ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

টাঙ্গাইলে শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে ইয়াবা, মূলহোতা নাগালের বাইরে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৯
টাঙ্গাইলে শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে ইয়াবা, মূলহোতা নাগালের বাইরে টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইল: সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত টাঙ্গাইলের শাড়ি।  এই শাড়ির ব্যবসার আড়ালেই চলছে রমরমা ইয়াবা ব্যবসা। দীর্ঘদিন ধরে শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে ইয়াবা ব্যবসা চললেও মূলহোতা নাগালের বাইরে রয়ে গেছে।

গত ৮ অক্টোবর ঢাকা রেলওয়ে থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া মিঠু সিকদারের (৪৫) স্বীকারোক্তিতে বের হয়ে আসে ইয়াবা ব্যবসার এ তথ্য। গ্রেপ্তারকৃত মিঠু টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার সরাতৈল সিকদার বাড়ির গফুর সিকদারের ছেলে।

 

ইয়াবা ব্যবসার মূলহোতা একই গ্রামের সাহাবুদ্দিনের ছেলে মো. জাকির (৩০) এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। দীর্ঘদিন ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে টাঙ্গাইলের শাড়ির ব্যবসার আড়ালে মরণ নেশা ইয়াবার ব্যবসা করে এখন তিনি কোটিপতি।

সরেজমিন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার সরাতৈল গ্রামে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া মিঠু আগে অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করতেন। পরে একই এলাকার জাকিরের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। জাকিরের কাপড়ের ব্যবসায় সহযোগিতা করতে থাকেন তিনি।  

কিছুদিনের মধ্যেই তার আচরণ এবং আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন দেখা যায়। এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে জাকির তাকে ভালো বেতন দেয় বলে স্থানীয়দের জানায়। পুলিশের হাতে এক হাজার ৫০০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর স্থানীয়রা জানতে পারেন তার ইয়াবা ব্যবসার কথা। মিঠু গ্রেফতার হওয়ার দিন থেকেই জাকির পলাতক রয়েছে বলেও জানায় স্থানীয়রা।  

গ্রেপ্তারকৃত মিঠু পুলিশকে জানায়, কাপড়ের ভেতর ইয়াবা বহন করায় কেউ সন্দেহ করতো না। তাই দীর্ঘদিন ধরেই জাকির কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে এসে টাঙ্গাইলসহ ঢাকায় সরবরাহ করতো। আর সে মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা সরবরাহ করতে সহযোগিতা করতো। এর ফলে সে মোটা অংকের টাকা পেতো জাকিরের কাছ থেকে। সে ছাড়াও জাকিরের আরও বেশ কয়েকজন সহযোগী রয়েছে বলেও জানায় মিঠু।  

আব্দুল মান্নান নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, জাকিরের বাবা সাহাবুদ্দিন প্রথমে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। দীর্ঘদিন ব্যবসা করার পর ছেলে জাকিরও তার বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করতে থাকে। এক পর্যায়ে জাকির নিজেদের উৎপাদিত শাড়ি নিয়ে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে শুরু করে। কিছুদিন যেতে না যেতেই জাকিরের আর্থীক অবস্থা অনেকটা উন্নত হয়। সবার ধারণা জাকির কাপড়ের ব্যবসা করে ভালোই লাভ করছে। সম্প্রতি তার সহযোগী গ্রেফতার হওয়ার পর বেড়িয়ে আসে কাপড়ের ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা ব্যবসার বিষয়টি।  

পুলিশ জানায়, গত ৮ অক্টোবর পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কমলাপুর রেল স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে মিঠু দ্রুত পালানোর চেষ্টা করে। এসময় তাকে আটক করা হয়। পরে তার সঙ্গে থাকা কাপড়ের বান্ডিল তল্লাশি করে কাপড়ের ভাঁজে বিশেষ কায়দায় রাখা এক হাজার ৫০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।  

জিজ্ঞাসাবাদে মিঠু পুলিশকে জানায়, এই কাপড়ের বান্ডিল তার গ্রামের মো. জাকিরের। জাকির চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবাগুলো নিয়ে এসেছে। এখন সে তার কাছ থেকে নিয়ে ঢাকায় সরবরাহ করার জন্য ঢাকায় এসেছে। এ ঘটনায় ঢাকার রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল মুন্নাফ বাদি হয়ে মিঠু ও জাকিরকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন।

জাকিরের বাবা সাহাবুদ্দিন এ বিষয়ে জানান,  তার ছেলের বিরুদ্ধে কেউ ষড়যন্ত্র করছে। তার ছেলে দীর্ঘদিন ধরেই কাপড়ের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তবে তার ছেলে যদি সত্যিই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে যেনো ছেলের উপযুক্ত শাস্তি হয়।

দেলদুয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল হক ভুইয়া বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি রেলওয়ে থানা পুলিশের মাধ্যমে অবগত হয়ে একটি অনুসন্ধান দলের মাধ্যমে জাকিরের খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে জাকির পলাতক রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৯
আরকেআর/ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad