ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দক্ষিণ সিটির ১৮ ওয়ার্ডে নামছে অত্যাধুনিক ৯ রোড সুইপার

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২০
দক্ষিণ সিটির ১৮ ওয়ার্ডে নামছে অত্যাধুনিক ৯ রোড সুইপার

ঢাকা: নতুন যুক্ত হওয়া ১৮ ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ইউরোপিয়ান মানের ৯টি অত্যাধুনিক ‘মেকানিক্যাল রোড সুইপার’ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বর্তমানে রোড সুইপার নেই। তিনটি ছিল বর্তমানে এগুলো বিকল হয়ে পড়ে আছে।

ঢাকার সড়কে ময়লায় ৯৭ শতাংশই বালু। সড়কে জলাবদ্ধতার পেছনে অন্যতম কারণ ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া।

আর এর জন্য দায়ী বালু জমে যাওয়া। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা আছেন, তবে তাদের মাধ্যমে ঝাড়ু দিয়ে এই বালু ঠিকভাবে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। সেজন্য নগরকে পরিচ্ছন্ন করতে এই অত্যাধুনিক যন্ত্র নামানোর উদ্যোগ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যুক্ত হওয়া নতুন ওয়ার্ডে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাযর্ক্রমের অবস্থাও বেহাল। এসব এলাকায় নামানো হবে ইউরোপিয়ান মানের রোড সুইপার। ইউরোপিয়ান মানের বা ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে যে মানের রোড সুইপার ব্যবহার করা হয় নতুন ১৮টি ওয়ার্ডেও একই মানের রোড সুইপার ব্যবহার করা হবে।

দুটি ওয়ার্ডের জন্য একটি রোড সুইপার ব্যবহার করা হবে। এই জন্য নয়টি রোড সুইপার কিনতে ৫৪ কোটি টাকা খরচ করা হবে। ফলে প্রতিটা রোড সুইপার কেনা বাবদ প্রস্তাবিত ব্যয় ৬ কোটি টাকা। এছাড়াও ৯০০টি ডাস্টবিন কিনতে ৯০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যই আসছে রোড সুইপার।
 
সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য  সরঞ্জাম কেনা হবে। ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে নতুন অন্তর্ভূক্ত ১৮টি নতুন ওয়ার্ডে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে ৬১৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। তবে রোড সুইপার তার আগেই কেনা হবে।  ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি বড় জেড অ্যান্ড সাকার ও ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ছোট জেড অ্যান্ড সাকার কেনা হবে।
 
ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর জাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডের জন্য ৯টি রোড সুইপার কেনা হবে। এগুলো ইউরোপিয়ান মানের হবে। নতুন এলাকার স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা, মাটি, পানি ও বায়ু দূষণের মাত্রা কমানোর জন্যই এমন উদ্যোগ। বর্জ্য পরিবহন ও অপসারণের লক্ষ্যে পরিবহন ভেহিকেল এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে নতুন উদ্যোগে নতুন যুক্ত হওয়া এলাকায় পুরোদমে কাজ করতে পারবো।
 
ডিএসসিসির নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ড ইউনিয়ন পরিষদ থাকাকালীন সেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম গড়ে ওঠেনি। সংস্থাটির আওতাভুক্ত হওয়ার পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সেবা দেওয়া সিটি করপোরেশনের অন্যতম দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংস্থাটির জনবল স্বল্পতার কারণে ও প্রয়োজনীয় গাড়ি  না থাকায় নিজস্ব অর্থায়নে নতুন অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ডগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সেবা দিতে সক্ষম হচ্ছে না ডিএসসিসি।

এসব সমস্যা নিরসনে বিশাল উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও অবকাঠামো উন্নয়ন। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি ৮৯ লাখ ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রকল্পটির যান যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোর মধ্যে ১৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। ২টি জিপ সংগ্রহ করা হবে। ২টি কার, ১টি মাইক্রোবাস, ২৩টি মোটরসাইকেল, ১৮টি রিয়ার লোডিং কম্পেক্টর, ৩০টি রিয়ার লোডিং কম্পেক্টর, ১৫টি হুক লোডিং কনটেইনার, ২১ কনটেইনার ক্রয় করা হবে।  
 
এছাড়া ১৮টি ড্রাম ট্রাক, ১৮০টি রিকশা ভ্যান, ১৮০০টি হ্যান্ড ট্রলি, ৩৬০টি ওয়েস্ট বিন (ফাইবার গ্লাস) ও ৯০০টি ওয়েস্ট বিন, ৯টি রোড সুইপার, ২টি জেট অ্যান্ড সাকার (বড়), ২টি জেট অ্যান্ড সাকার (ছোট), ৩৬০টি কনটেইনার, ৯টি ব্যাকহো লোডার, ২টি এস্কাভেটর লংবুট (বড়), ২টি এস্কাভেটর লংবুট (ছোট), ৪টি বুলডোজার, ৪টি পে-লোডার, ২টি টায়ার ডোজার, ২টি ফাইয়ার ফাইটিং ভেহিকল, ১টি ইনসেকটিসাইট সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া ১৮টি এসটিএস নির্মাণ, ১৮ অফিসে ওয়ার্ড নির্মাণ, ১৮টি গভীর নলকূপ সংগ্রহ করা হবে। ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি কার ওয়াশ কেনা হবে। প্রকল্পের আওতায় ১৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৫৪ কোটি টাকা।
 
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অনেক কাজের মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বিভক্তির পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনর ৫টি জোন ও ৫৭টি ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত । ২০১১ সালের আদশুমারি অনুযায়ী এসব এলাকার মোট জনসংখ্যা ৩৯ লাখ ৫৭ হাজার ৩০২ জন। এছাড়া ঢাকা শহরে ফ্লোটিং বা ভাসমান জনসংখ্যা মোট সংখ্যার ২০ শতাংশ বলে ধরা হয়। এই হিসেবে মোট ভাসমান লোকের সংখ্যা ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬২৮ জন।
 
অতি সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আয়তন বেড়েছে। নতুন ৮টি ওয়ার্ড ও ৫টি জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। নতুন এলাকার আয়তন ৬৪ দশমিক ১৭ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ১০ লাখ ৫৫ হাজার।
 
নতুন অন্তর্ভূক্ত এলাকার রাস্তা ড্রেন পরিষ্কার করার মত জনবল নেই। তাছাড়া বর্জ্য সংগ্রহ করে ল্যান্ডফিলে পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাক ও ভেহিকল নেই। ট্রাক বা প্রয়োজনীয় সংখ্যক বর্জ্যবাহী গাড়ি না থাকার কারণে বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। নতুন ট্রাক বা বর্জ্যবাহি গাড়ি এবং ল্যান্ডফিলের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা প্রয়োজন। নতুন এলাকার জন্য বর্জ্যবাহী গাড়ি কেনা এবং রাস্তা ও ড্রেন পরিষ্কার করার মতো জনবলও নেই।  
 
ফলে নতুন এলাকায় স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি বাড়ছে। বহু বছর ধরে প্রতিদিন জমা হওয়া শত শত টন বর্জ্য বিভিন্ন ডোবা-নালায়, রাস্তার পাশে অপসারণ করা হচ্ছে। ফলে মাটি, পানি ও বাতাস দূষিত হচ্ছে। যত্রতত্র বর্জ্য অপসারণের কারণে পানিও দূষিত হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসা ডিএনডি খালের উভয় পাশে বর্জ্য অপসারণ করায় খালের পানিও দূষিত হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এই জন্য অত্যাধুনিক রোড সুইপার কেনাসহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২০
এমআইএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।