ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘সরকার রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করতে পারে, আমাদের করে না’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৯
‘সরকার রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করতে পারে, আমাদের করে না’

আশুলিয়া (ঢাকা): আমাদের দেশের সরকারসহ বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিদের জন্য পুনর্বাসনসহ যাবতীয় সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু আমরা দেশের নাগরিক হয়েও পুনর্বাসন তো দূরের কথা কেউ একবার খোঁজও নেয় না। গার্মেন্টসে কাজ করতে গিয়ে জীবনটা নষ্ট করেছি বলে আজ না খেয়ে মরতে হচ্ছে আমাদের।

আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন ২০১২ সালের নভেম্বর মাসের ২৪ তারিখে তাজরীন ফ্যাশনের অগ্নিকাণ্ডে আহত নারী শ্রমিক শিল্পী বেগম।

তিনি কারখানাটির দ্বিতীয় তলায় সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন।

সে সময় তার মত আরও প্রায় ১৫০০ শ্রমিক এ কারখানায় বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করতেন।

স্বামী আব্দুর রহিম শেখের মৃত্যুর পর মেয়ে আমেনাকে নিয়ে কাজের সন্ধানে পটুয়াখালী জেলা থেকে সাভারের আশুলিয়ায় চলে আসেন শিল্পী। এখানে এসে নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেড নামের পোশাক কারখানা চাকরি নেন। সে সময় সংসারে মোটামুটি স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছিল। কিন্তু কয়েক বছর পরেই হঠাৎ একটি দুর্ঘটনায় সব হারিয়ে গেলো তার। আগ্নিকাণ্ড থেকে কোনো রকম প্রাণে বেঁচে ছয় মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন শিল্পী।

সেই অগ্নিকাণ্ডের দীর্ঘ সাত বছরের মধ্যে নানাভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু কোনোভাবেই তিনি আগের মত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেননি। সংসারে অভাব অনটন লেগেই আছে। বর্তমানে রাকিব হোসেন সোহাগ নামে এক শ্রমিক নেতার দেওয়া ১০ হাজার টাকা দিয়ে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকাতেই একটি পিঠার দোকান দিয়েছেন। এ দোকান থেকে আয় করা টাকা দিয়ে তার পরিবারের দু’মুঠো ভাত কোনোমতে হয়। কিন্ত মেয়েকে পড়ালেখা করানোর টাকা আর যোগার হয় না।

সেদিনের ঘটনার কথা মনে করে শিল্পী বলেন, প্রতিদিনের মত সেদিনও কারখানার ভেতরে কাজ করছিলাম। সন্ধ্যার পরপরই জ্বলে ওঠে আগুন। প্রথমে ঠিক বুঝে উঠতে না পারলেও ধোঁয়া আর আগুনের উত্তাপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে প্রাণে বাঁচার চেষ্টায় দিগ্বিদিক ছুটতে থাকি। সে সময় কোনোভাবে ভবন থেকে নিচে নামতে পারলেও ভবনের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ থাকায় প্রাণ হারান ১১৩ জন সহকর্মী।

শিল্পী বেগম।

অভিযোগ করে শিল্পী আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিরা এসে অনেক সুবিধা নিচ্ছে। সরকার তাদের সহযোগিতা করছে, এছাড়া সারাবিশ্বের এনজিওগুলো তাদের পর্যাপ্ত সহায়তা করছে। আর এদিকে আমরা পোশাক কারখানায় কাজ করতে গিয়ে আহত হয়েও সরকার বা অন্য কোনো সংস্থা থেকে চিকিৎসার জন্যও সহায়তা পাই না। আর যদিও বাইরের কোনো সংস্থা আমাদের আহত ও নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে কিছু দিতে চায়, সেই টাকা শ্রমিক নেতারা ভাগ বাটোয়ারা করে খেয়ে ফেলে। আমরা তার ছিটেফোঁটাও পাই না।

এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বাংলানিউজকে বলেন, রানা প্লাজা ও তাজরীন পোশাক কারখানায় ঘটে যাওয়া ঘটনায় যারা জড়িত আজ পর্যন্ত তাদের কোনো শাস্তি হয়নি। এছাড়া নিহত শ্রমিকের পরিবার ও আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের জন্য তাজরীনের বর্তমান ভবন ভেঙে নতুন ভবন তোলা। এ কারখানার মালিকসহ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তাকে বিচারের আওতায় আনা হোক।

তিনি আরও জানান, যারা আহত শ্রমিক তাদের বর্তমানে চিকিৎসা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই তাদের চিকিৎসাসহ পুনর্বাসনের জন্য জোর দাবি জানাই।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের নভেম্বর মাসের ২৪ তারিখে আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশন কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ১১৩ জন শ্রমিক নিহত হয়। এছাড়া প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক আহত হয়। সেদিনের অগ্নিকাণ্ডে বেশি মাত্রায় পুড়ে যাওয়ায় ৫৩ মরদেহ আজও সনাক্ত করা যায়নি। যাদের ঠাঁই হয়েছে রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।