ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বাবা-মা কর্মস্থলে, শিশুকে গৃহকর্মীর অমানবিক নির্যাতন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৯
বাবা-মা কর্মস্থলে, শিশুকে গৃহকর্মীর অমানবিক নির্যাতন

ঢাকা: ব্যস্ততম এ নাগরিক জীবনে অনেক বাবা-মা নিজের ছোট সন্তানকে গৃহকর্মীর কাছে রাখতে বাধ্য হন। কর্মের প্রয়োজনে দিনভর আদরের সন্তানকে দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান গৃহকর্মীকে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ই প্রশ্ন উঠেছে এ গৃহকর্মীদের কাছে ছোট্ট শিশুটি কতটা নিরাপদ? সম্প্রতি গৃহকর্মীর হাতে এক শিশুকে অমানবিক মারধরের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

সিসিটিভি ফুটেজের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একজন নারী বাথরুম থেকে একটি শিশুকে ঘরের ভেতর ছুড়ে ফেলে দেন। এরপর ক্রন্দনরত শিশুটিকে টানা কয়েকদফা লাথি মারতে থাকেন ওই নারী।

ছোট্ট শিশুর প্রতি একজন নারীর এ হিংস্র আচরণ অবাক করেছে সবাইকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকার বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার মো. আল আমিন সরকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। শিশুটির মা লুৎফুন্নাহার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এ দম্পতির একমাত্র শিশু আবদুল্লাহ আবতাই আয়াতের বয়স মাত্র দুই বছর।

স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই চাকরিজীবী হওয়ায় শিশু সন্তান আয়াতকে বাসায় গৃহকর্মী শাহিদা ওরফে তাজনারার (৪৫) কাছে রেখে যেতেন। যার কাছে আদরের সন্তানকে রেখে যেতেন, সেই গৃহকর্মী শাহিদাই নির্মম মারধর করেন দুই বছরের শিশুটিকে। যেটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে।

শিশুটির বাবা আল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, গৃহকর্মী শাহিদা আমাদের আত্মীয়র মধ্যেই ছিলেন। মনে হয়েছিল তাকে বিশ্বাস করা যায়, অত্যন্ত পরহেজগার মানুষ। আগে আমার মা বাসায় থাকতেন। মা চলে যাওয়ার পর শাহিদার কাছেই ছেলেকে রেখে আমরা কর্মস্থলে চলে যেতাম। গত ২ মাস ধরে তিনি আমার বাসায় থাকছিলেন, বাবুকে দেখাশোনা করতেন।

কিন্তু বাবুকে মারধরের বিষয়ে কোনোভাবে আমার স্ত্রী সন্দেহ হওয়ায় বাসায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর কথা বলে। সে অনুযায়ী গত ৮ নভেম্বর আমি বাসায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসাই। কিন্তু ক্যামেরার বিষয়টি আমরা শাহিদাকে বুঝতে দিইনি। ক্যামেরা বসানোর ৫ দিনে যা ধরা পড়েছে, সেগুলো তেমন কিছু না। কিন্তু ১৪ নভেম্বর আমি অফিসে বসে বাসার ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করছিলাম। আইপি ক্যামেরা হওয়ায় স্মার্টফোনেই লাইভ দেখা যেত।

সেদিনই অফিসে বসে গৃহকর্মীর হাতে শিশুকে ভয়ংকর এ মারধরের ঘটনা চোখে পড়ে। বাথরুম থেকে ঘরের ভেতর ছুড়ে ফেলে ওইটুকু শিশুকে একের পর এক লাথি মারতে থাকে গৃহকর্মী শাহিদা! অতঃপর ক্রন্দনরত শিশুকে সেভাবে ফেলে দিয়েই আবারও নিজের কাজে মন দেয়। কিন্তু এটি দেখার পরেও আমি শাহিদাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি বুঝতে দিইনি। তাকে শুধু বলেছিলাম পাশের বাসার একজন ফোন করে জানালো, বাবু কাঁদছে, কিন্তু শাহিদা বিষয়টি অস্বীকার করে।

তিনি আরও বলেন, সঙ্গে সঙ্গেই আমি ও আমার স্ত্রী বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হই। বাসায় ফিরে আমার সন্তানকে জড়িয়ে ধরেছি, কোলে নিয়েছি। কিন্তু অন্যদিনের মতো চিৎকার করে ‘বাবা’ ‘বাবা’ করেনি। বাচ্চাটা মারের ভয়ে এতটাই ভীত হয়ে পড়েছিল যে, 'বাবা' বলতে ভুলেই গিয়েছিল।

শাহিদাকে কিছু বুঝতে না দিয়েই বাবুকে নিয়ে চিকিৎসক দেখালাম। চিকিৎসক বলেছেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে শারীরিকভাবে বাচ্চার তেমন বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে মানসিকভাবে সে অনেক ভয়ের মধ্যে আছে।

এ ঘটনায় শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে শাহজাহানপুর থানায় শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০১৩ (সংশোধিত ২০১৮) এর ৭০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন আল আমিন সরকার। এর ভিত্তিতে অভিযুক্ত গৃহকর্মী শাহিদাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহীদুল হক বলেন, স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরিজীবী হওয়াতে তারা বাসায় থাকতেন না। তাদের দু’বছরের শিশুটি বাসায় গৃহকর্মীর কাছে থাকতো। এ সুযোগে গৃহকর্মী শিশুটিকে মারধর করতো। বৃহস্পতিবার সিসিটিভি ফুটেজে মারধরের চিত্র পাওয়ার পর শুক্রবার পরিবার মামলা করে। সেদিনই গৃহকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে সে জেলহাজতে রয়েছে।

শিশুটির বাবা আল আমিন আরও বলেন, এত বড় ঘটনার পরেও আমরা শাহিদাকে কিছুই বুঝতে দিইনি। পুলিশ আসার আগ পর‌্যন্ত সে জানতো না যে অপরাধ করেছে। তাকে বললে হয়তো সে পালিয়ে যেতো, তখন অন্যরকম ঝামেলা হতো। এ বিষয়ে সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের মতো দম্পতিরা যেন সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৯
পিএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।