ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সমাজকে বদলানোর অঙ্গীকার শুভ সংঘের সদস্যদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৯
সমাজকে বদলানোর অঙ্গীকার শুভ সংঘের সদস্যদের

ঢাকা: সমাজকে বদলাতে হলে সবার আগে নিজেকে বদলাতে হবে। শুভ কাজ করতে হলে অর্থের চেয়েও বেশি প্রয়োজন নিজের মানসিকতা তথা দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো। নিজের ইচ্ছেশক্তিই সমাজ বদলানোর সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। সেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই সমাজ বদলানোর অঙ্গীকার করেছেন স্বপ্নবাজ একদল তরুণ-তরুণী। 

শনিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড (ইডব্লিউএমজিএল) মিলনায়তনে পাঠকপ্রিয় দৈনিক কালের কণ্ঠের পাঠক সংগঠন শুভ সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির মতবিনিময় সভায় এর সদস্যরা এ অঙ্গীকার করেন।  

দৈনিক কালের কণ্ঠ সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন মতবিনিময় সভায় বলেন, সবার আগে প্রয়োজন একজন ভালো মানুষ হওয়া।

তারপর ভালো ছাত্র। যদি ভালো মানুষ হয়ে গড়ে ওঠা না যায়, ভালো ছাত্র হওয়া অর্থহীন। একজন হাতি যেমন প্রাণী হয়ে জন্মায়, তেমনি একজন মানুষও প্রাণী হিসেবে জন্মায়। সে ধীরে ধীরে বড় হয়, তখন কেউ মনুষ্যত্ববোধ নিয়ে গড়ে ওঠে, আবার কেউ পশুত্ব শিখে বেড়ে ওঠে। সুতরাং মানুষের আকৃতি হলেই মানুষ হওয়া যায় না, তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হয়।  

বুয়েটে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ ও সুনামগঞ্জে শিশু তুহিন হত্যা প্রসঙ্গে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আবরার হত্যা বিবেকহীন কাজ। তারা যত বড় বিশ্ববিদ্যালয়েরই মেধাবী ছাত্র হোক না কেন, তারা ভালো মানুষ হতে পারেনি। তেমনি একজন পিতা যখন প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজের সন্তানকে হত্যা করে, সেও মানুষ নয়, আসলে সে পশু। এসব মানুষ সমগ্র জাতির জন্য অভিশাপ।  

তিনি বলেন, দুর্নীতি-অন্যায়-অবিচার সবকিছুর বিরুদ্ধে তরুণ-তরুণীদের জেগে উঠতে হবে। কারণ এ তারুণ্যই সমাজকে বদলে দিচ্ছে। আর এ কাজের অগ্রভাগে রয়েছেন শুভ সংঘের কর্মীরা। আমি শুভ সংঘ করেছি স্বপ্ন নিয়ে। সারাজীবন লেখালেখি করে যা পেয়েছি, তারচেয়েও বেশি পেয়েছি শুভ সংঘ করে। কারণ এই তরুণ প্রজন্ম তথা শুভ সংঘের কর্মীরা সমাজ উন্নয়নে কাজ করছে। শুভ সংঘ অসহায় মানুষের পাশে আরও বেশি দাঁড়াতে চায়। সমাজ বদলায় গুটিকয়েক মানুষ। তাই নিজেকে বদলাতে হবে। মানসিকতাকে বদলাতে হবে। তাহলে বদলে যাবে সম্ভাবনাময় এ দেশ।  শুভ সংঘ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারীদের একাংশ।  ছবি: জিএম মুজিবুরকালের কণ্ঠ সম্পাদক বলেন, শুভ কাজে তোমাদের পাশে রয়েছে দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান আমাকে বলেছেন, শুভ সংঘের মাধ্যমে আপনি ভালো মানুষ তৈরি করুন, বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের জন্য সবই করবে।  

শুভ সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদেকুল ইসলাম বলেন, একটা সমাজকে পরিবর্তন করতে বেশি মানুষ লাগে না। শুভ সংঘ সেই অনুপ্রেরণা দিচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে। শুভ সংঘ অন্য এক জায়গায় পৌঁছে গেছে। এর সদস্যরা নৈতিকতা-বিবর্জিত কাজে জড়িত নয়। বরং তারা সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার।  
সাধারণ সম্পাদক শামীম আল মামুন বলেন, শুভ সংঘ শুধু পাঠক সংগঠন নয়। কীভাবে একটা সুন্দর দেশ গঠন করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছে। যাদের চিন্তা ভাবনায় দেশ, শুভ সংঘ তাদের নিজেদের গঠন করার প্লাটফর্ম।  

শুভ সংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন শুভ সংঘ গণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদিয়া আফরিন মৌ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আতিক, ধামরাই উপজেলা শাখার সভাপতি মেহেরীন মুশফিকা, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি শাখার সুলতানা আক্তার রিংকি, তেতুলিয়া উপজেলা শাখার রবিউল ইসলাম, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মৃন্ময় প্রমুখ।  

কেন্দ্রীয় কমিটির এ সভায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ২০টি শাখার সদস্যরা অংশ নেন। শাখাগুলো হলো-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, আশা বিশ্ববিদ্যালয়, ধামরাই উপজেলা, সোনারগাঁও উপজেলা, উত্তরা, ত্রিশাল উপজেলা, ফুলবাড়িয়া উপজেলা, গাজীপুর উপজেলা, শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজ ও মিরপুর শাখা।  

সভায় জানানো হয়, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় শুভ সংঘ স্কুল চালু হবে। যেখানে বিনামূল্যে পড়াশোনা করতে পারবেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। শিক্ষকরাও বিনা পারিশ্রমিকে পাঠদান করবেন।  

সভায় শুভ সংঘের সামাজিক কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন সংগঠনের সদস্যরা। তারা জানান, ক্যান্সার আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানো, মাদকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, পড়ালেখায় সাহায্য, এতিম মেয়ের বিয়ে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন, শীতার্তদের বস্ত্র বিতরণ, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা উপকরণ সহায়তা, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, বৃক্ষরোপণ, ক্লিন ক্যাম্পাস, বিনামূল্যে ডেন্টাল চেকআপ ও সুস্বাস্থ্যময় বাংলাদেশসহ নানা সামাজিক কাজ করছেন শুভ সংঘের কর্মীরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৯
টিএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।