ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মোড়ে মোড়ে শীতের পিঠার ঘ্রাণ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২০
মোড়ে মোড়ে শীতের পিঠার ঘ্রাণ পিঠার দোকান। ছবি: বাংলানিউজ

নরসিংদী: সন্ধ্যায় নরসিংদীর ভেলানগর ওভারব্রিজের নিচে মামার ভাপা পিঠার দোকান। চারটি মাটির চুলা, তাতে চারটি ভাপা পিঠার পাতিল বসানো। পিঠা তৈরির বাটিতে চালের গুড়া দিয়ে তার ওপর খেজুরের গুড়, নারকেল, কিসমিস, বাদাম, মোরব্বা ছিটিয়ে দিয়ে ভাপ দিচ্ছিলেন দোকানি। তিন থেকে চার মিনিটের মধ্যেই চুলায় দিয়ে নামানো হচ্ছে ধোঁয়া উঠা গরম গরম ভাপা পিঠা। তৈরি হতেই পিঠাগুলো সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রেতা-পিঠাপ্রেমীদের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন এক তরুণ। আরেক তরুণ পাশে বসে বসে ভোজনরসিকদের বাড়ির জন্য পার্সেল তৈরি করছিলেন। পৌষের কনকনে শীতের সন্ধ্যায় এ চিত্র প্রতিদিনই দেখা যায় মামার ভাপা পিঠার দোকানে।

পৌষের কনকনে শীতে ভোজনরসিকদের জন্য মামার ভাপা পিঠার দোকানের মতো এমন শতাধিক পিঠার দোকান রয়েছে শহরের আনাচে-কানাচে। সন্ধ্যা হলেই প্রতিটি পিঠার দোকানেই চলে পিঠা বিক্রির ধুম।

দোকানগুলোতে মধ্যরাত অব্দি খোলা থাকে।

শীতের পিঠার স্বাদ নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না অনেকে। তাই নরসিংদী শহরের হেমেন্দ্রসাহার মোড়, রেলস্টেশন এলাকা, শহরের বটতলা এলাকা, বাণিয়াছল মোড়, হাজীপুর ও তার আশ-পাশের বিভিন্ন এলাকায় পিঠার দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ই তার প্রমাণ। ভাপা পিঠা।  ছবি: বাংলানিউজমঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, সূর্য ডোবার পরপরই দোকানিরা তাদের পিঠার পসরা বসান রাজপথে কিংবা পাশের অলি-গলিগুলোতে।

চুলায় আগুন জ্বেলে একের পর এক পিঠা বানাতে থাকেন তারা। অন্যদিকে ক্রেতারা গরম গরম পিঠা সাবাড় করতে থাকেন। এসব দোকানে পাঁচ টাকায় চিতই, ২০ টাকায় ডিম পিঠা ও ১০ থেকে ১০০০ টাকায় ভাপা ও পাটিসাপটা পিঠা পাওয়া যায়। চিতই পিঠার সঙ্গে সরষে, ধনেপাতা, মরিচবাটা বা ঝাল শুঁটকির ভর্তা বিনামূল্যে মেলে। কেউ কেউ বাড়ির জন্য ৫ থেকে ২০টা কিংবা ৫০ টাকা করে পিঠা নিয়ে যান এসব দোকান থেকে।

ওই পিঠা দোকানি মালেক মিয়ার বাংলানিউজকে জানান, তার পিঠার খ্যাতি পুরো জেলাজুড়ে। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে পিঠা খাওয়ার জন্য তার দোকানে লোক আসে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করেন তিনি। সন্ধ্যা থেকেই দোকানে ভিড় বাড়তে থাকে। দোকানে ২০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত পিঠা পাওয়া যায়। তবে ক্রেতাদের কাছে ১২০ ও ১৫০ টাকার পিঠার চাহিদা বেশি। প্রতিদিন দোকানে ১৫ হাজার টাকার মতো পিঠা বিক্রি হয়।

শিবপুর উপজেলার কারারচরের বাসিন্দা নয়ন খান জানান, অন্যান্য দোকানের তুলনায় মামার পিঠার স্বাদ ভিন্ন। এর কারণে প্রায় সময়ই তারা বন্ধুদের নিয়ে মামার দোকানে পিঠা খেতে আসেন। ভাপা পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন পিঠাপ্রেমীরা।  ছবি: বাংলানিউজহাজীপুর মাঝি পাড়ার সজলী রানি দাস জানান, সাংসারিক কাজের পাশাপাশি তিনি এ পেশা ধরে রেখেছেন। সীমিত খরচে ভালো লাভের আশায় প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করেন। প্রতিদিন ১২০০ টাকা খরচ করে তিনি প্রায় ৭শ টাকা লাভ করেন। এ ব্যবসা করে তিনি মোটামুটি ভালোভাবে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভোজনরসিকদের মধ্যেও শীতের পিঠা নিয়ে উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী সিদ্দিকা কবীর জানান, কাজের চাপে তার বাড়িতে পিঠা বানানোর সময় হয় না। তাই শীতের পিঠার স্বাদ নিতে অস্থায়ী দোকান থেকে তিনি পিঠা কিনেন।

স্বাদে গন্ধে অনেকটাই বাড়ির মতন। তাই খেতেও ভালো লাগে বলে যোগ করেন ওই দোকানি।

নরসিংদী ইন্ডিপেন্ডেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধা জানান, পিঠা-পুলির দেশ বাংলাদেশ। আজকের ব্যস্ত জীবনে শহরের ইট-কাঠের খাঁচায় আর সেই গ্রামের মেঠোপথ ধরে ঝাপসা কুয়াশায় পাওয়া যায় না সকালের খেজুরের রস। তবে নাড়ির টান যে আজও অনুভূত হয় সংস্কৃতির তরে। তাই শহরবাসীর পিঠার চাহিদা মেটাতে অলি-গলিতে, রাস্তার মোড়ে, বাসস্ট্যান্ড ও বাজারে বসেছে ছোট ছোট পিঠার দোকান। পিঠার দোকানে প্রভাবিত হয়ে ক্রমেই আমাদের নিজ বাড়িতে পিঠা তৈরির ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। পিঠা আমাদেরই ঐতিহ্য, আমাদেরই সংস্কৃতি। এই ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা তাই আমাদেরই করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad