ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আপন-পর দেখিনি, দুর্নীতির অভিযানকে আইওয়াশ বলে কীভাবে?

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৯
আপন-পর দেখিনি, দুর্নীতির অভিযানকে আইওয়াশ বলে কীভাবে? সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছবি: পিআইডি

ঢাকা: সরকারের চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ‘আইওয়াশ’ বিএনপির এমন অভিযোগের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি তো আপন পর কোনোকিছু দেখিনি। এটাকে তারা আইওয়াশ বলছে কীভাবে। আইওয়াশের ব্যবসাটা তো বিএনপি ভালো জানে।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান আইওয়াশ, মূল অপরাধীদের আড়াল করার জন্য এটা করা হচ্ছে। ’ বিএনপির এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

২৫ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন-ন্যাম সম্মেলনে অংশগ্রহণ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিয়ে বিএনপির বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখানে আইওয়াশ করতে যাবো কিসের জন্য। আমি তো আপন পর কোনোকিছু দেখিনি। হ্যাঁ, যারা অপরাধ জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সে যে-ই হোক তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি; তাকে ধরছি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এটাকে আইওয়াশ তারা বলে যাচ্ছে! ঠিক আছে দেখেন, অপেক্ষা করেন, আইওয়াশ না-কি সেটা দেখা যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধী অপরাধীই। তার দল নেই। অন্যকিছুও নেই। যে-ই অপরাধ করবে অবশ্যই আমরা ধরব।

কখন কে কোথায় ধরা পড়ে সেটা বলা যায় না:
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কখন কে কোথায় ধরা পড়ে সেটা বলা যায় না। মানুষ যখন কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়ায়, সে মনে করে আর কেউ জানবে না। কিন্তু ধরা কোনো না কোনোদিন পড়ে যেতে হয়। এটা হলো বাস্তবতা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে ক্যাসিনোকে নিয়ে আসা এটা বোধ হয় ঠিক না। ক্যাসিনো খেলার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সঙ্গে ক্রিকেট বোর্ডকে জড়ানো এটা ঠিক না। এখানে একজন ছিলেন। সে রকম তো আপনাদের সাংবাদিক মহলেও খোঁজ নেওয়া হলে অনেককে পাওয়া যাবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সময়ই বলে দেবে, আমরা তো ওরকম বেছে বেছে ক্রাইটেরিয়া ঠিক করে ধরছি না। যখন যেটা পাওয়া যাচ্ছে, সেটা ধরা হচ্ছে। ধরার পর পাওয়া যাচ্ছে কে কী? অভিযান চলছে তার মধ্যে দিয়ে বের হবে।
 
বিএনপিই দেশে দুর্নীতির দুয়ার খুলে দিয়েছিল:
বিএনপিই বাংলাদেশে দুর্নীতির দুয়ার খুলে দিয়েছিল মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারা (বিএনপি) কী বলবে? তারা তো দুর্নীতির খনি। এই দেশে দুর্নীতির যাত্রা শুরুই তো তাদের হাতে। দেশটাকে দুর্নীতিতে নিয়ে আসা, দুর্নীতিটাকে নীতিতে নিয়ে আসা- এটাতো বিএনপি শুরু করেছে। এগুলো বিএনপিরই করা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে, হত্যা ক্যু ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে একাধারে নিজেকে সেনাপ্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করেন জিয়া।

‘কুক্ষিগত করা ওই ক্ষমতাটাকে নিষ্কণ্টক করার জন্য বাংলাদেশে দুর্নীতির দুয়ার খুলে দেওয়া হয়েছিল। এটা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। আর তারই হাতে গড়া দল বিএনপি। ’

বিএনপির মুখে দুর্নীতি নিয়ে বড় বড় কথা মানায় না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দলের চেয়ারপারসন, তিনি দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে কারাগারে। আরেকজন দেখেন, তিনিও হচ্ছেন দুর্নীতিগ্রস্ত। সে দেশান্তর। তাদের মুখে আবার এত কথা আসে কোথা থেকে। কোন সাহসে এত কথা বলেন। এতিমের সামান্য টাকার লোভ সামলাতে পারেন না। এতিমের টাকা মেরে খেলেন। তাদের মুখে এত বড় বড় কথা!
 
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান এদেশে মানি লন্ডারিং থেকে শুরু করে, ঋণ খেলাপি সংস্কৃতি সবই তো শুরু করেছেন আমাদের মেধাবী ছাত্রদের হাতে এক হাতে অস্ত্র, আরেক হাতে অর্থ তুলে দিয়ে তাদের বিপথে নিয়ে যান। তাদের সন্ত্রাসী বানানো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানি এগুলোতে জিয়াউর রহমানই শুরু করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরবর্তীতে যিনি আসলেন, এরশাদ সাহেব, তিনি আরও এক ধাপ ওপরে। তারপর যখন খালেদা জিয়া আসলেন, তিনিতো দোকানই খুলে বসলেন।
 
‘একদিকে হাওয়া ভবন, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উন্নয়ন উইং; উন্নয়ন মানে হলো ঘুষ খাওয়ার উইং। অন্তত আমরা সরকারে আসার পর এ সমস্ত হয়নি। ’
 
বিএনপির খুচরো নেতারাও শাস্তি পাবেন:
খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার মতো বিএনপির অন্যান্য নেতারাও শাস্তি পাবেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা আসল দুর্নীতিবাজ, তাদের দু’জন তো শাস্তি পেয়েই গেছেন। খালেদা জিয়া ও তার ছেলে এই দু’জন তো আগেই শাস্তি পেয়ে গেছেন।

‘তাদের আরও কিছু খুচরা নেতা আছে, তাদেরও অনেক দুর্নীতি, অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন, বহু অপরাধের তারা অপরাধী; পর্যায়ক্রমে সবগুলো শাস্তি পাবে। সাজা তাদের পেতেই হবে। অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু শাস্তি পাবে তারা, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ’

ভয় শব্দটা ডিকশনারিতে নেই, ভয় পেলে অভিযানে নামতাম না:
ভয় শব্দটা নিজের ডিকশনারিতে নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ছোটবেলা থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম। আমার বাবাকে দেখেছি কীভাবে তিনি সাহসের সঙ্গে রাজনীতি করে এই বাংলাদেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। সুতরাং ভয়, এই শব্দটা আমার ডিকশনারিতে নেই।
 
ভয় পাওয়ার লোক আমি না। ভয় পেলে এই অভিযানে আমি নামতাম না:
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখন এখানে নেমেছি, তখন কে কী করে, কোন জায়গায়, কোন দলের, সেটা আমার কাছে বিবেচ্য বিষয় না। বরং আমি তো আগেই বলেছি, শুরু করলে তো ঘর থেকে করতে হয়। না হলে তো বলবেন যে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য আমরা করছি। তাতো না।

সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৯
এমইউএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।