ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অ্যানথ্রাক্স: সিরাজগঞ্জে আরও নতুন রোগী, আক্রান্তদের পথ্যের অভাব

সুলতানা ইয়াসমিন মিলি, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১০
অ্যানথ্রাক্স: সিরাজগঞ্জে আরও নতুন রোগী, আক্রান্তদের পথ্যের অভাব

সিরাজগঞ্জ: গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ অ্যানথ্রাক্স রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে উল্লাপাড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে। অথচ পুরনো রোগীরাই এখনও দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারেননি।

উচ্চ ক্ষমতার জীবাণুরোধী (অ্যান্টিবায়োটিক) ওষুধ সেবনের পর যেসব সুষম খাদ্য খাওয়ার প্রয়োজন দরিদ্রতার কারণে তা তারা পাচ্ছেন না। ফলে সময়মতো সুস্থ হয়ে উঠছেন না তারা।  

সরেজমিনে জেলার অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের অনেকেরই ওষুধ সেবন পর্ব শেষ হলেও খুবই ধীরগতিতে সেরে উঠছেন তারা। আবার ঔষধ সেবন করে অনেকের শরীরেই নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় তারা ঔষধ খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছেন।

এ রকম পরিস্থিতিতে লক্ষ্মীপুর গ্রামের মনসুর আলী, আব্দুল মতিন ও আব্দুল জব্বারের নতুন করে রোগাক্রান্ত হওয়ার খবরে  উদ্বেগ এখনো কাটেনি। নতুন রোগীদের উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

কামারখন্দ উপজেলার ধোপাকান্দি গ্রামের লাইলী বেগমের (৪৫) পুরো পরিবারই অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত। তিন সপ্তাহ আগে স্বামী ইদ্রিস আলী (৫৫), দু’ ছেলে উজ্জ্বল (২৫) ও মহর আলীসহ লাইলী এ রোগে আক্রান্ত হন। কিন্তু নিয়মমতো ওষুধ সেবনের পরও তারা পুরো সুস্থ হয়ে ওঠেননি।

লাইলী বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘আমার ও স্বামীর ঘা কিছুটা শুকালেও ছেলেদের ঘা এখনও বেশ কাঁচা। ’

তিনি জানান, ডাক্তাররা প্রথম দফায় ৭ দিনের ও দ্বিতীয় দফায় আরও ৩ দিনের ওষুধ সেবনের ব্যবস্থাপত্র দেন। কিন্তু ঘা  পুরোপুরি না সারায় গতকাল (রোববার) আরও ৫ দিনের ওষুধ দিয়েছে।

তবে লাইলীর অভিযোগ, ‘এসব ঔষধ খেলে মাথা চক্কর দেয়। হাত-পায়ে বল থাকে না। অনেক সময় ভালোভাবে দাঁড়াতেও পারি না। তাই ওষুধ খাওয়া বাদ দিয়েছি। ’

তিনি বলেন, ‘ডাক্তার সাহেবরা এ ওষুধের সাথে ভিটামিন দিলে ভালো হতো। ’

একই গ্রামের অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পানু শেখ, পাশা শেখ, সেলিনা খাতুন ও নুরু মোহাম্মদও শোনালেন একই কথা।

সেলিনা খাতুন বলেন, ‘মন্ত্রী আইসা বলছিল সুচিকিৎসা হইব। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ। মাথা ঘোরানোর জন্য ভালো মন্দ খাওন দুধ, ডিম কিন্যা খাইতে পারি না। ’

তিনি বলেন, ‘ওষুধের সাথে মাথা ঘোরানোর ট্যাবলেট দিলে ভালো হইতো। ’

কৃষক মহর আলী বলেন, ‘২০ দিন হইলো অসুখ হইছে। ওষুধ খাওয়ার পর মাথা ঘোরে। তাড়াতাড়ি সুস্থ হইতে ডাক্তারের কোর্স চালাইতাছি। ’

তিনি জানান, ১০ দিন ওষুধ খাওয়ার পর ঘা কাচা থাকায় আরও ৫ দিনের ওষুধ দিয়েছেন ডাক্তার। এরপরও যদি রোগ না সারে, তবে ওষুধ পাল্টিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ডাক্তার।

মহর আলী বলেন, ‘আমরা দিন আনি দিন খাই। ঘা নিয়া না পারতাছি খেত খামারে কাজ করবার, না পারতাছি অলস বইস্যা থাকবার। ’

এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. নূরল হুদা তালুকদার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি কে বলেন, রোগীদের নানা অনিয়মের পাশাপাশি অনেক রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা ও আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ বেশি হওয়ায় পুরোপুরি সুস্থ হতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।

এরপরও যদি সুস্থ না হয় তাহলে নতুন করে রোগীর রক্ত পরীার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এছাড়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়া রোগীদের ভিটামিন জাতীয় ঔষধ দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন ডা. নূরুল হুদা।

সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব মতে, এ পর্যন্ত পুরো জেলায় অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৯৯।

গত ২৭ জুলাই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার চিথুলিয়া গ্রামে প্রথমবারের মতো অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলে। পরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।