ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সিরাজগঞ্জে চিকিৎসক-রোগীর পাল্টাপাল্টি মারধরের অভিযোগ  

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৯
সিরাজগঞ্জে চিকিৎসক-রোগীর পাল্টাপাল্টি মারধরের অভিযোগ  

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মো. ইউসুফ আলী শেখের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এক নারী রোগীকে মারধর ও দুর্ব্যবহারের পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন ভাইস চেয়ারম্যান। 

সোমবার (২১ অক্টোবর) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। বেলকুচি থানার সহকারি পুলিশ সুপার (বেলকুচি ও এনায়েতপুরর সার্কেল) রেজা সরোয়ার জানান, ভুক্তভোগী চিকিৎসক শাকিল হামজা মারধরের বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন।

আমি হাসপাতালে যাবো। তিনি অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

অন্যদিকে বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত ওই চিকিৎসক আমার কাছে কোনো অভিযোগ দেননি। বরং এক মহিলা ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মারধর ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন।  

আহত শাকিল হামজা বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে মুঠোফোনে তিনি বাংলানিউজকে জানান, সোমবার ভোর থেকে আমি রোগী দেখছিলাম। আমার কাছে অন্তত ৬০-৭০ জন রোগীর সিরিয়াল জমা ছিল। এরই মাঝে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পুরাতন এক মহিলা রোগী টিকিট ছাড়াই রুমে ঢুকে পড়েন। রোগীর চাপ থাকায় আমি তাকে পরদিন আসার অনুরোধ করি। তারা চলে যাওয়ার ৫-৭ মিনিট পর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ শেখ কক্ষে এসে কোনো কথা না বলেই আমাকে মারতে শুরু করেন। তিনি আমার গলা টিপে ধরে টানতে টানতে বাইরে জরুরি বিভাগে নিয়ে যান, এবং চারটি লাথি মারেন। শেষমেশ কোনোমতে আমি দৌড়ে জরুরি বিভাগের বাথরুমে ঢুকে দরজা আটকে দেই। সেখানে দেড় ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর ওষুধ কোম্পানির একটি গাড়িতে করে পালিয়ে আসি। এ ব্যাপারে বিকেলে থানায় অভিযোগ করতে গেলে ওসি বলেন, আপনার সম্পর্কে আগেই নেগেটিভ কথা শুনেছি। অভিযোগ নেওয়ার কথা বললেও নানা টালবাহানায় আমার অভিযোগ নেয়নি থানাপুলিশ।  

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাসলিমা জান্নাত জানান, ঘটনার সময় আমি আমার কক্ষে রোগী দেখছিলাম। পরে জানতে পেরেছি চিকিৎসক শাকিলের সঙ্গে কোনো এক মহিলা রোগীর কথা কাটাকাটি হয়েছে। একপর্যায়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে এসে তার গায়ে হাত তোলেন, এবং তাকে এক ঘণ্টা বাথরুমে আটকে রাখেন। কোনো জনপ্রতিনিধিই একজন সরকারি চিকিৎসকের গায়ে হাত তুলতে পারেন না। চিকিৎসক কোনো ভুল করলে তিনি আমার কাছে অভিযোগ করতে পারতেন।  

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ডক্টরস ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ডা. নিরুপণ দাস বলেন, আমাদের চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ও স্থানীয় নেতাদের জানানো হয়েছে। উপযুক্ত বিচার না পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

সিভিল সার্জন ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মণ্ডলকে জানানো হয়েছে। তিনি আগামী বৃহস্পতিবার এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।  

এদিকে অভিযুক্ত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী মুঠোফোনে জানান, চিকিৎসক শাকিল হামজা একজন মহিলা রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের করেছেন। আমি সে সময় হাসপাতালেই ছিলাম। ওই রোগী আমাকে বিষয়টি জানালে আমি চিকিৎসকের রুমে যাই। দুর্ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে তার সঙ্গে আমার তর্কাতর্কি হয়। মারপিটের কোনো ঘটনা ঘটেনি।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, ২২ অক্টোবর, ২০১৯
এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।