ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, মরদেহ উত্তোলন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, মরদেহ উত্তোলন কবর থেকে দিয়ার মরদেহ উত্তোলন করে নিয়ে আসা হচ্ছে। ছবি: বাংলানিউজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ‘ভুল চিকিৎসায়’ নওশিন আহম্মেদ দিয়া (২৯) নামে এক প্রসুতির মৃত্যুর অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের বেসরকারি ক্লিনিক খ্রিস্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালের তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

মামলা দায়েরের পর ময়নাতদন্তের জন্য শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শহরের শেরপুর কবরস্থান থেকে দিয়ার মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তনিমা আফ্রাদের উপস্থিতিতে মরদেহের সুতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন সদর মডেল থানার উপ- পরিদর্শক (এসআই) নারায়ণ চন্দ্র দাস।


গত বুধবার দিয়ার বাবা গেদু মিয়া বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মুন্সেফপাড়ার খ্রিস্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালের স্বত্ত্বাধিকারী ডা. ডিউক চৌধুরী ও তার ক্লিনিকের দুই চিকিৎসক অরুনেশ্বর পাল এবং মো. শাহাদাৎ হোসেন রাসেল।

আসামিরা দিয়ার মৃত্যুর পর তার মুখে অক্সিজেন লাগিয়ে দ্রুত ঢাকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পরে ঢাকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান দিয়া কয়েক ঘণ্টা আগেই মারা গেছেন।

আদালতের বিচারক অভিযোগটি আমলে নিয়ে নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার জন্য সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি সদর মডেল থানা নথিভুক্ত করে। পরে আদালতের নির্দেশে শুক্রবার ময়নাতদন্তের জন্য দিয়ার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়।

এ সময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তনিমা আফ্রাদ বলেন, আদালতের নির্দেশে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

মামলার এজাহার বলা হয়, শহরের মুন্সেফপাড়ার ক্রিসেন্ট কিন্ডার গার্টেন স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা নওশিন আহম্মেদ দিয়া প্রসব বেদনা নিয়ে গত ৩০ অক্টোবর খ্রিস্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগেই দিয়াকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ায় হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী এলাকায় তার স্বামীর বাড়িতে নেওয়া হয় তাকে।  

৪ নভেম্বর ভোরে দিয়ার প্রচণ্ড মাথা ব্যথা শুরু হলে তাকে আবারও ওই হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের স্বত্ত্বাধিকারী ডিউক চৌধুরী ও চিকিৎসক অরুনেশ্বর পাল অভি এবং মো. শাহাদাত হোসেন রাসেল ‘ভুল ইনজকশন এবং ওষুধ’ প্রয়োগ করার পর দিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

দিয়া অজ্ঞান হওয়ার বিষয়টি গোপন করে চিকিৎসার নামে সময়ক্ষেপন করতে থাকেন তারা। এ সময় দিয়ার স্বজনরা মেডিসিনের অভিজ্ঞ চিকিৎসককে ডাকতে বললে ডিউক ও বাকি দুই চিকিৎসক চুপ থাকেন। এক পর্যায়ে দিয়ার মৃত্যু হলেও তার মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে ওইদিন দুপুর ১টার দিকে দ্রুত তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। অ্যাম্বুলেন্সে করে দিয়াকে নিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে পৌঁছানোর পর সেখানকার চিকিৎসকরা কয়েক ঘণ্টা আগেই দিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান।

সপরিবারে দেশের বাইরে অবস্থান করায় মামলার ব্যাপারে ডা. ডিউক চৌধুরীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন জানান, আদালতের নির্দেশে মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য দিয়ার মরদেহ পুনরায় করব থেকে উত্তেলন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘন্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।