ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিজয় দিবসে চা-শ্রমিকদের স্মৃতিস্তম্ভে শিশুদের ফুলেল শ্রদ্ধা

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯
বিজয় দিবসে চা-শ্রমিকদের স্মৃতিস্তম্ভে শিশুদের ফুলেল শ্রদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে শিশুরা। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: চারদিকে রোদের ঝিলিমিলি। শীত কাটিয়ে ওঠা রোদের তীব্রতা দখল করে রেখেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা-বাগানের প্রকৃতি। এর প্রবেশমুখেই নীরবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে চা-শ্রমিকদের স্মৃতিস্তম্ভ। এখানেই ১৯৭১ সালের ১ মে নৃশংসভাবে গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। তখনই ৪৭ জন চা-শ্রমিকদের তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল তারা। শ্রীমঙ্গলে চা-শ্রমিকদের গণহত্যার এটিই একমাত্র নির্দশন। যা মুক্তিযুদ্ধে তাদের গৌরবগাঁথার একটি অংশ।

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে সেই চা-শ্রমিকের স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে দেখা গেছে, চা-শ্রমিক সন্তানরা ফুল নিয়ে দলে দলে আসছে। নিজেদের মতো করে শ্রদ্ধাভরে ফুলের তোড়া বা ফুলের আঁটি (গুচ্ছ) তৈরি করে এনেছে তারা।

নতুন প্রজন্ম তাদের আত্মপরিচয় আর ইতিহাসের পথে হাঁটতে শুরু করছে।

এখানে ফুল দিতে আসা ছয়জন মেয়ে সদস্যদের একটি দলের সঙ্গে কথা হয়। তাদের একজনের নাম বৃষ্টি কাহার। তিনি পড়েছেন এইচএসসি প্রথম বর্ষে।

বৃষ্টি কাহার বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছর বিজয় দিবস এবং স্বাধীনতা দিবসে এখানে ফুল দিতে আসি। ’৭১ সালে আমাদের পূর্বপুরুষদের এখানে হত্যা করা হয়েছিলো। এটি আমাদের শ্রদ্ধার একটি স্থান।  

১০ শ্রেণিতে পড়া সুমি কাহার এই স্মৃতিসৌধের ফুল দেওয়া প্রসঙ্গে বলে, আমরা এখানে ফুল দিতে এসে দেখি আমাদের ছোটো ছোটো শিশুরা না বুঝে শ্রদ্ধাঞ্জলি তোড়ার তাদের পছন্দ মতো ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যায়। আমরা তাদের বারবার এই ভুলটা শুধরে দিতে চেষ্টা করি।

কালিঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা বাংলানিউজকে বলেন, এই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে চা-শ্রমিকদের গৌরবের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়। ৪৭ জন চা-শ্রমিককে এখানে লাইন ধরিয়ে পর্যায়ক্রমে ব্রাশফায়ারের করে হত্যা করা করেছিলো। সকাল থেকেই আমাদের চা-শ্রমিকরা এখানে শ্রদ্ধা নিবেদন জন্য এসেছি। শুধু তা-ই নয়, নতুন প্রজন্মের শিশুরাও ফুল হাতে নিয়ে এসে শ্রদ্ধা জানিয়ে যায়।

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে এখানে গণহত্যার শিকার হওয়া ৪৭ জন চা-শ্রমিকদের সঠিক নাম পাওয়া গেছে। ’৭১ সালের ১ মে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া চা-বাগানে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যায় প্রাণহারানো ব্যক্তিরা হলেন:

১) হোসেনী হাজরা, ২) চিনিলাল হাজরা, ৩) গুরা হাজরা, ৪) টিমা হাজরা, ৫) শনিচারা হাজরা, ৬) হুলা হাজরা, ৭) হিংরাজ হাজরা, ৮) কৃষ্ণচরণ হাজরা, ৯) মহারাজ হাজরা, ১০) নুনু লাল হাজরা, ১১) মংগুরা হাজরা, ১২) ডুমার চন্দ তুড়িয়া, ১৩) সোম মাঝি, ১৪) নকুলা হাজরা, ১৫) কালাচান্দ ঘাটুয়ার, ১৬) সুখ রঞ্জন রিকিয়াশন, ১৭) ইন্দ্র ভূঁইয়া, ১৮) ফাগু হাজরা, ১৯) রামরাল হাজরা, ২০) জগু হাজরা, ২১) বিশ্বম্ভর হাজরা, ২২) হিরুয়া হাজরা, ২৩) শিব মুড়া, ২৪) চৈইত ভুঁইয়া, ২৫) অঘনু ভুঁইয়া, ২৬) বুকউ তেলী, ২৭) রাজকুমার মাল, ২৮) রামরাল মাল, ২৯) ফেরুয়া গৌড়, ৩০) রামকৃষ্ণ গৌড়, ৩১) রামচরণ গৌড়, ৩২) গবিনা গৌড়, ৩৩) ভজুয়া হাজরা, ৩৪) গঙ্গা বারই, ৩৫) রামদেও হাজরা, ৩৬) জগদেও কাহার, ৩৭) গঙ্গা কুর্মী, ৩৮) চুনি হাজরা, ৩৯) অমৃতা হাজরা, ৪০) ক্ষুদিরাম হাজরা, ৪১) বীরবলী হাজরা, ৪২) ব্রিজনারায়ন গোয়ালা, ৪৩) মংরা তুড়িয়া, ৪৪) হরকু হাজরা, ৪৫) রামসুরুক হাজার, ৪৬) বাংশিং তুড়িয়া এবং ৪৭) মংরা হাজরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।