ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দুই বাংলার মিলনমেলা, নাতিকে প্রথম দেখেও কোলে নেয়া হলো না 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৯
দুই বাংলার মিলনমেলা, নাতিকে প্রথম দেখেও কোলে নেয়া হলো না  দুই বাংলার মিলনমেলা। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: জীবনে প্রথমবার নাতির মুখ দেখলেও ছুঁয়ে আদর করে কোলে নিতে পারলেন না নানি কবি রানী। নানি-নাতির হাসি কান্নার মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ভারত বাংলাদেশের কাঁটাতারের বেড়া।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের নবীনগর সীমান্তে বসে দুই বাংলার মিলনমেলা।

ভারতের শিলিগুড়িতে থাকা নানি কবি রানী তার চার মাসের নাতি শুভকে এক নজর দেখতে ছুটে আসেন সীমান্তের এই মিলনমেলায়।

বাবা মায়ের কোলে চড়ে শুভ আসে কাঁটাতারের মিলনমেলায়। শুভকে উঁচু করে ধরে নানিকে দেখার সুযোগ করে দিলেন মা সীমা রানী। নানি দূর থেকে নাতিকে দেখলেন ঠিকই কিন্তু ছুঁয়ে আদর করে কোলে নিতে পারলেন না। মাঝে কাঁটাতারের বেড়ায় আটকে গেল নানি-নাতির ভালবাসা।  

শুভ'র মা সীমা রানী বাংলানিউজকে বলেন, ৫ বছর ধরে মাসি (খালা) কবি রানীর সঙ্গে দেখা হয় না। পাসপোর্ট করে যাওয়া আসাও টাকার প্রয়োজন। মাসির ইচ্ছা পূরণ করতে শুভকে দেখাতে মিলনমেলায় এসেছি। তারাও একনজর দেখতে শিলিগুড়ি থেকে সীমান্তে এসেছেন।  

স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর শ্যামাপূজা উপলক্ষে নবীনগর সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া এলাকায় দুই দেশের মিলনমেলা বসে। সুর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দুই দেশের সীমান্তে ভিড় জমে হাজারো মানুষের। সবাই বাংলা ভাষায় ভাববিনিময় করলেও মাঝে রয়েছে সীমান্তের বেড়া। প্রিয়জনদের জন্য রান্না করা খাবার বা পছন্দের জিনিসটিও উপহার হিসেবে কাঁটাতার ভেদ করে বিনিময় হচ্ছে। সব মিলিয়ে আনন্দ, বেদনা আর হাসি কান্নার মাঝে শেষ দুপুর পর্যন্ত জমে থাকে এ মিলনমেলা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলে আবারো একটি বছরের জন্য বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠে মেলার।  

দুই বাংলার মিলনমেলা।  ছবি: বাংলানিউজদীর্ঘ এক বছর পর মেয়ে ও নাতিদের মুখ একনজর দেখতে নবীনগর সীমান্তে সানিয়াজান নদীর হাঁটু পানি মাড়িয়ে  সপরিবারে ছুটে এসেছেন বৃদ্ধ খোকারাম বর্ম্মন (৭০)। তার মেয়ে কবিতা রানী বিয়ের পর থেকে ভারতে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করছেন। দুই ছেলের মা হলেও বাবার বাড়ির খাবার খাওয়া তার সাধ্যের বাইরে। তাই বাবার বাড়ির খাবারের স্বাদ নিতে এসেছেন মিলনমেলায়। বাবা খোকারাম বর্ম্মন মেয়ে ও নাতিদের পছন্দের সব খাবার রান্না করে নিয়ে এসেছেন। কাঁটাতার ভেদ করে ওপারে মেয়ের হাতে পৌঁছে দিলেন পছন্দের খাবার। কিন্তু তাকে ছুঁয়ে আদর করা হয়নি বৃদ্ধ বাবা খোকারামের। মেয়ে কবিতা রানীও বৃদ্ধ বাবা মায়ের জন্য রান্না করা খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। কাঁটাতারের দুই প্রান্তের দুই পরিবারের আবেগঘন ভাববিনিময় যেন, জীবনের শেষ দেখা এটি।

খোকারাম বাংলানিউজকে বলেন, গরিব মানুষ পাসপোর্ট করে মেয়ে ও নাতিদের দেখতে ভারত যেতে পারি না। তাই বছরের এই দিনের অপেক্ষায় থাকি। গত বছর দেখেছি আর আজ দেখলাম। আদর করতে না পারি কষ্ট নেই। দূর থেকে দেখেই শান্তি। এমন আয়োজন করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

বাউরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ দুলাল বসুনিয়া বাংলানিউজকে বলেন, শ্যামাপূজা উপলক্ষে প্রতিবছর এই সীমান্তে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উভয় দেশের মানুষের মিলনমেলা বসে। তারা তাদের আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয়জনদের দেখতে এখানে ছুটে আসেন। উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মৌখিক আলোচনা করে এ মিলনমেলার আয়োজন করেন স্থানীয়রা।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।