ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আসছে শীত, চলছে খেজুরগাছের পরিচর্যা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
আসছে শীত, চলছে খেজুরগাছের পরিচর্যা

বগুড়া: ঋতুচক্রে কার্তিক-অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল। হেমন্তের মাঝামাঝিতে হালকা শীত পড়তে শুরু করে। একইসঙ্গে প্রকৃতিতে শিশিরবিন্দু জানান দেয় শীতের আগমনী বার্তা। আর সেই শীতের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে খেজুর রসের।

গ্রাম-বাংলার অনেক ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসলেও খেজুরের রস এখনও টিকে আছে। তবে, ব্যাপক পরিসরে না হলেও প্রত্যেক বছরের শীত মৌসুমেই দেখা মেলে এই খেজুর রসের। তাই তো আগম খেজুরের রস পেতে গাছ পরিচর্যায় নেমেছেন বগুড়ার গাছিরা।
 

বগুড়ার ১২ উপজেলার মধ্যে শাজাহানপুর, আদমদীঘি, কাহালু, শেরপুর, নন্দীগ্রাম বরেন্দ্রখ্যাত উপজেলা হিসেবে পরিচিত।  

খেজুরের রস নামাতে কার্তিকের প্রথম থেকেই গাছ পরিচর্যা শুরু করেছেন জেলার গাছিরা।

ধাপে ধাপে চলে রস নামানোর কাজ। ইতোমধ্যে গ্রামাঞ্চলে গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস নামানোর কাজে নেমে পড়েছেন।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায় এসব উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলা মিলে বগুড়ায় প্রায় ৪৩ হাজার ৫০০ মতো খেজুর গাছ রয়েছে। তবে কালের আবর্তে খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধ খেজুরগাছ। গাছিরা প্রথমে গাছের মাথা থেকে ডালপালা কেটে পরিষ্কার করেন। পরে নির্দিষ্ট স্থান হালকা করে কেটে পরিষ্কার করেন তারা। এর কিছুদিন বিরতির পর আবার কয়েক দফায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছেটে ফেলা হয় গাছের ছাল। গাছ কাটার এ কাজে গাছিরা ছ্যান (স্থানীয় ভাষায়) নামে ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেন। গাছ কাটার সময় খেজুর গাছের সঙ্গে নিজেদের শক্তভাবে দড়ি দিয়ে বেঁধে নেন তারা। তাদের সঙ্গে থাকে বাঁশের তৈরি পাত্র। যার ভেতর থাকে গাছ পরিষ্কার করার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। গাছ তৈরির প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর থেকেই মূলত রস নামানোর পর্বটা শুরু হয়।  

গাছের মাথার নির্দিষ্ট স্থানে বাঁশের বানানো দু’টি চোখা খুঁটি পোতা হয়। সঙ্গে দড়ি বা সুতা বেঁধে মাটির পাত্র ঝুলে দেওয়া হয়। পাত্রের ভেতর রস পড়ার জন্য বাঁশের তৈরি নালার মতো ভিন্ন একটি খুঁটি পুঁতে দেওয়া হয় সেই গাছের সঙ্গে। এভাবেই গাছির নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে খেজুর রস।
খেজুরগাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছি
গাছি তোফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শীতের সকালে মানুষ খেজুর রসে মুড়ি মাখিয়ে খেতে পছন্দ করে। গ্রামে গ্রামে চলে খেজুর রসের পায়েস, পিঠা-পুলি তৈরির ধুম। মেয়ে জামাই ও স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে বাড়ি বাড়ি চলে শীতের বাহারি পিঠা উৎসব। খেজুর রসে বানানো হয় নালী, দানাদার ও পাটালি গুড়ও।

গাছি উজ্জল শেখ, তোজাম আলী বাংলানিউজকে বলেন, গাছের মাথা হালকাভাবে ছেঁটে দিয়ে প্রতিদিন বিকেলে নির্ধারিত স্থানে মাটির পাত্র ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন ভোরে গাছ থেকে পাত্র নামিয়ে আনা হয়। গাছভেদে দু’থেকে চারকেজি হারে রস পাওয়া যায়। সপ্তাহে দু’ থেকে তিনদিন পরপর রস সংগ্রহ করা হয়।

এসব গাছিরা আরও বলেন, বাণিজ্যিকভাবে কেউ খেজুর গাছ লাগায় না। প্রাকৃতিকভাবেই এসব খেজুরগাছ জন্ম নিয়েছে। পতিত জমি, ভিটা, জমির আইলসহ বিভিন্ন স্থানে এসব খেজুর গাছের দেখা মেলে। একটি সময় এ জেলায় বিপুল সংখ্যক খেজুর গাছ ছিল। মানুষ সিংহভাগ খেজুর গাছ কেটে ফেলেছেন। এছাড়াও খেজুর গাছের বয়স বাড়ার কারণে সব গাছ থেকে রস উৎপাদনও হয় না। আবার কিছু কিছু খেজুর গাছ আছে দেখতে অনেক মোটা তাজা হলেও সেই গাছ থেকে রস পাওয়া যায় না।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, নভেম্বর থেকে শুরু করে মোটামুটি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খেজুর রস সংগ্রহ করা যায়। ইতোমধ্যেই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গাছিরা এই রস সংগ্রহে মাঠে নেমে পড়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
কেইউএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।