ পেশায় নেমেছি।

গাজীর কাস্টমার মেহেদী হাসান, তিনি পেশায় গাড়িচালক। গাজীর কাছে ২০ মিনিট ধরে কান পরিষ্কার করালেন মেহেদী।

মেহেদীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক বছর ধরে আমি মিনিমাম ৪০ থেকে ৫০ বার কান পরিষ্কার করিয়েছি।

খোঁচাখুঁচিতে কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয় আপনি জানেন না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে কান পরিষ্কার করতে খুবই আরাম লাগে। তাই তো ২০ মিনিট ধরে কান পরিষ্কার করালাম। পরে তাকে আমি ৫০ টাকা দিয়েছি, তিনি খুশি আমিও খুশি।

ঢামেক হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দেবেশ চন্দ্র তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, যারা কান পরিষ্কার করে তাদের কাছে একটি চিকন শিক থাকে, সেটি জীবাণুমুক্ত নয়। খোঁচাখুঁচির কারণে পর্দা ফেটে যেতে পারে। কানে ইনফেকশন হতে পারে। যে মানুষগুলো ওদের দ্বারা কান পরিষ্কার করিয়েছেন, তাদের অবশ্যই কানে বিভিন্ন সমস্যা হবেই।

বাংলাদেশ সময়: ১১২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২০
এজেডএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।