ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চা বাগানের মাঝে উজ্জ্বল বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুরের স্মৃতি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯
চা বাগানের মাঝে উজ্জ্বল বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুরের স্মৃতি

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) থেকে ফিরে: দারুণ পরিবেশ। চারপাশে চা-বাগান। শীতের আগমনী বাতাসে ভেসে আসছিল চা পাতার মিষ্টি ঘ্রাণ। এরই মাঝে দারুণ করে সাজানো একটি সৌধ নজরে এলো। এগিয়ে গিয়ে জানা যায় সেখানে চিরনিদ্রায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের সমাধিসৌধ। কমলগঞ্জের এ চা বাগানটির নাম ধলই।

কমলগঞ্জের পথে হাঁটতে হাঁটতেই স্থানীয় সুহৃদ সুমন দাস বলেন, হামিদুর রহমানের সমাধিসৌধটি ঘুরে আসেন ভালো লাগবে। তার কথা শুনেই ভ্রমণসঙ্গী হাসনাত শাহীনের সঙ্গে এগোনো।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছুটে চললো কমলগঞ্জের ভানুগাছ বাজার থেকে। চারপাশে নতুন ধানের ঘ্রাণ নিতে নিতে মাধবপুর লেক আর ন্যাশনাল চা বাগান পেরিয়ে শুরু হলো ধলই চা-বাগানের পথ। একটা পর্যায়ে থামলো অটোরিকশা। নজরে এলো চমৎকার করে সাজানো বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের সমাধিসৌধ।

সমাধিসৌধ প্রাঙ্গণে পৌঁছাতেই বিপত্তি। হাতের ঘড়ির থেকে মোবাইলের ঘড়ির সময়ের পার্থক্য আধা ঘণ্টার। কপালে চিন্তার রেখা পড়তেই দায়িত্বরত বিজিবির এক সদস্য বললেন, পাশেই ভারতীয় সীমান্ত। সে কারণে আপনার মোবাইল ভারতীয় সময় দেখাচ্ছে।

সময়বিভ্রাট কাটিয়ে ঘুরে ফিরে দেখা গেলো সমাধিসৌধটি। কালো টাইলসের বেদীর উপরে সাদা রঙের দেয়াল। যা ভেদ করে উন্মোচিত হয়েছে সবুজ রঙের বাংলাদেশের মানচিত্র।

সমাধিসৌধ।  ছবি: বাংলানিউজ

সামনে লেখা হামিদুর রহমানের ছোট্ট জীবনী ও বীরত্বের কথা। যা রয়েছে কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ওয়েবসাইটেও।

ওয়েবসাইট মারফত জানা যায়, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান ১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খোরদা খালিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। হামিদুর রহমান ১৯৭১ সালে আনসার বাহিনীতে অল্প সময়ের জন্য চাকরি করেন এবং ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে ঐতিহ্যবাহী ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন।

সাহসী এ সৈনিক মাতৃভূমির স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন অপারেশনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের শেষ দিকে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার চা বাগান বিস্তৃত ধলই সীমান্ত চৌকিতে হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাহিনীকে পরাস্ত করার উদ্দেশ্যে সহযোদ্ধাসহ তিনি সশস্ত্র আক্রমণ চালান। ধলই সীমান্তে শত্রু সেনা চৌকির সম্মুখযুদ্ধে অমিত সাহসে চৌকির ৫০ গজের মধ্যে পৌঁছে যান এবং বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে ওই সীমান্ত চৌকি ও সংলগ্ন এলাকা মুক্ত করেন। সেখানেই শত্রুসেনার বুলেট বিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।

মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে এই বীর সেনানীর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়। বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানকে প্রতিবেশী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কমলপুর জেলাধীন আমবাসা গ্রামে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। সম্প্রতি তার দেহাবশেষ দেশে ফিরিয়ে এনে ঢাকার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়েছে।

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের সমাধিসৌধে যাওয়ার উপায়: ঢাকা থেকে কমলগঞ্জ উপজেলায় যাতায়াতের জন্য সড়ক ও রেলপথ দিয়ে সহজে যাতায়াত করা যায়। সড়কপথ হিসেবে ঢাকা থেকে সরাসরি উল্লেখ্যযোগ্য বাস সার্ভিস পার্শ্ববর্তী শ্রীমঙ্গল উপজেলায় চালু আছে। শ্রীমঙ্গল থেকে লোকাল সার্ভিসে (বাস/সিএনজি) ১৬ কিমি পথ অতিক্রম করে পূর্বদিকে কমলগঞ্জ সদরে আসা যায়। অপরদিকে ঢাকা থেকে রেলপথে ভানুগাছ এবং শমসেরনগর রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান করতে হয়। সেখান থেকে স্থানীয়ভাবে সিএনজি/বাসযোগে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের সমাধিসৌধে যাওয়া যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯
ডিএন/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।