ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ক্ষত পূরণে সাহায্য করবে এই রায়: এসি রবিউলের ভাই

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
ক্ষত পূরণে সাহায্য করবে এই রায়: এসি রবিউলের ভাই

ঢাকা: হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার মামলায় দেওয়া এই রায় অপূরণীয় ক্ষত পূরণে কিছুটা সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেছেন সেই রাতের হামলায় শহীদ হওয়া পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলামের ভাই শামসুজ্জামান শামস।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে বিচারক মো. মুজিবুর রহমান সংক্ষিপ্ত রায় পড়ে শোনান। রায়ের ফলের পর এজলাস পেরিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে আসলেই খুশিতে অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠেন শামস।

 

তিনি বাংলানিউজকে শামস বলেন, সেইবার মায়ের কাছে দুঃসংবাদ নিয়ে গিয়েছিলাম। এবার সুসংবাদ নিয়ে যাব। এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আমার ভাইকে হারিয়েছি। তাকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু এই রায় আমাদের ক্ষত পূরণে সাহায্য করবে। বাংলাদেশ সম্প্রীতির ও শান্তিপ্রিয় দেশ। এই সম্প্রীতি ও শান্তি যারা বিনষ্ট করতে চায়, তাদের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে থাকল এই রায়।

একজন খালাস পেলেও সেটি আইনের নিজস্ব গতিতে হয়েছে উল্লেখ করে শামস বলেন, আমরা এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছি। বাকি কাজ আইনের নিজস্ব গতিতে হয়েছে। পুলিশ তাদের কাজ করেছে, আইনজীবীরা তাদের। আর আদালত এবং দেশের আইনের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। কেউ যদি খালাস পায় তাহলে সেটিও হয়তো আইনের মধ্যমেই হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ যদি আপিলের প্রয়োজন মনে করে, তাহলে করতে পারে। আমাদের কোনো সাহায্য প্রয়োজন হলে করব।  

বুধবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান আলোচিত গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা মামলায় আট আসা‌মির মধ্যে সাতজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দি‌য়ে‌ছেন। বেকসুর খালাস পেয়েছেন একজন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসা‌মিরা হ‌লেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ। খালাস পেয়েছেন মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান।

‌দে‌শের ই‌তিহা‌সে অন্যতম নৃশংস এ হামলায় ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, একজন ভারতীয়, একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক ও দু’জন বাংলাদেশিসহ মোট ২০ জনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের ছোড়া গ্রেনেডের আঘাতে প্রাণ হারান বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ ও সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম।

হামলার পর জিম্মি অবস্থার অবসানে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছিলেন পাঁচ জঙ্গি। তারা হলেন- মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জল।

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের সময় নিহত হয়েছেন নব্য জেএমবির আরও ৮ সদস্য। তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল হাসনাত রেজা করিমও অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান।  

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির (আত্মঘাতী) সদস্যরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরে কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পাঁচ জঙ্গি।

ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।

একই বছরের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান।

এক বছরের বিচারকালে মামলার মোট ২১১ জন সাক্ষীর ১১৩ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন এবং রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে গত ১৭ নভেম্বর এ মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। ওইদিনই আদালত রায় ঘোষণার জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
এজেডএস/পিএম/কেআই/টিএম/এসএইচএস/এসএ

আরও পড়ুন
**
হ‌লি আ‌র্টিজান মামলায় ৭ আসা‌মির মৃত্যুদণ্ড, একজন খালাস

** আদালতে হলি আর্টিজান মামলার আসামিরা
**হলি আর্টিজানে হামলার পর বদলে গেছে গুলশানের নিরাপত্তা
**গুলশান হামলা: আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি পরিবারের
**‘দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করতেই হলি আর্টিজানে হামলা’
**যেভাবে সফল হয় ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’
**এখন যেমন গুলশানের সেই হলি আর্টিজান বেকারি
**এজলাসে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত, থাকবেন বিদেশি পর্যবেক্ষক
**আদালত এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা
**আদালত এলাকায় উৎসুক জনতার ভিড়
**আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা চান সাধারণ মানুষ
**হলি আর্টিজান হামলার ‘নীল নকশা’
**প্রস্তুত আদালত, প্রস্তুত গণমাধ্যম
**সেদিন যা ঘটেছিল হলি আর্টিজানে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।