ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

৯ জনের অকাল মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গ্রাম

সাজ্জাদ হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৯
৯ জনের অকাল মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গ্রাম

মুন্সিগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের কনকসার গ্রামের বেপারী বাড়িতে চলছিল বিয়ের আনন্দ। বরের আত্মীয়-স্বজনরা নানা আয়োজনে ব্যস্ত। কাবিনের জন্য বরযাত্রী নিয়ে দু’টি মাইক্রোবাস যাচ্ছিল কনের বাড়িতে। কিন্তু, পথিমধ্যে এক দুর্ঘটনায় মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেল সব আনন্দ। এতে একই গ্রামের তিন বাড়ির মোট নয়জন নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে চালক ছাড়া সবাই আত্মীয়।

একসঙ্গে এত মানুষের অকাল মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের কনকসার গ্রাম। প্রতিবেশীরা হাসপাতাল থেকে মরদেহ আনার পর থেকেই ভিড় করছেন শোকাস্তব্ধ পরিবারের বাড়িতে।

স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে বাতাস। সান্ত্বনা দেওয়ার কোনোভাষা নেই প্রতিবেশীদের, তবুও পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সবাই।  

দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেও এই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিল বিয়ের আনন্দ। বরের বাড়ি থেকে কনের বাড়ি যাওয়ার পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার খবরে নীরব পুরো গ্রাম। বাড়ির আশেপাশের সবার মুখে কান্না, কেউ অন্ধকারে, কেউ নীরবে বসে কাঁদছেন। কেউ আবার শোকে স্তব্ধ হয়ে আছেন।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কনের নাম নিশি। তিনি ঢাকার কামরাঙ্গী চরের আব্দুর রশীদের মেয়ে। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) দুপুর পৌনে একটার দিকে কাবিনের জন্য কনের বাড়িতে বর রুবেল ও তার স্বজনরা দু’টি মাইক্রোবাসে যাত্রা শুরু করেন। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মাইক্রোতে যাত্রী ছিলেন মোট ১২ জন। আপাতত বিয়ের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।  

দুর্ঘটনায় শোকস্তব্ধ গ্রাম

রুবেলের চাচাতো বোনের জামাই আব্দুর রউফ জানান, আমার ঢাকা থেকে এই বিয়েতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসি। বিয়ের আনন্দ দুর্ঘটনার কারণে শেষ হয়ে গেছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ১০টায় ব্রাক্ষ্মনগাঁও স্কুল মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর হলুদিয়া সাতঘরিয়া কবরস্থানে আটজনকে দাফন করা হবে।  

কনকসার বাজারে কাছেই বেপারী বাড়ি নামে পরিচিত এই বাড়িটিতে শোকের ছায়া নিয়ে এসেছে।

রুবেলের বড় ভাই সোহেল বলেন, আমার স্ত্রী রুনা (২৪), ছেলে তাহসান হাবিব (৪) ও শালী রেনুর (১২) মৃত্যু হয়েছে। আমার একটি মাত্র ছেলে, সেও চলে গেলো। আমাকে দেখার আর কেউ রইলো না। আল্লাহ যাতে কাউকে এরকম কষ্ট না দেন। রুনার মরদেহ ঢাকা থেকে রওনা হয়েছে।

জানা গেছে, বর রুবেলের খালাতো ভাই জাহাঙ্গীর (৪২), প্রতিবেশী জয়নাল আবেদীন (৫২), সোহরাব (৫৫) ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরের অবস্থা আশংকাজনক। রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কত জন নিহত হয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে কেউ বলছেন, ১০ জন আবার কেউ বলছেন, ১১ জন। পরিবারের অনেক সদস্য রুবেলের খালাতো ভাই জাহাঙ্গীরকে মৃত ভেবে নিয়েছিলেন। পরে সাংবাদিকদের মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছেন তিনি এখনো জীবিত।

প্রতিবেশীরা বলছেন, পুরো গ্রামের সবাই নয়জনের মৃত্যুর খবরে স্তব্ধ। কেউ মেনে নিতে পারছেন না তাদের এভাবে চলে যাওয়া। বাড়িগুলোতে গিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য মুখে ভাষা নেই। পুরো গ্রামটি এখন শোকস্তব্ধ। সড়ক দুর্ঘটনা একটি গ্রামকেই মেরে ফেলেছে।  

হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আব্দুল বাসেদ জানান, মাওয়াগামী স্বাধীন পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঢাকাগামী মাইক্রোবাসের উপরে গিয়ে পড়লে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই বাস চালক পলাতক আছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে, বাস ও মাইক্রোবাস চালকের অসতর্কতার কারণেই এই দুর্ঘটনা। মহাসড়কে প্রকল্পের কাজ চলছিল, যার কারণে একটি লেন বন্ধ ছিল। দুইটি গাড়িই দ্রুতগতিতে এক লেনে অতিক্রম করছিল। বাসটি বর্তমানে হাইওয়ে পুলিশের হেফাজতে আছে। এই ঘটনায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।  

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন বর রুবেলের বাবা আ. রশিদ বেপারী (৭০), বোন লিজা (২৪), ভাগনী তাবাসসুম(৬) ও ভাবির বোন রেনু (১২), ফুপা কেরামত বেপারী (৭০), বরের প্রতিবেশী মফিজুল মোল্লা (৬৫), বরের ভাইয়ের ছেলে তাহসান (৪), মাইক্রোবাস চালক বিল্লাল (৪০) নিহত হয়েছেন।  

ঢাকায় মারা গেছেন রুনা (২৪), তিনি বরের বড় ভাই সোহেলের স্ত্রী।  

বাংলাদেশ সময়: ০৪২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৯
জেআইএম/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।