ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

রূপগঞ্জে মৎস্যচাষিকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৯
রূপগঞ্জে মৎস্যচাষিকে গাছে বেঁধে নির্যাতন রূপগঞ্জে মৎস্যচাষিকে গাছে বেঁধে নির্যাতন। ছবি: বাংলানিউজ

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মজনু চৌধুরী নামে এক মৎস্যচাষিকে গাছে বেঁধে নির্যাতন চালিয়েছে একদল সন্ত্রাসী।

সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে পুলিশের কাছে সহযোগিতা না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের করেন ওই ভুক্তভোগী। তিনি রূপগঞ্জ উপজেলার আতলাপুর গ্রামের মৃত রমিজ উদ্দিনের ছেলে।

মজনু চৌধুরীর অভিযোগ, চাষ করা মৎস্য খামার জবরদখল করে মাছ লুট করে উল্টো তাকেই চুরির অপবাদ দেওয়া হয়েছে। সোমবার ভোরে মসজিদ থেকে ডেকে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালানো হয়। এ সময় নির্যাতনকারীরা হুমকি দিয়ে বলেছে, একটি মামলা করলে তার নামে ১০টি মামলা দেওয়া হবে।  বেশি বাড়াবাড়ি করলে এলাকা ছাড়া করা হবে, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি তাদের পকেটে রয়েছে।  

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মিজানুর রহমানের বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করি। পাশাপাশি কৃষিকাজ, মাছচাষ ও তরিতরকারি চাষ করি। বাড়ির মালিক মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী মেহেরুন্নেছা মারা যাওয়ার পর থেকে বাড়িঘর দখল করতে নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন চালিয়ে আসছে একই এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে মাহাবুর, মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে আকবর মিয়া, আইয়ুব মিয়া, ইয়ানুছ মিয়ার ছেলে মাজাহারুল ও নাজমুলসহ তাদের নিয়োজিত সন্ত্রাসীবাহিনী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মজনু বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ করে ছয় বিঘার তিনটি পুকুরে লিজ নিয়ে রুই, কাতলা, মৃগেল, ব্রিগেট, গ্রাস কার্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেছেন। পুকুরের চারপাশের পাড়ে লাউসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেন তিনি। তিন মাস আগে এক বিঘার একটি পুকুর দখল করে নেয় সন্ত্রাসীরা। বাকি দু’টি পুকুরের মাছ ধরে বিক্রি করে দেয় তারা। পুকুর পাড়ে চাষ করা লাউসহ সবজি গাছ কেটে ফেলে। পুকুরে গেলেই হত্যা ও হামলার হুমকি দেয়। এসব ব্যপারে একাধিকবার ভোলাব পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রকে অবহিত করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এদিকে, এক মাস আগে অপর একজনের একটি পুকুরে মাছ চুরির দায়ে চারিতালুক এলাকার মানিক মিয়ার ছেলে মোশারফ হোসেন নামের এক যুবককে আটক করে মাছসহ জাল গলায় পেঁচিয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতন চালায় ওই সন্ত্রাসীরা। পরে, মোশারফকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। পূর্বশত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা মসজিদ থেকে ডেকে নিয়ে যায় মজনু চৌধুরীকে। মোশারফ হোসেনের সঙ্গে তাকেও চুরির অপবাদ দিয়ে নারিকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালায় সন্ত্রাসীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় মজনুকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক মাস চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে এসে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগমের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। এসময় ইউএনও মমতাজ বেগম এ ঘটনার সঠিক বিচার ও পুকুর ফেরতের আশ্বাস দেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা কথা বলতে রাজি হননি।

অন্যদিকে, চুরির দায়ে মামলা না নিয়ে পুলিশ নির্যাতিত মোশারফ হোসেনকে ২০ লিটার চোলাই মদ দিয়ে একটি মাদকের মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেল হাজতে পাঠায় বলে অভিযোগ উঠেছে।

ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা কাজ করছেন।

ইউএনও মমতাজ বেগম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওসিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তিনি ব্যবস্থা না নিলে সরেজমিনে এসিল্যান্ডকে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্যাতন জুলুমবাজ ও দখলবাজদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৯
এমআরপি/এফএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।