ঢাকা: ঈদের এখনো বেশ কয়েকদিন বাকি থাকলেও রাজধানীর বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ঘাট ও রেল স্টেশনে উপচেপড়া ভিড় দেখে বুঝতে বাকি থাকে না যে ঈদকেই ঘিরে চলছে বাড়িফেরা মানুষের শেষ মুহূর্তের ছোটাছুটি। রোববার থেকেই নাড়ির টানে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন রাজধানীবাসীরা।
এদিকে বাস, ট্রেন, লঞ্চের টিকিট যেন হয়ে উঠেছে সোনার হরিণ। কাউন্টারে কাউন্টারে ধর্ণা দিয়েও একটা টিকিট সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। আর এই টিকিট সংকটকে পুঁজি করেই বাড়তি আয়ের মওকা পেয়ে গেছে সুযোগ সন্ধানীরা। ‘অন্যভাবে টিকিট ম্যানেজ’ করে দেওয়ার কথা বলে যাত্রীদের কাছ থেকে গলাকাটা দাম আদায় করে নিচ্ছে তারা।
দূরপাল্লার কোচগুলোর অধিকাংশ কাউন্টারেই ৬ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনো টিকিট নেই। কাউন্টার ম্যানেজাররা বলছেন, ওই পাঁচ দিনের টিকিট ২৮ আগস্টের মধ্যেই ‘আগাম বিক্রি’ হয়ে গেছে। এখন এসব কাউন্টারগুলো থেকেই ‘ঈদ স্পেশাল সার্ভিস’ নামে কয়েকগুণ বেশি দামে টিকিট বিক্রির নয়া কৌশল চালানো হচ্ছে। গত দু’দিন রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালী টার্মিনাল ও শ্যামলী, কল্যাণপুর, ফকিরাপুলের বাস কাউন্টারগুলো ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
শনিবার সকাল ১১টার মধ্যেই গাবতলী বাস টার্মিনালে শত শত যাত্রীর ভিড় দেখা যায়। টার্মিনাল জুড়ে শুধু হৈ-চৈ, চিৎকার-চেঁচামেচি, যাত্রীদের ব্যাগ নিয়ে টানাহেঁচড়া। চলছে টিকিট নিয়ে নানা জালিয়াতি কাজ-কারবার। কুলিরাও যেন বেপরোয়া। আছে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের জবরদস্তি আর অজস্র দুর্ভোগের খতিয়ান। যেন ‘মগের মুল্লুক’। কিছুই করার নেই।
তবুও ছুটছে মানুষ উর্ধ্বশ্বাসে। উপচেপড়া ভিড়, ঠেলা-ধাক্কা, বাধা-বিপত্তি কিছুই মানছে না কেউ। যানবাহনের ছাদে, বাম্পারে, পা-দানির হ্যান্ডেলে ঝুলে- যে যেভাবে পারছে; সেভাবেই যাচ্ছে গ্রামে, বাড়ি-ঘরে।
সায়েদাবাদে বিলাসবহুল বাসের অগ্রিম টিকিট কিনে অনেকে টার্মিনালে পৌঁছে অবাক হচ্ছেন। বিলামবহুল বাসের পরিবর্তে যাত্রীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হচ্ছে লক্কর-ঝক্কর মার্কা পুরনো বাস।
প্রতারিত মিয়াজ আলী চৌধুরী, কয়েছ, আব্দুল মজিদসহ অনেকেই বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি’র কাছে অভিযোগ করে জানান, সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটের অনেক যাত্রী একশ্রেণীর পরিবহন ব্যবসায়ীর প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। প্রতারকরা এক গাড়ির টিকিট বিক্রি করে অন্য গাড়িতে তুলে দিয়েই সটকে পড়ছে।
সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে যাওয়া ৩০টিরও বেশি রুটে এই অব্যবস্থা চোখে পড়ার মত। টার্মিনালের পরিবহন শ্রমিকরা জানান, রাতে যেসব দূরপাল্লার কোচ ছাড়া হবে সেগুলো তুলনামূলক ভাল।
ঘরে ফেরা নিশ্চিত করার জন্য গাবতলী টার্মিনালের বিভিন্ন কাউন্টার থেকে চড়ামূল্যে টিকিট সংগ্রহ করেও নওগাঁ সাপাহারের সেলিম শেষমেশ নানা দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন। একই গাড়িতে একই সিটের জন্য তিন-চার জনের বুকিং দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ায় তিনি ছুটে যান গাবতলী টার্মিনালে, টিকিট কাউন্টারে নিজের টিকিটটা আগাম যাচাইয়ের জন্য ছোটাছুটি করেন।
কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিট প্রার্থীদের উপচে পড়া ভিড় আর চোখে পড়ছে না। এখন চলছে বাড়িমুখে যাত্রা। সদরঘাটে লঞ্চ কেবিন বা সাধারণ সিটের আশাও করছেন না যাত্রীরা। তারা লঞ্চের ডেকে বা ছাদে চাদর বিছিয়ে একটু বসার জায়গা পেলেই বর্তে যাচ্ছেন। যারা টিকিট সংগ্রহের যুদ্ধে রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল বা লঞ্চঘাট ছোটাছুটি করেও ব্যর্থ হয়েছেন-তারা এবার ছুটছেন রেন্ট-এ-কারের প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বেশি টাকা লাগলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে কিছুটা আয়েশেই যেতে চান বাড়িঘরে।
মতিঝিলের একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা সাজ্জাদুল হাসান জানান, রেন্ট-এ-কারের ভাড়া শুনে ভিরমি খাওয়ার মতো অবস্থা তার।
তিনি জানান, ঢাকা থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর যেতে একটি মাইক্রোবাস যেখানে সর্বত্র সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায় ভাড়া পাওয়া যেতো, ঈদ উপলক্ষে সেখানে ভাড়া দাবি করা হচ্ছে ১০ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫১ ঘন্টা ১৪৫৭ ঘণ্টা, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১০