ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

চাঁদা না পেয়ে স্কুলের নির্মাণ কাজ বন্ধ করলো ছাত্রলীগ

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
চাঁদা না পেয়ে স্কুলের নির্মাণ কাজ বন্ধ করলো ছাত্রলীগ

রাবি: চাঁদা না পেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নির্মাণাধীন শেখ রাসেল স্কুলের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ছাত্রলীগের দুই নেতা গিয়ে স্কুলের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন বলে জানা গেছে।  

স্কুলটি নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগ তাদের কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল।

এর আগে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ছাত্রলীগ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী মাঠের দক্ষিণ পাশে স্কুলটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। চারতলা বিশিষ্ট ভবনটির নির্মাণ কাজের জন্য বরাদ্দ হয় ১০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘শিকদার কনস্ট্রাকশন’ নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায়। ৩০ জুলাই নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধানকারী মমতাজ উদ্দীনের অভিযোগ, কাজ শুরুর পরদিন থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নির্মাণস্থলে গিয়ে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে। পরে ১০ আগস্ট তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেন। এসময় ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক মমতাজ উদ্দীনের কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় স্কুলের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন।

মমতাজ উদ্দীন বাংলানিজকে বলেন, প্রায়ই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নির্মাণস্থলে গিয়ে তার কাছে চাঁদা দাবি করতেন। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্তসহ দুজন গিয়ে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আশরাফুল ইসলামকে তুলে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই কাজ বন্ধ রয়েছে।

ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস্ কমপ্লেক্সের পেছনে ধরে নিয়ে যায়। চাঁদার বিষয়টি মীমাংসার জন্য নির্দেশ দিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সরেজমিনে নির্মাণাধীন স্কুল প্রাঙ্গনে দেখা যায়, শ্রমিকরা কাজের পরিবর্তে একসঙ্গে মাঠে বসে আছেন। হুমকির পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা।

সবুজ নামের এক শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, সকাল থেকে কাজ করছিলাম। দুপুরে দু’জন এসে ম্যানেজারকে কাজ বন্ধ করে দিতে বলে। তাকে তুলেও নিয়ে যায়। কাজ করতে গেলে কখন কি ঝামেলা হয়? তাই আমরা কাজ করছি না।

তত্ত্বাবধানকারী মমতাজ উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি ভেবে কাজ বন্ধ রয়েছে। এভাবে চললে কাজ শেষ হবে না। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

তবে অভিযুক্ত সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি আজকে স্কুলের ওদিকে যাইনি। এগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমি কাউকেই তুলে আনিনি কিংবা স্কুলের কাজ বন্ধও করে দেইনি।

এ বিষয়ে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু দাবি করে বলেন, আমরা কখনোই কারো কাছে এ ব্যাপারে চাঁদা দাবি করিনি। আজকের ঘটনাটি এখনও জানি না। তবে কেউ যদি ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে এমন কাজ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঠিকাদার আমার কাছে অভিযোগ করেছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।