ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘ফেনী নদীর চুক্তি নিয়ে জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৯
‘ফেনী নদীর চুক্তি নিয়ে জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ’

ফেনী: ফেনীতে প্রশাসনিক বাধায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করতে পারেনি ভাসানী অনুসারী পরিষদ বিশেষজ্ঞ দল। বুধবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে ফেনীর একাডেমি এলাকার প্রিন্স কমিউনিটি সেন্টারে এ সভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসনিক বাধার কারণে তা করা যায়নি বলে পরিষদের সদস্যরা জানায়।

পরে কমিউনিটি সেন্টারে বাইরে দাঁড়িয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্যরা।  

এসময় ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশের (ভারত) জনগণের খাবার পানির জন্য সম্পাদিত চুক্তির বিপক্ষে বাংলাদেশের মানুষের অবস্থান নয়।

কিন্তু ফেনী নদীর পানি যদি অন্য কাজে লাগানো হয়, অথবা বন্ধুদের স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে আমাদের হাজারো জেলে, কৃষক অসহায় হয়ে পড়ে, তাহলে ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার চুক্তিতে দেশীয় স্বার্থ সংরক্ষিত হয়নি বলে প্রতিয়মান হবে।  

তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার চুক্তি করা নিয়ে জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সেটি লক্ষ্য করে পানি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে ফেনী নদীর উৎপত্তিস্থল পরিদর্শন করি এবং আমরা নিশ্চিত হয়েছি ফেনী নদী কোনো আন্তর্জাতিক নদী নয়। এটি বাংলাদেশের নদী। কাজেই অমিমাংসিত ৫৪টি অভিন্ন নদীর হিস্যার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত ফেনী নদীর পানি দেওয়া আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীর বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা গণবিরোধী একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা রেখে যাচ্ছি। যা স্বাধীন দেশের মানুষ হিসেবে দুঃখজনক।  

প্রতিনিধি দলের সদস্য ও গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী বলেন, বন্ধুপ্রতিম ভারতের জনগণের কষ্ট, প্রয়োজনীয়তা এবং মানবিক বিবেচনায় সম্পাদিত ফেনী নদীর পানি নেওয়া চুক্তিকে অশ্রদ্ধাভরে দেখছি না। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাম্প দিয়ে পানি তুলে নেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। কারণ চুক্তিতে যে পরিমাণ পানি তোলার কথা বলা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি পানি অবৈধভাবে নেওয়া হচ্ছে।  

‘এটি বন্ধ না হলে ফেনীর বিশাল একটি অংশ মরুভূমিতে পরিণত হবে। ব্যাহত হবে এখানকার কৃষি ও মৎস্য চাষ। ’

পানি বিশেষজ্ঞ ও জল পরিবেশ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. ম ইনামুল হক বলেন, সরেজমিনে আমরা দেখেছি ফেনী নদীর অবস্থানগত কারণে পানি ব্যবহারে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা অতি জরুরি। তাই সম্পাদিত চুক্তি উত্তম পন্থা। কিন্তু অবৈধ প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন নেওয়া ৭০ কিউসেক পানি প্রত্যাহার নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। পাশাপাশি তিস্তার হিস্যা যেখানে আমরা পাচ্ছি না, সেখানে চুক্তির ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার নিয়ে দেশবাসী উদ্বিগ্ন।

তিনি বলেন, আমাদের উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মাধ্যমে জানা যায়, ভারত ৩৬টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্পের মাধ্যমে ৭০ কিউসেকের বেশি পানি কোনোরকম সমঝোতা ছাড়াই উত্তোলন করে যাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের মানুষ ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তিসহ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার বিষয়টি মীমাংসা ছাড়াই ফেনী নদীর পানি ভারতে দেওয়ার চুক্তিতে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- ইউনুছ মৃধা, ফরিদ উদ্দিন, মো. ইসমাইল, কেএম রকিবুল ইসলাম রিপন এবং ভাসানী অনুসারী পরিষদের ফেনী ও স্থানীয় সদস্যরা।

ফেনী নদীর উৎস পরিদর্শনে আসা ভাসানী অনুসারী পরিষদের বিশেষজ্ঞ দল সম্প্রতি সম্পাদিত সমঝোতা চুক্তি এবং অবৈধভাবে ৩৬টি পাম্পের মাধ্যমে পানি উত্তোলন বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য কর্মসূচি নির্ধারণ করে গত মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর)। নদীর উৎসস্থল ফেনীছড়া, তাইন্দং ছড়া এবং আচালং ছড়ার মিলনস্থল ফেনী নদী পরিদর্শনে গিয়ে পুলিশি বাধায় ফিরে আসে ভাসানি অনুসারী পরিষদ।  

এরপরই ফেনীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কর্মসূচি ঠিক করা হয়। সে অনুযায়ী বুধবার সকালে বিশেষজ্ঞ টিম শুভপুর জগন্নাথ সোনাপুরেরর আমলীঘাট থেকে মুহুরী প্রজেক্ট পর্যন্ত জলপথ পরিদর্শন করেন।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের ভাষ্য, ফেনী নদী থেকে চুক্তির অতিরিক্ত পানি প্রত্যাহারের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের পরিবেশের ওপর। ফেনী নদী পানির ওপর মুহুরী, কহুয়া, কালিদাশ পাহাড়িকাসহ অসংখ্য ছড়া ও খালের অস্বিত্ব নির্ভর করছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রত্যাহার ও বর্ষাকালে ভারত একতরফা বাংলাদেশে পানি ছেড়ে দিয়ে কৃত্রিম বন্যা সৃষ্টিসহ নানা দুর্যোগের কারণে প্রতিবছর মুহুরী সেচ প্রকল্পের ইরি বোরো আবাদ আশঙ্কাজনক হারে কমছে।  

ফেনী নদী থেকে চুক্তির পানি বা চুক্তির অতিরিক্ত পানি ভারত প্রত্যাহার করে নিলে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে শুষ্ক মৌসুমে ইরি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গড়ে ওঠা দেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম মুহুরী সেচ প্রকল্পের আওতায় ফেনী নদী, মহুরী-কহুয়া নদীর তীরবর্তী জমিতে শুষ্ক মওসুমের আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

ভারত ফেনী নদীর পানি নিয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে দেশের ষষ্ঠ মুহুরী সেচ প্রকল্প। ফেনী নদীর পানির ওপর চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার কয়েক কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। তীরবর্তী কয়েক লাখ মানুষ ফেনী নদীর পানির ওপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। কয়েক হাজার জেলে পরিবারের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস ফেনী নদী।  

পানির অভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে কয়েক লাখ মৎস খামার। ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেওয়ার কারণে সমগ্র অঞ্চলে দেখা দিতে পারে মরুময়তা, ধ্বংস হবে প্রকৃতি ও প্রতিবেশ-পরিবেশ। বন্ধ হয়ে যেতে পারে সাগর মোহনায় মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকার পর্যটনের বিশাল সম্ভাবনার দ্বার। কারণ ফেনী নদীই মুহুরী নদীর ৮০ ভাগ পানির উৎস।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৯
এসএইচডি/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।