ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নারী নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান ঘোষণার দাবি

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
নারী নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান ঘোষণার দাবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতীকী অনশন। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের মতো নারী ও শিশুধর্ষণসহ নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযানের দাবি উঠেছে।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ধর্ষণ ও সব ধরনের যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতীকী অনশনে এ দাবি জানানো হয়। ‘ধর্ষণ ও সকল যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’ ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচিতে বিভিন্ন মানবাধিকার, নারী অধিকার, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, উন্নয়ন সংগঠন ও সচেতন মানুষেরা অংশগ্রহণ করেন।

এসময় বক্তব্য রাখেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশি কবির, নারী পক্ষের প্রতিষ্ঠাতা শিরীন হক, ‘আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট’র নির্বাহী সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার শিকার নারী এবং তাদের স্বজনেরাও বক্তব্য রাখেন।

সুলতানা কামাল বলেন, প্রতীকী অনশন করে আমরা জানান দিতে চাই যে, নারী সহিংসতার ঘটনায় আমরা বিক্ষুদ্ধ, ক্লান্ত ও দুঃখভারাক্রান্ত। নারী নির্যাতনের গভীরে যে কারণ তা হচ্ছে, সমঅধিকারের কথা বলা হলেও নারীদের ক্ষমতায়নের দিকটি সমাজে আজও প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। আমরা আজ এমন সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশে বাস করছি যেখানে জবাবদিহিতা নেই। ক্ষমতাবানরা নারীদের নির্যাতন করে বুক ফুলিয়ে হাঁটছে। আজ বিচারহীনতার সমাজে বাস করছি বলেই বারবার নারীদের ওপর যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ পারুল আক্তার জানান, মামলা করার পর তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় দিন পার করছে। তার মেয়েকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়। ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বর্তমানে তাদের কোনো খোঁজ নেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া, ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতারের পর মূলহোতা সাবেক ইউপি সদস্য রুহুল আমিন কারাগার থেকে তার স্বজনদের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন এ নির্যাতিতা গৃহবধূ।

কর্মসূচিতে একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানানো হয়, বছরের প্রথম ১০ মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১২শ’ ৫৩ জন নারী। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ২শ’ ৫১ জন এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৬২ জনকে। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ২শ’ জনকে, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২শ’ ২১ নারী এবং ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১০ নারী। একই সময়ে ৭শ’ ৬৭ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এছাড়া ১শ’ ৩৫ শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।

এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে নয়টি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে রূপান্তর করা, উচ্চ আদালতে চূড়ান্ত বিচার নিশ্চিত করতে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া, নারী নির্যাতনের মামলায় সাক্ষ্যপ্রদান বিধি যুগোপযোগী করা, পারিবারিক নির্যাতন আইনের ওপর সরকারের প্রচারণা অব্যাহত রাখা, বিচার চলাকালে নির্যাতনের শিকার নারী ও তার পরিবারের জন্য নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা, হাইকোর্টের দেওয়া ২০০৯ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, নারী ও শিশুর ওপর ধর্ষণসহ সব ধরনের যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের মতো নারী ও শিশু ধর্ষক-নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান ঘোষণা ও বাস্তবায়ন, সব ধরনের বৈষম্যমূলক আইন ও নারী নির্যাতনবিরোধী আইনকে সংশোধন করে সময়োপযোগী করা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
এসকেবি/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।