ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কুষ্ঠরোগীদের সমাজ-চাকরিচ্যুতি নয়, চিকিৎসা করাতে হবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৯
কুষ্ঠরোগীদের সমাজ-চাকরিচ্যুতি নয়, চিকিৎসা করাতে হবে

ঢাকা: কুষ্ঠরোগীদের চাকরিচ্যুতি এবং সমাজ থেকে বের করে দেওয়ার মানসিকতা বদলের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ জাতীয় কুষ্ঠ কার্যক্রম আয়োজিত ‘জিরো লেপ্রসি ইনিশিয়েটিভ-২০৩০’ শীর্ষক সম্মেলনে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সহানুভূতিশীল, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কুষ্ঠ রোগীদের দেখতে হবে।

কুষ্ঠ রোগীরাও মানুষ। আমাদের সমাজেরই একজন। তাদের দূরে ঠেলে দেওয়া নয়, সহানুভূতির সঙ্গে দেখা, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

কুষ্ঠরোগীদের চাকরি ও সমাজ থেকে বের করে দেওয়া যাবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো কুষ্ঠ রোগ দেখা গেলো আর তাকে চাকরি থেকে বের করে দিতে হবে, তাকে সমাজ থেকে দূরে ঠেলে দিতে হবে- এই মানসিকতা সম্পূর্ণভাবে পরিহার করতে হবে।

তিনি বলেন, কারো যদি কুষ্ঠ রোগ দেখা দেয় তাকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না। তাকে সমাজ থেকে দূর দূর করা যাবে না। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যেখানে সে চাকরি করবে তাদেরই একটা দায়িত্ব থাকবে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা। যাতে সে সুস্থ হতে পারে।

সারা বিশ্বে কুষ্ঠরোগ নিয়ে কুসংস্কার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, একসময় মনে করা হতো এটা একটা অভিশাপ, আসলে এটা কোনো অভিশাপ নয়। এটা জীবাণু সংক্রমণের মাধ্যমে হয়।

কুষ্ঠ রোগ নিয়ে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন জীবাণু সংক্রমণের মাধ্যমে কুষ্ঠু রোগ হয়, গবেষণার মাধ্যমে সেটা বের করা, সেই জীবাণু যাতে বিস্তার লাভ করতে না পারে এবং আমাদের দেশে এটা যেন সম্পূর্ণভাবে দূর হয় তার পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য আমাদের গবেষণা একান্তভাবে প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর গবেষণা হচ্ছে, ওষুধ বের হচ্ছে। আমাদের দেশেও এটা আমরা করতে পারি।

কুষ্ঠ রোগের ওষুধ উৎপাদন ও বিনামূল্যে বিতরণ করতে বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমাদের যেসব ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি আছে তাদেরকে বলবো কুষ্ঠু রোগীদের জন্য যে বিশেষ ওষুধটা দরকার সেই ওষুধটা তারা যদি দেশে উৎপাদন করেন এবং বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা নেয়, তাহলে কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।

তিনি বলেন, যারা ওষুধ শিল্পের সঙ্গে জড়িত সে অ্যাসোসিয়েশনকে এ মিটিং থেকে আমি বললাম আর ব্যক্তিগতভাবেও বলবো যে আপনারা এটা করেন এবং এদেরকে ওষুধ দেন।

কুষ্ঠরোগ নিয়ে সামাজিক ও ব্যক্তিগত সচেতনতা বৃদ্ধির তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে যদি শনাক্ত করা যায়, আর যদি চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া যায় তাহলে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় না, সুস্থ হয়ে যেতে পারে। সেই সুযোগটা রয়েছে।

সবার সম্মিলিত উদ্যোগে ২০৩০ সালের আগেই জিরো লিপ্রোসির লক্ষ্যে পৌঁছানোর বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

২০৩০ সালের মধ্যে কুষ্ঠমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এবং জাতীয় কুষ্ঠ কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী ও বেগবান করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সব কর্মকর্তা, মাঠ পর্যায়ের সব কর্মী এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করা জন্য আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ: কোনো উপসর্গ বা লক্ষণ ছাড়াই কুষ্ঠ রোগ দেখা দিতে পারে। এটি সংক্রামক ব্যাধি অর্থাৎ একজন থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে এ রোগ।

লক্ষণ হিসেবে চামড়ায় ফ্যাকাশে বা লালচে দাগ দেখা দেওয়া যাতে কোনো অনুভূতি থাকে না, চুলকায় না, ঘামে না; ওই স্থানের লোম পড়ে যায়; ব্যথা অথবা ত্বকে তাপমাত্রা অনুভূতি হ্রাস কিংবা আঙুলে ঘা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দিলেই দেরি না করে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে হবে।  

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর বাংলাদেশে ৩,৫০০-৪,০০০ কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হয়ে থাকে।

সরকারের পরিচালনায় ঢাকা, সিলেট ও নীলফামারী জেলায় তিনটি বিশেষায়িত কুষ্ঠ হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতাল থেকে কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এছাড়াও দাতা দেশগুলোর সহায়তায় সরকারের সহযোগী হিসেবে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা বিভিন্ন জেলায় এ রোগ নির্মূলের জন্য কুষ্ঠ হাসপাতাল ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

প্রাথমিক অবস্থায় কুষ্ঠ রোগ শরীরে তেমন কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে না। তাই আন্যান্য রোগীর মতো চিকিৎসার জন্য তারা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান না। ফলে প্রতি বছর কুষ্ঠ আক্রান্তের কারণে কিছু মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। অথচ প্রাথমিকভাবে এ রোগের চিকিৎসা করলে রোগের বিস্তার রোধের পাশাপাশি পঙ্গুত্ব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। রোগী সম্পূর্ণ সুস্থও হন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গুডউইল অ্যাম্বাসেডর ইউহি সাসাকাওয়া।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৯
এমইউএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।