ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

আসকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৯
আসকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’

ঢাকা: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইন ও সালিশ কেন্দ্রকে (আসক) জরিমানা ও কার্যালয় ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশকে নিয়মবহির্ভূত বলে আখ্যায়িত করেছে সংস্থাটি।

আদালতের সার্বিক কার্যকলাপ ও এমন আদেশকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে এমন পরিস্থিতিতে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা।



শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর লালমাটিয়ায় আসক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানানো হয়।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত আসককে দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং দুই মাসের মধ্যে কার্যালয় ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আসকের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) আসক কার্যালয় ভবন মালিকের রাজউকের নকশাবহির্ভূত গ্যারেজের অংশে অভিযান চালান ভ্রাম্যমান আদালত। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার আসক কার্যালয়ে এসে আবাসিক এলাকায় অফিস পরিচালনার কারণ জানতে চান। আসকের পক্ষ থেকে সব তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয় এবং জানানো হয়, ভাড়াটিয়া হিসেবে সব শর্ত মেনেই আসক অফিস পরিচালনা করছে।

তিনি বলেন, সারাদেশে আসকের একটিই কার্যালয় এবং এখানে শুধু দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। আসক কোনো ধরনের আর্থিক কিংবা ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে না। বাংলাদেশ এনজিও ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নিয়েই আসক দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করে আসছে।

সবকিছু জানানোর পরেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২ এর ৩(ক) ধারা মতে, আসককে আগামী দুই মাসের মধ্যে কার্যালয় ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনার পাশাপাশি দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন। অথচ আইনের ওই ধারাটি ভবন মালিক, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আসক শুধু ভাড়াটে হিসেবে ভবনটি ব্যবহার করছে। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত বিষয়গুলো আমলে না নিয়ে জরিমানা বহাল রাখেন এবং জরিমানা আদায় করেন।

শীপা হাফিজা অভিযোগ করে বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন ২০০৯ অনুযায়ী, অভিযোগ অস্বীকার করে বিচারিক আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত এসব যুক্তি না মেনে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক স্বাক্ষর আদায় করেন। এমনকি আসকের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করলে ম্যাজিস্ট্রেট অফিস সিলগালাসহ কর্মীদের গ্রেফতারের হুমকি দেন।

বিশেষ কী উদ্দেশ্যে ইমারত নির্মাণ আইনে আসককে জরিমানা করা হয়েছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আদালত পরিচালনার শেষ পর্যায়ে আদেশের কপি আসককে দেওয়ার অনুরোধ করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি লিখিত আবেদন করলেও তিনি আদেশের কপি দেননি।

আদালতের উদ্দেশ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি সেভাবে জানি না। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের পদক্ষেপ আইন অনুযায়ী মনে হয়নি। তিনি আমাদের গ্রেফতারের হুমকি দিচ্ছিলেন, এমনকি আমার এক সহকর্মীকে পুলিশ প্রহরায় একটি কক্ষে আবদ্ধ করে রাখেন। এতে মনে হয়েছে কেউ না কেউ বিশেষভাবে আসকের উপর ক্ষুব্ধ, জানি না তারা কারা। এছাড়া, ভ্রাম্যমাণ আদালত এলে এলাকার বিভিন্ন ভবনে যান। কিন্তু তিনি শুধু আমাদের ভবনেই অভিযান চালিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, ইমারত নির্মাণ আইনের সঙ্গে ভাড়াটের সংশ্লিষ্টতা নেই। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যে মানসিকতা নিয়ে এসেছেন, আমাদেরই ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছেন। বাড়িওয়ালা সামনে বসা থাকলেও তাকে প্রশ্ন না করে আমাকে করেছেন। এতে মনে হয়েছে তাদের কোনো উদ্দেশ্য ছিল।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে আসকের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব তাহমিনা রহমান বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে যে অর্ডার দেওয়া হয়েছে এটিকে আইনানুগ বলে মনে করছি না। এটা আমরা একেবারেই মেনে নিচ্ছি না। আইন অনুযায়ী যে পদক্ষেপের রাস্তা খোলা রয়েছে, সাংবিধানিকভাবে যে পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে অনুযায়ী আমরা সব পদক্ষেপ নেবো। এ বিষয়ে আমরা শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবো, তবে যাই করবো স্বচ্ছতার সঙ্গে করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৯
পিএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।