ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মহিলা এমপি বুবলীর ‘প্রক্সি পরীক্ষাকাণ্ডে’ তদন্ত কমিটি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৯
মহিলা এমপি বুবলীর ‘প্রক্সি পরীক্ষাকাণ্ডে’ তদন্ত কমিটি

নরসিংদী: ‘প্রতারণা এবং জালিয়াতি’র আশ্রয় নিয়ে নরসিংদীতে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি তামান্না নুসরাত বুবলীর প্রক্সি পরীক্ষাকাণ্ডের ঘটনা অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার (১৯ অক্টোবর) কলেজের পক্ষ থেকে নরসিংদী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মাহমুদ উল্লাহ কাজলকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

জানা যায়, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ও প্রয়াত পৌর মেয়র লোকমান হোসেনর স্ত্রী তামান্না নুসরাত বুবলী নিজে পরীক্ষা না দিলেও পর পর ৮টি পরীক্ষায় তার পক্ষে প্রক্সি পরীক্ষার্থীরা অংশ নেয়। বিএ পরীক্ষার শেষ পরীক্ষা দিতে গিয়ে শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) হলে হাতে নাতে ধরা পড়েছেন এক শিক্ষার্থী।

তাই তাকে পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

নরসিংদী ও গাজীপুর আসনের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি তামান্না নুসরাত বুবলী। তিনি নরসিংদী পৌরসভার প্রয়াত মেয়র ও সাবেক শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেনের স্ত্রী। তার দেবর কামরুজ্জামান কামরুল নরসিংদী পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি। অপর দেবর শামীম নেওয়াজ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। পুরো পরিবারই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বুবলী এইচএসসি পাস। উচ্চ শিক্ষার সার্টিফিকেট লাভের আশায় তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি হন। এ পর্যন্ত চারটি সেমিস্টারের ১৩টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অভিযোগ রয়েছে, ১৩টি পরীক্ষার স্ব-শরীরে একটিতেও তিনি অংশ নেননি। তার পক্ষে একেক সময় একেক জন অংশ নিয়েছে। আর এমপির প্রক্সি প্রার্থীকে সুবিধা দিতে পরীক্ষা কেন্দ্রসহ  হল পাহারায় থাকতেন তার লোকজন। তাই ভয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেউই মুখ খুলতে পারেন না। সর্বশেষ শুক্রবার পরীক্ষা দিতে এসে হাতে নাতে ধরা পড়েছেন।

ওইদিন প্রক্সি পরীক্ষার্থী নিজেকে তামান্না নুসরাত বুবলী হিসেবে দাবি করেন। তবে ছবি সম্বলিত প্রবেশপত্র দেখাতে পারেনি। এমপি তামান্নার পরীক্ষা কীভাবে দিচ্ছেন তা জানতে চাইলে কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেননি প্রক্সি পরীক্ষার্থী। প্রক্সি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার বিধান থাকলেও এর কিছুই করেননি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। এমপির লোকজনের সহায়তায় হল থেকে বেরিয়ে যান তিনি।  

নরসিংদী সরকারি কলেজ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর শফিকুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার্থীর ছবি সম্বলিত প্রবেশপত্র ছিলনা। প্রবেশপত্র হারিয়ে গেছে বলে দাবি। তবে থানার জিডি কপি নিয়ে পরীক্ষা হলে পরীক্ষায় অংশ নিতে আসছে। তাই আমরা চিনতে পারিনি। বিষয়টি জানার পর প্রক্সি পরীক্ষার্থীকে আটক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দায়িত্বে ছিল একজন পুলিশ সদস্য। তাই কথা বলার ফাঁকে সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তবে পরে অনেক পুলিশ সদস্যই কলেজে এসেছেন।

এসব বিষয়ে কথা বলতে নরসিংদী সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি তামন্না নুতরাত বুবলীকে ফোন করলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি ঢাকায় এমপি হোস্টেলে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার এক ঘনিষ্টজন।

নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান আকন্দ বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া তামান্না নুসরাত বুবলীর সব পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। তাকে পরীক্ষা থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে জালিয়াতির বিষয়টি অনুসন্ধানে কলেজের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।