ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হচ্ছে শুক্রবার

তামিম মজিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৯
নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হচ্ছে শুক্রবার

ঢাকা: অনেক প্রতীক্ষার পর অবশেষে কার্যকর হতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শুক্রবার (১ নভেম্বর) থেকে নতুন আইনটি কার্যকর হবে। নতুন আইনে সব ধারায় আগের চেয়ে সাজা বাড়ানো হয়েছে। ফলে আইনটি কার্যকর হলে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আইনে আপাতত কোনো পরিবর্তন বা সংশোধন নেই। সংশোধনের বিষয়টি পরে বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে।

তবে প্রজ্ঞাপনে সংশোধনের সুযোগ রাখায় আইন কার্যকর নিয়ে সাধারণ মানুষ সন্দিহান রয়েছে। তারা বলছেন, এ সুযোগ রেখে আইন সংশোধন করার পথ রেখে দিলো সরকার।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আইনটি কার্যকর করতে শুক্রবার থেকে মাঠে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশাপাশি গাড়ির কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্য সব কাগজপত্র যাচাইয়ে পুলিশেরও তৎপরতা আগের চেয়ে বাড়ানো হবে।  

সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার জেরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারাদেশে নজিরবিহীন আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে সড়ক পরিবহন আইন পাস করা হয়। ওই বছরের ৮ অক্টোবর আইনের গেজেট জারি করা হলেও নানা কারণে আইনটি এতোদিন ঝুলে ছিল। অবশেষে এক বছর দুই মাস পর আইনটি কার্যকর হতে যাচ্ছে।  

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা ১ এর উপধারা (২) এ দেওয়া ক্ষমতাবলে সরকার ১ নভেম্বর থেকে আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ নির্ধারণ করল। ’ ফলে আইনটি সংশোধন বা পরিবর্তন ছাড়াই কার্যকর হতে যাচ্ছে।  

নতুন সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর শাস্তির বিধান রাখা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘দণ্ডবিধির ৩০৪-বি ধারায় যাই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত কোনো দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে’। একই সঙ্গে এটি জামিন অযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। আইনে পেশাদার-অপেশাদার চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে অনধিক ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান থাকছে।  

এদিকে, সংসদে সড়ক পরিবহন আইন পাস করার পরই পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো আইন পরিবর্তনের দাবিতে মাঠে নামে। ওই সময় তারা টানা ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটও পালন করে। প্রাণহানির দায়ে সাজা কমানোর জন্য সরকারকে নানাভাবে চাপ দিতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে আইনটি কার্যকরের বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে সরকার। আইনমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রী ওই কমিটির সদস্য।  

সূত্র জানায়, তিন মন্ত্রীর কমিটি মালিক-শ্রমিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে একাধিক বৈঠক করেছে। কমিটি তাদের সুপারিশ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে জমা দেন। এতে আইনের কিছু ধারায় পরিবর্তনের সুপারিশও আছে বলে সূত্র জানিয়েছে।  

সূত্র আরও জানায়, আইন কার্যকর করার আগে কোনো পরিবর্তন করলে সরকারকে সমালোচনায় পড়তে হবে—এ চিন্তা থেকে কোনো পরিবর্তন ছাড়াই আইনটি কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আগে আইনটি কার্যকর করা হবে। সংশোধনের বিষয়টি পরে বিবেচনায় নেওয়া হবে।  

নিরাপদ সড়ক চাই’র (নিসচা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বাংলানিউজকে বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইনে সাজা বা অনেক বিষয় আমাদের চাওয়া অনুযায়ী হয়নি। তারপরও যা আছে, তা অতীতের চেয়ে অনেক ভালো। এটি যাতে পরবর্তী সময়ে পরিবর্তন না হয়ে যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৯
টিএম/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।