ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফসলি জমিতে ইটভাটা, আশঙ্কায় কৃষক

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২০
ফসলি জমিতে ইটভাটা, আশঙ্কায় কৃষক

লালমনিরহাট: কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে ইটভাটা।কৃষকরা এ ভাটা বন্ধ করতে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেও প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

অভিযোগে প্রকাশ, উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের নামুড়ি চন্দ্রপুর গ্রামের বারবিষার দোলায় বছরে তিনটি বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন স্থানীয় ৪/৫টি গ্রামের কয়েকশ কৃষক পরিবার। কৃষকদের চাষাবাদে সেচ সুবিধা দিতে বারবিষার দোলায় একাধিক সেচ পাম্প স্থাপন করেছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

প্রতিবছর তিনটি ফসল ঘরে তুলে বেশ সুখেই ছিলেন কৃষকরা।  

হঠাৎ চলতি মাসে সেই বারবিষার দোলার নামুড়ি চন্দ্রপুর গ্রামে জনৈক সালামের এক একর জমি চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে একটি ইটভাটা নির্মাণের কাজ শুরু করেন লালমনিরহাট শহরের নামাটারী এলাকার ইট ব্যবসায়ী এন্তাজ আলী। পার্শ্ববর্তী জমির মালিকদের না জানিয়ে কৃষকদের জমির ওপর ভাটার মাটি ফেলে স্তুপ করছেন ভাটা মালিক। ফলে এসব কৃষক চলতি ইরি-বোরো চাষাবাদ করতে পারছেন না।

ফসলি জমির ওপর ইটভাটা নির্মাণের প্রতিবাদ এবং ভাটাটি বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে স্থানীয় কৃষকরা লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে দুইটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দায়েরের সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও কোনো সুফল না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষিরা।  

অপরদিকে ভাটার নির্মাণকাজ চলমান থাকায় চলতি ইরি-বোরো চাষাবাদসহ আগামী দিনে ভাল ফসল পাওয়া নিয়েও শঙ্কিত কৃষকরা।  

পশ্চিম ভেলাবাড়ি গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম মিঠু বাংলানিউজকে বলেন, বারবিষার দোলার জমিতেই চলে আমাদের পুরো বংশের সব পরিবার। ভাটার পাশেই আমাদের ৬০ বিঘা জমিতে বছরে তিনটি ফসলের চাষ হয়। ইরি-বোরোতে প্রতি শতাংশে এক মণের বেশি ধান ফলে। এমন জমিতে ইটভাটা করায় আগামীতে ফসলহানির আশঙ্কা করে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। ভাটা মালিক কোনো কর্ণপাত না করে চালিয়ে যাচ্ছে নির্মাণকাজ।

জেলা প্রশাসককে দেওয়া অভিযোগপত্র। নামুড়ি চন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক সোবহান আলী বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ফসলি জমি নষ্ট করে কোনো কারখানা গড়ে তোলা যাবে না। আমাদের ফসলি জমির ওপর ইটভাটা হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে সরকারি বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েও কাজ হচ্ছে না। ফসল না হলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে আমাদের।

সদ্য নির্মিত ভাটা মালিক এন্তাজ আলী বাংলানিউজকে বলেন, সবেমাত্র ভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। আগুন দেওয়ার আগে পরিবেশ অধিদফতরসহ সব বিভাগের অনুমোদন নেওয়া হবে।

আদিতমারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আলীনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ফসলি জমির ওপর ইটভাটার অনুমোদন দেওয়া হয় না। তারা অনুমোদনের জন্য এলে তা তদন্ত করে ফসলি জমির ওপর হলে তার অনুমোদন দেওয়া হবে না।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বাংলানিউজকে বলেন, ফসলি জমি নষ্ট করে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে। ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের বিষয়ে কৃষকদের অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।