ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সৌদি থেকে ফিরতে চান নির্যাতিত সুমি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৯
সৌদি থেকে ফিরতে চান নির্যাতিত সুমি সুমি আক্তার। ছবি: সংগৃহীত

আশুলিয়া (ঢাকা): সংসার যখন টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে চলছে তখন একটু সুখের আশায় ভিনদেশে যেতে চান সুমি আক্তার। তখন বিনামূল্যে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে সেটি হাতছাড়া করতে চাননি তিনি। দালালদের দেখানো লোভ আর বিদেশে গিয়ে ভালো টাকা আয়ের আশ্বাসে বিনামূল্যে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে পাড়ি জমান নিম্নবিত্ত ঘরের এই গৃহবধূ। 

কিন্তু দালালরা বিদেশে পাঠানোর কথা বলে যে বিক্রি করে দিয়েছে সে কথা জানতেন না সুমি। সৌদি যাওয়ার সপ্তাহ খানেক পর থেকে শুরু হয় তার ওপর মারধর, যৌন হয়রানিসহ নানা নির্যাতন।

সুমি আক্তার পঞ্চগড় জেলার বোদা সদর থানার রফিকুল ইসলামের মেয়ে। দুই বছর আগে আশুলিয়ার চারাবাগের নুরুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

সম্প্রতি ফেসবুকে কান্নাজড়িত কন্ঠে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া পাশবিক নির্যাতনের কথা বলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান সুমি। পরবর্তীতে ভিডিওটি ভাইরাল হয়।

ভিডিওটিতে সুমি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমি আমার সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। আমাকে আমার পরিবারের কাছে নিয়ে যান। এখানে আমার ওপর অনেক নির্যাতন হয়। আর কিছুদিন থাকলে হয়তো মরেই যাবো। তাই প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে অনুরোধ আপনারা আমাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যান। ’

জিডির কপি ও প্লেনের টিকিট

ফেসবুকে সুমির সেই ভিডিওটির সূত্র ধরে আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকায় গিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে গৃহকর্মীর ট্রেনিং শেষ করেন সুমি। পরে গত ৩০ মে ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স (এসভি) ৮০৫ যোগে সৌদি যান সুমি। সেখানে যাওয়ার পর সব সময় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার ওপর হয়ে যাওয়া নির্যাতনের ঘটনা বলতেন।

এ ব্যাপারে সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সৌদিতে যাওয়ার পরপরই তার ওপর নানাভাবে নির্যাতন চলে। আমার সঙ্গে মাঝে যোগাযোগ করতে দেয়নি। এরপর যখনই আমার সঙ্গে কথা হয় তখনি সুমি বাড়ি আসতে চায়। সে আর সৌদিতে থাকতে চায় না। আমি গত (১১ সেপ্টম্বর) পল্টন থানায় সেই এজেন্সির মালিক আক্তার হোসেনের নামে সাধারণ ডাইরি (জিডিও) করেছি। এছাড়া ন্যায় বিচারের জন্য জনশক্তি কর্মসংস্থান রপ্তানি ব্যুরোর মহাপরিচালকের দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে গিয়েও আমার স্ত্রীকে বিদেশ থেকে আনার এখনো কোনো রাস্তা পেলাম না। আমার স্ত্রী খুব কষ্টে আছে যখনি সে আমাকে ফোন দেয় কান্নাকাটি করে। দেশে ফিরতে চায়। তাই সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ আমার স্ত্রীকে যেনো তাড়াতাড়ি দেশে আনা হয়। নয়তো সে নির্যাতন সইতে না পেরে মরেই যাবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মেম্বার হোসেন আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ভিডিওটি দেখার পর সুমির স্বামীর সঙ্গে কথা বলি। সেই সঙ্গে তার স্বামীকে সব রকমের সাহায্য করছি। যেনো মেয়েটা দেশে ফিরতে পারে।

পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজিউর বাংলানিউজকে বলেন, নুরুল ইসলাম একটি জিডি করেছেন। পরবর্তীতে আমি তাকে মামলা দায়ের করতে বলি। মামলা দায়ের হলে সেই এজেন্সির বিরুদ্ধে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।