ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সেতুর কর্মযজ্ঞ দেখে পদ্মাপাড়ি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯
সেতুর কর্মযজ্ঞ দেখে পদ্মাপাড়ি!

মাদারীপুর: প্রমত্ত পদ্মার বুক চিড়ে এখন জেগেছে খণ্ড খণ্ড চর। শীত মৌসুমে পদ্মাজুড়ে থাকে একটা প্রশান্তির ছায়া! নেই তীব্র স্রোত, আগ্রাসী ভাব। বর্ষার ঘোলা পানিও নেই, জল যেন স্বচ্ছ আয়না। টলমলে সেই পানি কেটে এগিয়ে চলছে নৌযানগুলো। ঢেউয়ের ছন্দ ওঠে নদীর পানিতে। 

কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুট। একপ্রান্তে মাদারীপুর জেলার শিবচর অন্যপ্রান্ত মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া।

এ রুটে যাতায়াত করলে পদ্মার এমন রূপই চোখে পড়ে। তবে, এমন প্রাকৃতিক রূপ ছাপিয়ে জনসাধারণের দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে আরেকটি বিষয়। আর এ কারণেই ঢাকাগামী দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে এ রুটের লঞ্চযাত্রা হয়ে উঠেছে আনন্দদায়ক ও তৃপ্তময়।  

দৃশ্যমান হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মাসেতু।  ছবি: বাংলানিউজকাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে শিমুলিয়ার উদ্দেশে চলাচলকারী লঞ্চযাত্রীদের চোখে মুগ্ধ হয়ে ধরা দিচ্ছে স্বপ্নের পদ্মাসেতু! জাজিরা পয়েন্ট থেকে একের পর এক সারিবদ্ধ স্প্যান দূর থেকে দেখে মনে হয় অজগর সাপের মতো! আর নদীর মধ্যের একটি স্প্যানের ঠিক পাশ দিয়েই চলাচল করছে লঞ্চ। ফলে স্বপ্নের এই পদ্মাসেতুকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হচ্ছে এ নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রীদের!

পদ্মাসেতুকে খুব কাছ থেকে দেখতেই লঞ্চ যাত্রায় বেড়েছে যাত্রীর সংখ্যা। সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করে এমনটাই জানা যায। এছাড়া শুধু কাছ থেকে সেতু দেখার জন্যও অনেকেই লঞ্চ যাত্রা করেন বলেও জানালেন একযাত্রী।  

নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে সেতুর।  ছবি: বাংলানিউজমাহবুব হাসান নামে এক যুবক বাংলানিউজকে বলেন, জাজিরা প্রান্ত থেকে পদ্মাসেতুর ঠিক কাছাকাছি যাওয়া নিষেধ। সংশ্লিষ্ট কর্মীরা বাঁধা দেন। কাছ থেকে পদ্মাসেতু দেখতেই লঞ্চে একপাড় থেকে অন্যপাড়ে যাচ্ছি। কাঁঠালবাড়ী থেকে লঞ্চ শিমুলিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে গেলে অর্ধেক পথ পাড়ি দিতে দিতে সেতুর কর্মযজ্ঞ দেখা যায়।

সরেজিমনে দেখা গেছে, কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে লঞ্চ শিমুলিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার সময় কিছুটা পথ সামনে গেলেই জাজিরা প্রান্ত থেকে পদ্মাসেতুর পুরো অবয়ব চোখে পড়বে। লঞ্চ যতই সামনে যেতে থাকে পদ্মাসেতু ততই কাছাকাছি আসে।  

মূল নদীতে প্রবেশের আগে চ্যানেল অতিক্রমের সময় পদ্মাসেতুর খুব কাছ দিয়েই যেতে হয় নৌযানগুলোকে। তখন সেতুর কয়েকটি স্প্যান খুব কাছ থেকেই দেখা যায়। সেতুর কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় নৌযানের যাত্রীদের উচ্ছ্বসিত হয়ে পদ্মাসেতু দেখতে দেখা গেছে।

বিমল শীল নামে এক যাত্রী বাংলানিউজকে বলেন, লঞ্চ থেকে পদ্মাসেতু খুব কাছ থেকে দেখা যায়। পুরোটা পথ লঞ্চে বসে থাকতে আগের মতো বিরক্ত লাগে না। সেতুর কর্মযজ্ঞ দেখতে দেখতেই সময় পার হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, আগে স্পিডবোটে পার হতাম বেশি। পদ্মাসেতু দেখার জন্য এখন লঞ্চে পার হই। ভালোও লাগে দেখতে।

প্রমত্ত পদ্মায় জেগে উঠেছে চর, ‍দূর থেকে দৃশ্যমান সেতু।  ছবি: বাংলানিউজলঞ্চের মাস্টার ও অন্যান্য শ্রমিকেরা বলেন, পদ্মাসেতুর কাজ দেখেই দিন কাটে আমাদের। যাওয়া-আসার পথেই চোখের সামনে বাস্তব হয়ে উঠছে স্বপ্নের সেতু। সেতু হয়ে গেলে আর লঞ্চ চালানো হবে না এই পদ্মায়।  

তারা বলেন, লঞ্চ চলবে না। তবে এই সেতুর ফলে পাল্টে যাচ্ছে আমাদের চরাঞ্চল। উন্নয়নমূলক নানা কাজ হচ্ছে। পদ্মাসেতু আমাদের স্বপ্ন ছিল। যা এখন দৃশ্যমান!

এখন শুকনো মৌসুম। পদ্মায় স্রোতের ক্ষিপ্রতা নেই। লঞ্চ আপন গতিতে এগিয়ে পাড়ি দেয় পদ্মা। লঞ্চের ডেকে দাঁড়িয়ে পদ্মাসেতুর কর্মযজ্ঞ দেখতে দেখতে সময় কেটে যায় সাধারণ যাত্রীদের।  

সেতুর কাঠামো দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন অনেক যাত্রী। জল্পনা-কল্পনা চলে, কত দিনে শেষ হবে কাজ! কবে সেতুর ওপর দিয়ে পাড়ি দেওয়া হবে পদ্মা!

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।