ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পুড়ে যাওয়া ছোট ভাইকে নিয়ে বেরিয়েছেন বড় ভাই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯
পুড়ে যাওয়া ছোট ভাইকে নিয়ে বেরিয়েছেন বড় ভাই আইসিইউর সামনে অপেক্ষারত আকাশ ও স্বজনরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা:  কেরানীগঞ্জের প্লাস্টিক কারখানায় লাগা আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে কর্মরত মেহেদি হাসান শান্তর (২০)। তার বড় ভাই আকাশও একই কারখানায় কর্মরত ছিলেন। আগুন লাগার পর আকাশ কারখানা থেকে বেরোতে পারলেও বেরোতে পারেননি শান্ত। পরে আগুন নেভানোর পর পুড়ে যাওয়া শান্তকে কোলে করে উদ্ধার করেছিলেন তার বড় ভাই আকাশ।

দগ্ধ হওয়ার একদিন পর বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শান্তর মৃত্যু হয়।

বৃহস্পতিবার আইসিইউর সামনে অপেক্ষারত মৃত শান্তর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

শান্তর মৃত্যুর খবর এখনো জানেন না আকাশ। তাই একেবারে নিস্তেজ নিথর হয়ে গেছেন তিনি। হাসপাতালে আসার পর থেকেই তিনি আর কথা বলছেন না। স্বজনরা চেষ্টা করছেন তাকে কথা বলানোর। কিন্তু, তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না।

চলতি মাসের বেতন পাওয়ার পর কলেজে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল শান্তর উল্লেখ করে স্বজনরা আরও বলেন, শান্তরা কেরানীগঞ্জের উত্তরপাড়া এলাকার সুবাড্ডার স্থানীয় অধিবাসী। শান্ত ছিল সবার খুব আদরের। চলতি মাসের বেতন দিয়েই তার ঢাকার কোনো কলেজে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা আর হলো না।

এদিকে শান্তকে পোড়া অবস্থায় কোলে করে নিয়ে বের হওয়ার আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আগুন লাগার পর প্রথম যে ফায়ার সার্ভিসে কল দিয়েছিলেন তিনি হলেন টাইলসমিস্ত্রী মো. আরিফ শেখ। কারখানার সামনে তিনি টাইলসের কাজ করছিলেন।

মো. আরিফ শেখ বাংলানিউজকে বলেন, যখন আগুন লাগে তখন আমি ৯৯৯ নম্বরে কল করি। দুই মিনিটের মধ্যে কারখানার শ্রমিকরা বেরোলেও ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর আবারও আরেকটি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ হয়। এরপর আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এক ঘণ্টার পর আগুন নেভানো হয়। পরে শুরু হয় পুড়ে যাওয়া মানুষদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার কাজ। এ সময় আকাশ ভাইকে দেখেছি, দগ্ধ শান্তকে কোলে করে নিয়ে বেরোতে। আকাশ প্রথম যাত্রাতেই কারখানা থেকে বের হতে পেরেছিলেন।

এর আগে বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকার ‘প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’র কারখানায় আগুন লাগে। ঘটনার সময় শ্রমিকরা কাজ করছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার এসে শ্রমিকদের আগুন লাগার খবর দেয়। এরপর শ্রমিকরা পানি ও কারখানায় থাকা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়।

এ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১০ হাজার স্কয়ার ফিট কারখানাটির ভেতরের সব মালামাল ও যন্ত্রাংশ পুড়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডের ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জাকির হোসেন (২২) নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় প্রায় ৩৫ জনকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে দগ্ধদের মধ্যে থেকে রাত থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়।

‘প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’র কারখানার গত দু’বছরে তিনবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যার দুটোই ঘটেছে চলতি বছরে। ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর কারখানাটিতে প্রথম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো আগুন লাগে। তবে, ওই দু’টি অগ্নিকাণ্ডে কারখানার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সর্বশেষ বুধবার তৃতীয়বারের মতো আগুন লাগে কারখানাটিতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯
এমএএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।