ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নূর হোসেনের পৈত্রিক ভিটায় তার স্মৃতি রক্ষার দাবি স্বজনদের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৯
নূর হোসেনের পৈত্রিক ভিটায় তার স্মৃতি রক্ষার দাবি স্বজনদের শহীদ নূর হোসেনের পৈত্রিক ভিটায় স্মৃতি রক্ষার দাবি স্বজনদের

পিরোজপুর:  রোববার ( ১০ নভেম্বর) ছিল শহীদ নূর হোসেন দিবস। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সংগ্রামের এক প্রতীক নূর হোসেন। কিন্তু নূর হেসেনের পৈত্রিক ভিটা রক্ষার উদ্যোগ নাই কারো। ১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষ  ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেই সংগ্রামের এক নিবেদিত কর্মী হিসেবে নূর হোসেন ছিলেন প্রতিবাদি যুবক। তিনি  জীবন্ত পোস্টার হয়ে ঢাকার রাজপথে নেমে এসেছিলেন।  

তার বুকে পীঠে 'স্বৈরচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি' পাক লিখে হাজারো মানুষের প্রতিবাদে অংশ নেন যুবক নূর হোসেন। সেদিন জনতার প্রতিবাদ মিছিলে স্বৈরাচারের সশস্ত্র বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে নূর হোসেনের বুক ঝাঁঝরা করে দেয়।

প্রতিবাদী নূর হোসেনের বুকের রক্তে সেদিন ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিলো।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে জীবনদানকারী শহীদ নূর হোসেনের জন্ম ভিটা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার  প্রত্যন্ত গ্রাম  সাপলেজা ইউনিয়নের ঝাঁটিবুনীয়া  গ্রামে। ওই বাড়িটির স্মৃতি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন তার বংশধর ও স্থানীয় গ্রামবাসি। এই যে পৈত্রিক ভিটায় তার স্মৃতি সুরক্ষায় আজও গড়ে ওঠেনি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ।

মঠবাড়িয়া উপজেলা সদর হতে ১৪  কিলোমিটার দূরে শহীদ নূর হোসেনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তার বংশের রোকজনের সঙ্গে কথা হয়। নূর হোসেনের বড় চাচা মৃত মোকলেসুর রহমানের দুই ছেলে ওই বাড়িতে আলাদা বসবাস করেন। নূর হোসেনের পৈত্রিক ভিটায় তার চাচাতো ভাই স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম মো. রুহুল আমীন হাওলাদার বসবাস করেন।
তিনি জানান, নূর হোসেনের বাবা ও চাচারা পাঁচ ভাই । তার বাবা মজিবর রহমান হাওলদার ২০০৫ সালে  মারা যান। তিনি পাঁচ ভাইদের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন।

এ ছাড়া  নূর হোসেনের অপর তিন চাচা মোকলেসুর রহমান হাওলাদার, চান মিয়া হাওলাদার, রত্তন আলী হাওলাদার মারা গেছেন । নূর হোসেনের ছোট চাচা লাল মিয়া হাওলাদার বেঁচে আছেন। তিনি রাঙামাটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তবে গ্রামে বড় চাচা মৃত মোকলেসুরের সন্তানরা ছাড়া বংশধরদের কেউ থাকেন না।

নূর হোসেনের পৈত্রিক ভিটায় বসবাস করা  তার চাচাত ভাই মো. রুহুল আমীন হাওলাদার  জানান, তার চাচা মজিবর রহমান (নূর হোসেনের বাবা) দেশ স্বাধীনের আগে কাজের সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় যান।  সেখানে তিনি অটো রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে প্রায়ই  গ্রামে আসতেন।  নূর হোসেনের জন্ম ঢাকায়। তারা চার ভাই ও এক বোন। নূর হোসেন দ্বিতীয় সন্তান।  

তার অপর ভাইয়েরা হলেন, আলী হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও বোন শাহানা বেগম। সকলেই ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তবে চাচা মজিবর রহমান সন্তানদের নিয়ে গ্রামে বেড়াতে আসতেন। নূর হোসেনও গ্রামে আসত।
 
তখন  মোবাইল ফোনের ব্যবহার ছিল না।  আমরা ঘটনার দিন রাত ১২টার দিকে উপজেলা টেলিফোন অফিসের মাধ্যমে গ্রামে খবর পাই  যে,  নূর হোসেন ঢাকায় গুলিতে মারা গেছেন। দুইদিন পর আমরা  বিস্তারিত জানতে পারি। নূর হোসেন শহীদ হওয়ার পর আমার চাচা কয়েকবার গ্রামের বাড়ি আসছেন । ২০০৫ সালে তিনি মারা যান ।  তবে চাচাতো ভাই ও বোনের সাথে আমাদের কথা হয়। তারা ব্যস্ততায় গ্রামে বেড়াতে আসতে পারেন না।  

তিনি বলেন, আমার ভাই গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছেন । তবে জন্মভিটায় শহীদ ভাইয়ের স্মৃতি রক্ষায় আজও কোনো ব্যবস্থা হয়নি। শহীদ ভাইয়ের নামে একটা এবতেদায়ী মাদরাসা করেছিলাম কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা এখন অচল হয়ে পড়ে আছে। গ্রামের কাঁচা রাস্তায় কেবল এ বছর ইট বিছানো হয়েছে।  গ্রামটি আজো অবহেলিত।  মাদারাসাটি চালু করতে চাই, পাশে একটি পাঠাগার আর শহীদ ভাইয়ের একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানাই।  

জানা গেছে, ঢাকায় মঠবাড়িয়া বাসি কয়েকজন তরুণ মিলে শহীদ নূর হোসেনের স্মৃতি রক্ষায় জাগো লক্ষ নূর হোসেন নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এছাড়া নূর হোসেনের গ্রাম ঝাঁটিবুনীয়া ও পূর্ব সাপলেজা গ্রামের কতিপয় তরুণ মিলে গড়ে তোলেন নূর হোসেন স্মৃতি পরিষদ। আর্থিক সংকটে  সংগঠন দু’টি শহীদ নূর হোসেন দিবসে স্মরণ সভার আয়োজন ছাড়া কিছুই করতে পারছে না।

নূর হোসেন স্মৃতি পরিষদের অন্যতম উদ্যোক্তা মো. নূরুল আমীন রাসেল বলেন, ১৯৯২ সালে আমরা গ্রামের কয়েক তরুণরা মিলে সংগঠনটি গড়ে তুলি। কিন্তু সরকারী কোন পৃষ্ঠপোষকতা ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের তেমন সাড়া না পেলেও আমরা তরুণরা মিলে দিবসটি কোনোমতে পালন করে আসছি। তবে শহীদ নূর হোসেনের পৈত্রিক ভিটায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও একটি পাঠাগার নির্মাণের দাবি জানাই।

এ বিষয়ে সাপলেজা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিরাজ মিয়া বলেন, আমি গর্বিত যে শহীদ নূর হোসেন আমার ইউনিয়নের সন্তান।  তার পৈত্রিক ভিটায় স্মৃতি রক্ষা  করা হলে আগামী প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে।

মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, শহীদ নূর হোসেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক। সে  শুধু  মঠবাড়িয়াই নয়, সে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার  আন্দোলনে বাংলার অহংকার। তার জীবনদানের ইতিহাসের জন্য আমরা গর্বিত। তবে তার স্মৃতিরক্ষায় পৈত্রিক ভিটে-মাটিতে কোনো কিছু গড়ে ওঠেনি। আমি মঠবাড়িয়াবাসির পক্ষ হতে তার পৈত্রিক ভিটে মাটিতে স্মৃতিরক্ষার দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৯
-/ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।